প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ১৮:২৩ পিএম
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ২১:০১ পিএম
ঢাকায় নারীপক্ষ কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনা সভায় নারীপক্ষ সদস্যসহ সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরা। ছবি : প্রবা
যুদ্ধসন্তানরা অনাহূত। তাদের জন্ম-অস্তিত্ব অপ্রত্যাশিত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মায়েদের পরিত্যাগ করেছে পরিবার ও সমাজ। কিছু যুদ্ধসন্তান বিদেশে থাকলেও বেশির ভাগই নিগৃহীত ও নিপীড়ত জীবনযাপনে বাধ্য। রাষ্ট্র তাদের মর্যাদা দেয়নি। তারা ও তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন সম্মান নিয়ে এ দেশে বেঁচে থাকেত পারে সেই পদক্ষেপ নিতে হবে রাষ্ট্রকে। তাদের হবে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) নারীপক্ষ কার্যালয়ের নাসরীন হক সভাকক্ষে এক সভায় নারীপক্ষ এই দাবি জানায়।
সভায় সহযেগী সংগঠন হিসেবে ছিল ব্লাস্ট, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, নারীবাদ প্রবর্তনা, দুর্বার নেটওয়ার্ক ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
সভায় লিখিত বক্তব্যে নারীপক্ষের সমন্বয়কারী নূরে মাকসুরাত সেঁজুতি বলেন, তারা যুদ্ধশিশুদের নিগ্রহ মোচনে একটি পদক্ষেপ নিতে চান। সেক্ষেত্রে দেশের আইন সংশোধন করা জরুরি। এছাড়া তাদের নিজেদের জন্ম ও জীবন ইতিহাস খোঁজার একটি নিরাপদ স্থান তৈরি করা প্রয়োজন। তাহলে মুক্তিযুদ্ধের একটি অজানা অধ্যায় উন্মোচিত হবে।
গত বছর যুদ্ধিশশুেদর নিয়ে গবেষণা শুরু করে নারীপক্ষ। যুদ্ধিশশুদের নিপীড়নের কথা উল্লখ করে সেঁজুতি বলেন, “যুদ্ধশিশুরা সমাজের সবার সঙ্গে বসে খেতে পারে না। অনেকেই জানে না তাদের মা কে। একজন তার মাকে না পেয়ে আমাকে বলেছিল, ‘আমি জানি না আমার মা কে। তাই সকল বীরঙ্গণাই আমার মা।’ অনেকেই তাদের প্রতি লাঞ্ছনার কথা বলেন। তাদের বিয়েবাড়িতে কুকুরের পাশে খেতে দেয়া হতো। বাবার পরিচয় না থাকায় বিভিন্ন সময় সংকেট পড়তে হয়েছে তাদের।”
নারীপক্ষের সদস্য হাবিবুননেসা বলেন, ‘বীরঙ্গনা উপাধি দেওয়া হলেও তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়নি। এখনো বাবার নাম প্রয়োজন হয় সন্তানেক কোথাও ভর্তি করাতে। স্বাধীনতার এত বছর পরও বীরাঙ্গনা বোনেরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উপেক্ষিত, অনুপস্থিত। তাদের অস্তিত্বকে অন্ধকারে রেখে দেওয়া হয়েছে। তাদের ওপর হওয়া নির্যাতনের ঘটনা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সামান্য উল্লেখ ছাড়া সেভাবে স্থান পায়নি। বাস্তব জীবনেও তারা পরিবার ও সমাজে আশ্রয় পায়নি।’
হাবিবুননেসা অভিভাকত্ব আইন ও নাগিরকত্ব আইনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ আইনগুলো মায়েদর পক্ষে না। জারজ সন্তান বলা হয়, যার ইংরেজি বাস্টার্ড। এমন একটা শব্দ থাকাই উচিত না। শুধুমাত্র যুদ্ধিশশু না, যৌনপল্লিতে জন্ম নিচ্ছে যারা তারা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নারী কখনো তার সন্তানের পরিচয় দিতে পারে না বাংলাদেশি হিসেবে। নারীর অভিভাকত্ব পেতে হলে কোর্টে যেতে হবে। এখানে পুরুষ অভিভাবক হলেও নারী জিম্মাদার হিসেবে কাজ করে। একজন মায়ের জন্য ‘জিম্মাদার’ শব্দটি সত্যিই অপমানের। বিবাহবিচ্ছেদের পর আদালত অভিভাবকত্ব দেন না, দেন জিম্মাদারি। বাংলাদেশ অভিভাবক এবং প্রতিপাল্য আইন ১৮৯০-এর ১৭ [ক] ধারা অনুযায়ী নাবালক সন্তানের জিম্মাদার করা হয়েছে মাকে আর বাবাকে অভিভাবক। ছেলেসন্তান সাত বছর পর্যন্ত আর মেয়েসন্তান বয়ঃসন্ধি পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকবে।
নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য শিরীন হক বলেন, যুদ্ধিশশুদের বাবার নাম মিথ্যা দেওয়া হয় অথবা বলা হয় মৃত। সেক্ষেত্রে মৃত বাবার নাম লিখতে হয়। যদি মায়ের নামে সন্তানের পরিচয় হয় তখন এ জটিলতা থাকবে না। মিথ্যা দিয়ে রাষ্ট্র চলতে পারে না।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন নারীপক্ষের সদস্য আলী হোসেন, সীমাদাস সীমু, তামান্না খান রাশেদা হোসেন, তৃশা পাল, রিনা রায়, বাংলাদেশ দুর্বার নেটওয়ার্কের সভাপতি মাহমুদা খাতুন, নারীবাদ প্রবর্তনার সাধারণ সম্পাদক সাইদা আক্তার।