প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৬:৫৪ পিএম
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ ১৭:০৭ পিএম
তেজকুনিপাড়ার বাসায় রুবিনার মরদেহ নেওয়ার পর স্বাজনদের কান্না ৷ ছবি : প্রবা
প্রাইভেটকারের নিচে আটকে পড়া রুবিনা আক্তার রুবির মৃত্যুকে দুর্ঘটনা বলতে নারাজ পরিবার। একে তারা হত্যাকাণ্ড দাবি করে বিচার চেয়েছেন। রুবিনার ভাই জাকির হোসেন মিলন বলেন, ‘আমার বোনকে মেরে ফেলেছে৷ এটা কোনোভাবেই দুর্ঘটনা হতে পারে না। এটা হত্যাকাণ্ড। আমি বিচার চাই।’
শুক্রবার (২ নভেম্বর) বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের বিপরীত পাশের রাস্তায় প্রাইভেটকারের নিচে আটকা পড়েন রুবিনা। তিনি তার আত্মীয়র সঙ্গে মোটরসাইকেলে হাজারীবাগ এলাকায় ভাইয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, প্রাইভেটকারটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। রুবিনা নিচে পড়ে প্রাইভেটকারের নিচে আটকে যান। প্রাইভেটকারটি না থেমে রুবিনাকে টেনে নীলক্ষেত মোড় পর্যন্ত নিয়ে যায়। সেখান গাড়ি থামতে বাধ্য হলে স্থানীয় জনতা চালককে মেরে হাসপাতালে পাঠায়। রুবিনাকে হাসপাতালে পাঠানো হলেও তাকে বাঁচানো যায়নি।
প্রাইভেটকারের চালক আজহার জাফর শাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক। শিক্ষাছুটি শেষে বিভাগে না ফেরা এবং বিভাগের সঙ্গে একাডেমিক সম্পৃক্ততা না থাকায় ২০১৮ সালে চাকরিচ্যুত হন তিনি।
ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে রুবিনার মরদেহ রিলিজ দেওয়া হয়।
রুবিনার ছোট বোন সুলতানা খান লিপি বলেন, রুবিনার বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর। গত বছর তার স্বামী মাহবুবুর রহমান ডলার মারা যান। ডলার দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন৷ তাদের একমাত্র ছেলে আরাফাত রহমান খান রোহান। রুবিনা স্বপ্ন দেখতেন ছেলেকে একদিন খুব বড় করবেন৷ ১৩ বছর বয়সি ছেলে ফার্মগেটে ক্যাথলিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। বিজ্ঞানের প্রতি তার দারুণ ঝোঁক।
লিপি বলেন, ‘বাবাকে হারিয়ে রোহান মাকে ভীষণ আঁকড়ে ধরেছিল। আপা যখন খুব কান্নাকাটি করতেন, রোহান বলত, মা তুমি কেঁদো না৷ তোমায় ছেড়ে কোনো দিন কোথাও যাব না। সেই আপাকে তার ছেলের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে গেল৷ মাকে হারিয়ে রোহান একেবাবে নিস্তব্ধ হয়ে গেছে৷ সে কোনো কথা বলছে না।’
মর্গ থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তেজকুনিপাড়ার হোন্ডা গলির বাসায়। সেখানে তার শ্বশুরবাড়ির স্বজন ও ছেলে শেষবারের মতো দেখেন রুবিনাকে। সেখান থেকে রুবিদের বাড়ি হাজারীবাগের ভাগলপুর লেন জামে মসজিদে জানাজা শেষে আজিমপুরে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন রুবিনা।