প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ১৮:৪৪ পিএম
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে করিডর স্থাপনের কথা ‘গুজব এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে জানিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান।
বুধবার (২১ মে) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডিমেতে এক ব্রিফিংয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘করিডর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কারও কোনো কথা হয়নি, হবেও না। করিডরের বিষয়টা বুঝতে হবে। এটা হচ্ছে একটা ইমারজেন্সি সময়ে দুর্যোগপূর্ণ জায়গা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা। আমরা এখানে কাউকে সরাচ্ছি না। যেহেতু আরাকানে সাহায্য সহযোগিতা অন্যান্য সাপ্লাই রুট দিয়ে সম্ভব হচ্ছে না। জাতিসংঘ আমাদের এইটুকুই বললো যে, কাছেই যেহেতু বর্ডার সেহেতু তাদের সাহায্য করতে যাতে ত্রাণগুলো ওপারে নিয়ে যেতে পারে।’
নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতিসংঘ রাখাইনে তার নিজস্ব সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছাবে। আপনারা জাতিসংঘকে জিজ্ঞেস করেন, প্রমাণ পাবেন। আমরা করিডর নিয়ে কারও সঙ্গে কোনও ধরনের কথা বলি নাই এবং বলবো না। আরাকানের যে অবস্থা তাতে করিডরের কোনও প্রয়োজন নাই।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা এই কাজটি করতে পারলে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে এবং আমরা সেই অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করতে পারব। যতদিন আরাকান অস্থিতিশীল থাকবে আমরা প্রত্যাবাসনের কথা বলতেই পারব না। আর তাহলে তো প্রত্যাবাসন কৌশল নিয়েও কথা বলতে পারব না। অনেকেই বলছেন করিডর নিয়ে আলাপ করছেন, আমাদের জানান নাই। অস্তিত্ববিহীন জিনিস নিয়ে কী করে আলাপ করবো, যার অস্তিত্ব নাই সেই বিষয়ে আলাপ কী করে হয়।’
করিডর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বক্তব্য টেনে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা করিডর শব্দটা উচ্চারণ করেছিলেন, করেই কিন্তু বলেছেন পাথওয়ে। সেটা স্লিপ অব টাং ছিল। কথাবার্তা অনেক সময় স্লিপ হতে পারে, কিন্তু উনি কারেক্ট করেছিলেন। উনি সেই কথা আর কখনই বলেন নাই।
ত্রাণ রাখাইনে নিয়ে যাওয়ার পরে ব্যবস্থাপনা কীভাবে হবে- এ প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘পুরো কন্ট্রোল থাকবে জাতিসংঘের, ওপারে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানকার নিরাপত্তা, সবকিছু তাদের দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ব সীমান্ত পর্যন্ত, সেখানে মাদকপাচার হচ্ছে কিনা, অন্য কিছু হচ্ছে কিনা, সেটা আমরা দেখবো। দুই পক্ষ সম্মত হলে, কনফ্লিট কমলেই শুধু আমরা যাবো।’
ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ দেওয়া হলে কোন রুটে সেটা হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব পক্ষ যদি রাজি হয় তাহলে আমরা সবার সঙ্গে বসে সেটা ঠিক করবো। এটা কেবলমাত্র সরকারের নয়, সব অংশীজনের সঙ্গে বসে আমরা সেটা ঠিক করব। এখনও সেই পর্যায়ে আমরা যাইনি।’
করিডর ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনও মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, ‘সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনও মতপার্থক্য নেই। সেনাপ্রধানের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা এক সমতলে অবস্থান করছি। এ নিয়ে কোনও ফাঁক-ফোকর নেই।’
তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার সুযোগ নেই। আর সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।’
করিডর দেওয়ার বিষয়ে বিদেশিদের চাপ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের ওপর কারও চাপ নেই। যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ যারাই আছেন অংশীজন, আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি। তাড়াহুড়োর কোনও কথা নেই। হিসাব আমাদের সোজা, সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের ফেরত যেতে হবে এবং ফেরত গিয়ে আবার যেন ফেরত না চলে আসে। টেকসই প্রত্যাবাসন হতে হবে।’