মিরপুরে জোড়া খুন
সাইফ বাবলু
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৫ ১৪:০৮ পিএম
প্রতীকী ছবি
রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়ায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ও তার ছোট বোনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এক আগন্তুককে ঘিরে রহস্য বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে ওই ব্যক্তিই হত্যাকারী। নিহতের মেয়ের বর্ণনা মতেÑ সকালে তিনি অফিসে যান। এরপর থেকে রাত পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজে শুধু ওই যুবককেই বাসায় প্রবেশ ও বের হতে দেখা গেছে। বাসায় ঢোকার সময় এক পোশাকে দেখা গেলও বের হওয়ার সময় তিনি পোশাক পরিবর্তন করে অন্য পোশাকে বের হন এবং চেহারা আড়াল করতে মাথায় ক্যাপ পরিধান করেন।
তদন্ত তদারক কর্মকর্তাদের দাবি, খুনি পরিচিত। কারণ জোর করে বাসায় প্রবেশের কোনো আলমত পাওয়া যায়নি। এমনকি লুটপাটের ঘটনাও ঘটেনি বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণে খুনি পূর্ব পরিচিত এবং এটি পরিকল্পিত খুন ধরেই তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ আলামত সংগ্রহ করেছে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে খুনির সংখ্যা। আপাতত একজনকে ধরেই তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে নিহত মরিয়ম বেগমের মেয়ে নুসরাত জাহান মিষ্টি ও বাসার কেয়ারটেকার রাজুকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ডিবি এবং পিবিআই কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকেও কিছু তথ্য পাওয়া গেছে, যা খুনি সম্পর্কে ধারণা পেতে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত তদারক কর্মকর্তারা। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি। অপরদিকে জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত মরিয়মের স্বামী কাজী আলাউদ্দিন বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কাউকে এ ঘটনায় গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি। তবে কেয়ারটেকার রাজুকে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর জোনের ডিসি মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে পারিবারিক কিছু বিষয় আছে। সেগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুতই এই জোড়া খুনের রহস্যভেদ করা সম্ভব হবে।
জানা গেছে, মরিয়ম বেগমের স্বামী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা কাজী আলাউদ্দিন কয়েক বছর হলো গ্রামের বাড়িতে থাকেন। দেড় মাস আগে মরিয়ম বেগমের বাসায় এসে থাকতে শুরু করেন ছোট বোন সুফিয়া বেগম (অবিবাহিত)। মরিয়ম বেগমের দুই মেয়ে। বড় মেয়ে ইসরাত জানান খুসবু স্বামীসহ আমেরিকায় থাকেন। ছোট মেয়ে নুসরাত জাহান মিষ্টি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
শাহ কামাল তাদের নামে এক আত্মীয় প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, মিরপুর ১০ নম্বরে মিষ্টির অফিস। প্রতিদিন সকালে বের হয় রাতে বাসায় ফিরে সে। ঘটনার দিন মিষ্টি ভোর সাড়ে ৬টায় বাসা বের হয়ে গিয়েছিল। রাত ৯টায় বাসায় ফিরে ফ্ল্যাটের দরজা লক দেখতে পান। অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলেও ভেতর থেকে কেউ দরজা খুলছিল না। পরে মিষ্টি নিজের কাছে থাকা চাবি দিয়ে তালা খুলে দেখেন ডাইনিং রুমে তার মা এবং বেডরুমে তার খালা পড়ে আছে রক্তাক্ত অবস্থায়।
উল্লেখ্য, শুক্রবার পশ্চিম শেওড়াপাড়ার ৬৪৯ নম্বর বাড়ির (নার্গিস ভবন) দ্বিতীয় তলার বি ১ ফ্ল্যাটে খুন হন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিটিএ) অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মরিয়ম বেগম ও তার ছোট বোন সুফিয়া বেগম। পুলিশ রাত ১০ টায় ফ্ল্যাটের ডাইনিং রুমের ফ্লোর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মরিয়ম বেগম এবং বেডরুম থেকে সুফিয়া বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক সুরতহাল শেষে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাতেই শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর মধ্যে মরিয়ম বেগমের পেটে একাধিক ছুরিকাঘাত এবং সুফিয়া বেগমকে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে হত্যার আলামত পেয়েছে পুলিশ।