প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৪৩ পিএম
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩ ২১:৪৭ পিএম
সাংবাদিকদের সাথে নারীপক্ষের মতবিনিময় সভা। ছবি : প্রবা
নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক সামিয়া আফরীন বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যসেবাদানকারীদের প্রমিক্ষণের অভাব ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে গর্ভপাতে সন্তান ধারণে সক্ষম নারীদের জীবন হুমকির মুখে পড়ছে। এতে নারীর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশ। তাই ট্যাবু ভেঙে এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে সেইসঙ্গে হাসপাতালে পর্যাপ্ত সেবা প্রদান করতে হবে। তবে এজন্য প্রয়োজন আইন পরিবর্তনের।’
সোমবার (৯ জানুয়ারি) ‘নিরাপদ মাসিক নিয়মিতকরণ অধিকারের দাবিতে দক্ষিণ এশিয়ায় এশিয়া মহাদেশে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন’ করা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি জানান, নারীর গর্ভপাত বিষয়ে ১৮৬০ সালের প্যানাল কোডে বলা আছে শুধুমাত্র নারীর স্বাস্থ্য বা প্রাণ সংশয়ের কারণ থাকলে ও ধর্ষণের কারণে কোনো নারী গর্ভবতী হলে সে নারী গর্ভপাত করাতে পারবেন। এছাড়া আর কোনো আইন নেই। ফলে এর বাইরে যারা গর্ভপাত করাতে চান তাদের অনেকেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কাছে গর্ভপাত না করিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেছে নিচ্ছেন অন্য কোনো উপায়। এতে ইনফেকশন, ক্যান্সারসহ মৃত্যু ঝুঁকিতে পরছেন নারীরা।
গত বছর নারীপক্ষের করা এক জরিপে জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রম, খুলনা, সিলেট, বরিশালের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে মোট ৪৬ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ২৮ জন এমআর ও এমআরএম সেবা না দেয়ার কারণ হিসেবে জানান, এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নেই। বাকি ১৮ জনই ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি ও ধর্মীয় বিধিনিষেধের কথা বলেন। শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত ভালো না লাগা থেকে তারা একজন নারীকে এ সেবা দিচ্ছেন না।
এমআর ও এমআরএম পদ্ধতিতে ওষুধ বা সিরিঞ্জের মাধ্যমে নারীর গর্ভপাত করানো হয়। এটি হচ্ছে নারীকেন্দ্রিক সেবা। তবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ভালো হাসপাতালে এমআর না করা হলে জরায়ু বা এর আশপাশে সংক্রমণ হতে পারে। এতে পেলভিক ইনফ্লামাটেরি ডিজিজ বা জরায়ু ও এর আশপাশে প্রদাহ হয়। পরে এর কারণে ফেলোপিয়ান টিউব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। প্রায়ই তলপেটে ব্যথা, মাসিকের সময় ব্যথা হতে পারে। অনভিজ্ঞ, অপটু হাতে যেখানে-সেখানে এমআর করার কারণে জরায়ুতে ছিদ্র হতে পারে, জরায়ুর এন্ডোমেট্রিয়ামের দুই আস্তর একসঙ্গে লেগে যেতে পারে, এমনকি জরায়ুমুখ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যার জন্য পরে আর কখনোই সন্তান ধারণ সম্ভব না-ও হতে পারে।
নারীপক্ষের সদস্য সাবিনা ইয়াসমিন জানান, অনেকে ওষুধ খেয়ে এমআর করতে চান। এতে অসহনীয় ব্যথা ও রক্তপাত নিয়ে কখনো কখনো হাসপাতালে জরুরি সেবা নিতে হয়। গ্রামগঞ্জে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে বা নানা রকমের কবিরাজি ওষুধ খেয়ে এমআরের চেষ্টা করা হয়। এতে সংক্রমণসহ মায়ের জীবনে প্রাণহানিও ঘটে কখনো কখনো। এছাড়া ঠিকমতো এ সেবা না নিলে এদিক সেদিক হওয়ার কারণে নারীর অনিয়মিত মাসিক হয়। থেকে থেকে রক্তক্ষরণ নারীর শরীরকে দুর্বল করে। পরবর্তীতে আবার পরীক্ষা করে গর্ভপাত করানোর প্রয়োজন হয়। কেউ কেউ এ ধকল সহ্য করতে পারেন না।
তিনি আরও জানান, প্রতিটা ওষুধ তৈরির পর সরবরাহকারীদের একটি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে একজনের ২১ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয় না। তাই নারীরা ওষুধ কিনতে আসেল তাদের পর্যাপ্ত পরামর্শ দিতে পারেন না সরাবারাহকারী। এতে এ ওষুধ খাওয়ার নিয়ম-কানুন সম্পর্কে জানতে পারে না সেবাগ্রহণকারীরা।
এক্ষেত্রে যৌনকর্মীদের অবস্থা আরও শোচনীয় বলেও জানান সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন,‘তাদের ভালো দৃষ্টিতে দেখা হয় না। এছাড়া তাদের মধ্যে অধিকাংশই এ সেবা সম্পর্কেই জানেন না। অনেকেই আবার লোকলজ্জার কথা জানান। তাই গোপন রেখে অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করার চেষ্টা করে।’
নারীপক্ষের সদস্য শাকিল ইসলামসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।