প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫ ১৬:০৫ পিএম
প্রবা ফটো
ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে কর্মজীবী মানুষ। প্রিয়জনের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন শেষে স্বস্তিতে ফিরছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশপথ ও বাস-রেল টার্মিনালে দেখা গেছে ফিরতি মানুষের ভিড়। তবে এবার সড়ক, রেল ও নৌপথে ভোগান্তির চিত্র ছিল না বললেই চলে। যানজট বা বিলম্ব ছাড়াই অনেকেই কম সময়ে পৌঁছেছেন গন্তব্যে, যা তাদের যাত্রাকে করেছে আরও স্বস্তিদায়ক ও আনন্দময়। তবে কিছু কিছু জায়গায় লঞ্চ ও বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রাজধানীর প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী ঘুরে দেখা গেছে, এদিন সবচেয়ে বেশি মানুষ ঢাকায় ফিরছে। রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চাঁদপুর, বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীবোঝাই বাস ঢাকায় প্রবেশ করছে। অনেকে সিএনজি, রাইডশেয়ারিং কিংবা গণপরিবহন ব্যবহার করে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছেছেন। যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ এলাকায় দেখা গেছে, মানুষ লাগেজ, ব্যাগ ও কোরবানির মাংস বহন করে ফিরছে।
গাবতলী বাস টার্মিনালের এক পরিবহন কর্মী জানান, ঈদের ছুটির পর ঢাকায় যাত্রীর চাপ থাকলেও রাস্তায় তেমন ভিড় বা বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। একই চিত্র ছিল সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডেও। রংপুর থেকে আসা হালিমা হক জানান, সাত ঘণ্টায় ঢাকায় এসে পৌঁছেছি। রাস্তায় কোনো সমস্যা হয়নি। বগুড়া থেকে আসা আরেক যাত্রী আসাদুল ইসলামও জানিয়েছেন, দ্রুত ও নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও দেখা গেছে, দক্ষিণাঞ্চল থেকে লঞ্চে করে ঢাকায় ফেরা মানুষের ভিড়। বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে যাত্রীরা সদরঘাট হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করছেন। ট্রেনেও যাত্রীর চাপ রয়েছে। কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, ঈদের পর ট্রেনযাত্রাও স্বস্তিদায়ক হয়েছে। এবার ট্রেনে তেমন কোনো সময়সূচি বিঘ্নিত হয়নি।
এদিকে ঈদ কেন্দ্র করে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে। যাত্রীদের অভিযোগ, আগে ঢাকা-বরিশাল রুটের ডেক ভাড়া ৩০০ টাকা থাকলেও তা বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৪০০ টাকা। এ ছাড়া সিঙ্গেল কেবিন আগে ছিল ১ হাজার টাকা, সেটা এখন নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। আর ডাবল কেবিন ছিল ২ হাজার টাকা, সেটা এখন নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ৪০০ টাকা। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চগুলোতে ভাড়া বেড়েছে প্রকারভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকা। ফলে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। বিআইডব্লিউটিএ বরিশালের উপপরিচালক সেলিম রেজা জানান, ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চ ভাড়া সরকারি রেট অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে। আগে ব্যবসায়ের জন্য লঞ্চ মালিকরা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নিতেন। এখন সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছেন। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে যদি লঞ্চ ভাড়া বেশি নেয়, সেক্ষেত্রে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ছাড়া কুড়িগ্রামের উলিপুরে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের যৌথ অভিযানে দুই বাস কাউন্টার মালিককে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।
গত বুধবার রাতে উলিপুর কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা। অভিযানে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে তিশা পরিবহনের কাউন্টার মালিককে ৫ হাজার ও মৌসুমি এন্টারপ্রাইজ কাউন্টার মালিককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা বলেন, বাস কাউন্টারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যেসব কাউন্টারে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, সেখানে মোবাইল কোর্ট আইন অনুযায়ী অর্থদণ্ড করা হয়। যাত্রীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত এবং হয়রানি কমানোর জন্য এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।