তানভীর হাসান
প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫ ১৬:০১ পিএম
পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ১০ দিনের সরকারি ছুটিতে রাজধানীতে বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ সময় মহানগরে অন্তত ১৫ হাজার পুলিশ তৎপর থাকবে। রাস্তায় গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্টের পাশাপাশি শপিংমল ও আবাসিক এলাকায় টহল জোরদার করা হবে। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বিভিন্ন সড়কে হঠাৎই বসবে যৌথ বাহিনীর চেকপোস্টও।
তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনে শঙ্কার জায়গা হচ্ছে, বাসা-বাড়ির নিরাপত্তা ও পেশাদার ছিনতাইকারীদের নিয়ে। কারণ ওই সময়ে রাস্তায় জনসাধারণের চলাচল কমে যাওয়ায় অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতে এ বিষয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রয়েছে বাড়তি সতর্কতা। মহল্লাভিত্তিক টহল জোরদারের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশও তৎপর থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। রয়েছে কিছু গোপন পরিকল্পনাও। গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে সাইবার ক্রাইম ও অ্যানালাইসিস টিমও কাজ করছে।
এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মোহাম্মদ সাজ্জাদ আলী বলেন, ঈদের সময় ঢাকার রাস্তায় মানুষের চলাচল কমে যাবে। তখন আবাসিক এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হবে। রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে তল্লাশিচৌকি বসিয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। এ ছাড়াও ডিএমপির পক্ষ থেকে আরও কিছু নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেগুলো এখন হিডেন রাখা হচ্ছে।
জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকার ইতোমধ্যে ৫ জুন থেকে আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। এ সময় স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে যাবেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। যদিও এরই মধ্যে অনেকে ঢাকা ছেড়েছেন। মঙ্গলবার শেষ কর্মদিবস হওয়ার কারণে গতকাল বুধবার থেকে ফাঁকা হতে শুরু করছে রাজধানী ঢাকা। ফলে বাসা-বাড়ি এখন তালাবদ্ধ।
সূত্রমতে, বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় ঈদ ও পূজার লম্বা ছুটিতে বাসা তালাবদ্ধ রেখে নাগরিকরা বাড়ি চলে যান। এই সুযোগে গ্রিলকাটা ও ছিঁচকে চোরেদের উৎপাত বেড়ে যায়। বাসার গ্রিল কেটে চুরির সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি রাস্তায় ছিনতাইয়ের ঘটনাও বেড়ে যায়। গত ৫ আগস্টের পর দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা পেশাদার ছিনতাইকারী ও ডাকাত চক্রের সদস্যরা বেরিয়ে এসেছে। এরপর পর থেকে তারা অপকর্মে যুক্ত হচ্ছে। প্রায়ই কুপিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ভাইরাল হচ্ছে। প্রতিটি ঘটনাই ঘটছে জনসমক্ষে। এ কারণে ফাঁকা রাজধানীতে ছিনতাইকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাধারণ নাগরিকরা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি এ বিষয়ে তাদের বাড়তি পরিকল্পনা রয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, পেশাদার ছিনতাইকারী ও গ্রিলকাটা চোরদের একটা ডেটাবেজ করা হয়েছে। এর মধ্যে কারা জেলখানায় আছেন এবং কারা বাইরে আছেন তাদের তালিকা রয়েছে। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীতে যেন এসব অপরাধী বেপরোয়া হয়ে উঠতে না পারে এজন্য গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে সাইবার ক্রাইম ও অ্যানালাইসিস টিম কাজ করছে। সন্ত্রাসীদের মুভমেন্টের ওপরও নজর রাখছে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম।
তিনি বলেন, বর্তমান গোয়েন্দা পুলিশের ১০টি ডিভিশনের একাধিক টিম ঈদের ছুটিতে থানা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। পাড়া-মহল্লায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি পেশাদার সোর্স নিয়োগ দিয়ে অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঈদে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে রাতের বেলায় বাড়ানো হবে পুলিশি টহল। নিরাপত্তা জোরদার করা হবে বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে। পুরান ঢাকা ছাড়াও মহানগরের বিভিন্ন এলাকার সোনার মার্কেটে থাকবে পুলিশের কড়া নজরদারি। বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। ইতোমধ্যে ঈদ উপলক্ষে পশুর হাটের পাশাপাশি বিভিন্ন বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার, আড়তের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে স্পর্শকাতর স্থান, সড়ক, স্থাপনা, বিপণিবিতান, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনালে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। ছিনতাইকারী, ডাকাত, অজ্ঞান ও মলম পার্টির সদস্যদের ধরতে পুলিশ ও র্যাবের বিশেষ টিম সক্রিয় রয়েছে। ঈদের সময় রাজধানীতে দিনেরাতে ৬০০টি পুলিশ দল টহল দেবে। এ ছাড়া প্রতিদিন মহানগরের ৭৫টি চেকপোস্ট বসানো হবে। থানা-পুলিশের বাইরে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের (পিওএম) পুলিশ দল, পুলিশের বিশেষায়িত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি), গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মিলিয়ে মোট ১৫ হাজার পুলিশ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করবে বলে জানান নজরুল ইসলাম। ঈদের ১০ দিনের ছুটিতে রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার কাজ করবে র্যাবও।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, হাট পরিচালনা কমিটির সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করে নিরাপদে পশু ক্রয়-বিক্রয়সহ সঠিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ পশুর হাটগুলোয় র্যাব কন্ট্রোল রুম ও ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। জাল টাকা তৈরি ও সরবরাহের সঙ্গে জড়িত চক্রের বিরুদ্ধে তীক্ষ্ন গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। হাটগুলোতে জাল টাকা শনাক্তে আমরা হাটে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে জাল নোট শনাক্তের মেশিন স্থাপন করে সহায়তা করছি। অসুস্থ গবাদিপশু, কৃত্রিম উপায়ে রাসায়নিক দ্রব্য অথবা ইনজেকশন ব্যবহার করে দ্রুত সময়ে মোটাতাজা করা ও অস্বাস্থ্যকর গবাদিপশু শনাক্তকরণে র্যাবের নজদারি চলমান থাকবে। ঈদ-পরবর্তী ছুটিতে ফাঁকা রাজধানীর বিষয়েও র্যাবের একাধিক টিম কাজ করবে। বিশেষ করে ছিনতাইকারীদের ধরতে র্যাবের অভিযান আরও জোরদার করা হবে। এজন্য র্যাবের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।