হাওর রক্ষায় ইজারা বন্ধ করতে হবে : প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

প্রকৃত মৎস্য চাষিদের স্বার্থে হাওরে ইজারা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘কোনো হাওরে ইজারা থাকা উচিত নয়। হাওর ওই অঞ্চলের মানুষের অধিকার; আর তা রক্ষা করতে হবে।’

শনিবার (১৯ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯ : হাওর অঞ্চলে বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

হাওরের মালিক মূলত কে— এমন প্রশ্ন রেখে উপদেষ্টা বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে হাওরগুলো রয়েছে। যদিও অধিকাংশ হাওর এলাকা ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দিয়ে দেওয়া হয়েছে; যারা শুধু ইজারা দিয়ে এখান থেকে রাজস্ব আহরণ করে।’

তিনি বলেন, ‘হাওর ঘিরে একটা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা হয়েছে। হাওরাঞ্চলের ২৯ শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে।’

মিঠামইনের আলোচিত অল ওয়েদার সড়ক নিয়ে তিনি বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে যে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, তাকে বলা হচ্ছে অল ওয়েদার সড়ক। পরে জানা যায় সব ঋতুতেই এ সড়ক সহনশীল। অথচ এ রাস্তা তৈরির মাধ্যমে এরই মধ্যে ওই এলাকার নিদারুণ ক্ষতি হয়ে গেছে।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘মাছ ধরার জন্য এরই মধ্যে আমরা কারেন্ট জাল বন্ধ করেছি। কিন্তু বর্তমানে চায়নাদুয়ারী নামক জালে মাছ ধরা হচ্ছে। এগুলো অবশ্যই বন্ধ করা হবে। জাল হবে মৎস্যজীবীদের একটা উপকরণ, অথচ এ জাল হয়ে গেছে এক অবৈধ জাল। প্রকৃত জেলেরা এসব অবৈধ জাল ব্যবহার করেন না। কিছু মৌসুমি মৎস্যজীবীরা এসব জাল ব্যবহার করে থাকেন।’

এ সময় হাওর রক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেন উপদেষ্টা। বলেন, ‘এর ফলে বিলুপ্ত হওয়া মাছগুলো ফিরে আসতে পারে। সুতরাং জৈবিক ব্যবস্থাপনা হবে হাওর রক্ষার একটা মূল পদক্ষেপ।’

হাওরাঞ্চলের ভুক্তভোগীরা বলেন, হাওরের বিল ইজারা প্রায় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালী মহাজনদের হাতেই যায়; যার ফলে সাধারণ মৎস্যজীবীরা বঞ্চিত হয়।  মৎস্যজীবী সমিতির নামে হাওর ইজারা নেওয়ার ক্ষেত্রেও নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তাদের সমর্থকরা হাওর লিজ নিয়ে থাকেন। তাই হাওর বিল লিজ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রকৃত সাধারণ মৎস্যজীবী বা মৎস্য চাষিরা পেতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তারা।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর আহ্বায়ক রাশেদা কে. চৌধূরীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, সাবেক সচিব ও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার। এতে আরও বক্তব্য দেন বারসিকের পরিচালক পাভেল পার্থ, হাওর সংস্কৃতি অধ্যয়ন এবং গবেষণা একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সজলকান্তি সরকার, মানবাধিকার কর্মী জাকিয়া শিশির, হাওর উন্নয়ন আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. এম মোখলেসুর রহমান।

হাওরাঞ্চলের ভুক্তভোগী আহ্লাদ খান, অঞ্জনা বিশ্বাস, বোরহান উদ্দিনও বক্তব্য দেন।

ধরার সদস্য সচিব শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় হাওরাঞ্চলে বৈষম্য ও অব্যবস্থাপনা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন অ্যাসোসিয়েটস ফর ইনোভেটিভ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এআইআরডি) পরিচালক আবদুল হাই চৌধুরী।