ইউছুব ওসমান
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩৪ পিএম
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২০:০১ পিএম
ফলের বাজার। প্রবা ফটো
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অস্থিরতা বিরাজ করছে দেশের ফলের বাজারে। বিদেশ থেকে তাজা ফল আমদানিতে সরকার সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোয় বাজারে ফলের সরবরাহ কমেছে। এতে ফলের দামও বেড়েছে কেজিতে ৩০-১২০ টাকা পর্যন্ত। সারাবছর খেজুরের দাম কিছুটা কম থাকলেও রমজান মাস ঘনিয়ে আসতেই হু হু করে বাড়ছে এর দামও। এতে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে আপেল, কমলা, আঙ্গুর, নাশপাতির মতো পুষ্টিকর নানা ফল।
ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি করা এসব ফলের দাম এমনিতেই বেড়েছে। এর মধ্যে আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোয় পুষ্টির উপাদানটি চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। রমজানের মাত্র সপ্তাহ দুয়েক বাকি থাকায় দাম আরও বেশি বাড়তে বাড়তে পারে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। রমজানের আগেই ফলের বাজারে আগুন লাগায় শঙ্কায় রয়েছেন অনেকেই। ফল বিক্রি কমে যাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ ব্যবসায়ীদের কপালেও। আমদানিকারকরা বলছেন, রমজান মাসে সবার কথা ভেবে শুল্ক কমানোর জন্য এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হলেও শুল্ক না কমিয়ে উল্টো বাড়িয়েছে। এতেই অস্থিরতা চলছে ফলের বাজারে।
রাজধানীর বাদামতলী ফল আড়ৎ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা প্রতিকেজি আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৪০ টাকা। যা ২ সপ্তাহ আগেও ২৭০-২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি কমলা আগে ছিল ২৫০-২৭০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকা। চায়না কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩৩০-৩৪০ টাকা কেজি দরে। যার মূল্য আগে ৩০০ টাকা ছিল। মাল্টা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০-৩৩০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ২৫০-২৬০ টাকা। সবুজ আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৪৬০-৪৮০ টাকা কেজি। দুই সপ্তাহ আগেও এর দাম ছিল ৪০০-৪১০ টাকা। প্রতিকেজি লাল আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৬২০-৬৩০ টাকা কেজি দরে। আগে তা ৫০০ টাকা ছিল।
এদিকে রমজান ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে হু হু করে বাড়ছে খেজুরের দামও। সরেজমিনে বাদামতলী পাইকারি বাজারে দেখা গেছে, সাধারণ খেজুরের ৪০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার টাকা। মরিয়ম খেজুর ৫ কেজির বক্সের দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা। বড় মরিয়ম ৫ কেজির বক্স ৪ হাজার ৬০০ টাকা। কালমি ৫ কেজির বক্স ৫ হাজার টাকা। মাসরুক ৫ কেজির বক্স বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকায়। মাবরুম ৫ কেজির বক্স ৫ হাজার ৫০০ টাকা। আজোয়া খেজুর বিভিন্ন মানের বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। এর মধ্যে ৫ কেজির বক্স ৬ হাজার, ৫ হাজার, ৪ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে মেডজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৫ কেজির বক্স ৭ হাজার ৫০০ টাকায়।
তানভীর এন্টারপ্রাইজের মালিক মমিন ইসলাম জানান, গত দুই সপ্তাহ থেকে খেজুরের চাহিদা বাড়ছে। দাম আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। রমজানে দাম আরও কিছু বাড়বে। কারণ তখন মানুষের অনেক বেশি চাহিদা থাকবে।
ক্রেতারা বলছেন, বছরজুড়ে ফলের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকে। রমজান আসলে ফল আর ছুঁইয়ে দেখার সাধ্যও থাকে না। দাম বাড়লেও তো খেতে হচ্ছে। রমজানে সাধারণ মানুষের ফলমূল খাওয়া একেবারেই সাধ্যের বাইরে চলে যাবে।
এদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, উচ্চমূল্যে আমদানি করা ফল আঙুর-নাশপাতির দাম সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৭০-১০০ টাকা। বর্ধিত শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি আদায়ে বন্দর থেকে ফল খালাস ও বাজারে সরবরাহ কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এভাবে চলতে থাকলে রমজানে কঠিন সময় পার করতে হবে, এমন শঙ্কা ভোক্তা ও খুচরা বিক্রেতাদের।
এদিকে গত ৯ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তাজা ও শুকনা ফলে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করেছে। এর সঙ্গে আপেল, আঙুর ও তরমুজের মতো কিছু টাটকা ফল ও জুসের ওপরও শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। শুল্ক না কমালে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে আমদানিকারকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য আমদানি ও খালাস বন্ধের হুঁশিয়ারি দিলেও পরে তা স্থগিত করেন। তবুও বাজারে ফলের সরবরাহ না বাড়ায় প্রতিদিনই বাড়ছে ফলের দাম।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, রমজান মাসে সবার কথা ভেবে আমরা শুল্ক কমানোর জন্য এনবিআরকে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু উল্টো তারা শুল্ক বাড়ানোর কারণে ফলের দাম বেড়েছে। এর কারণে অনেক ক্রেতা ফল কিনছে না। অনেক আমদানিকারক লোকসানের শঙ্কা দেখছেন। তাই নতুন করে ফল আমদানিতে সাহস পাচ্ছেন না। আসন্ন রমজানে এর প্রভাব অবশ্যই পড়বে।