ফয়সাল আহম্মেদ
প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:১০ এএম
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:১০ এএম
ছবি : সংগৃহীত
রাজধানীতে কাউন্টারভিত্তিক বাস সার্ভিস চালুর পাঁচ দিনের মাথায় পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ শুরু হয়েছে। রাজধানীতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির উদ্যোগে চালু করা হয় ই-টিকেটিং পদ্ধতি ও কাউন্টারভিত্তিক বাস সার্ভিস। এ পদ্ধতিতে গাজীপুর-ঢাকা সড়কের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী ২১টি কোম্পানির ২ হাজার ৬১০টি বাস অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সব গাড়ির রঙ নির্ধারণ করা হয় গোলাপি। তবে গতকাল সোমবার বন্ধ হয়ে যায় এই কাউন্টারভিত্তিক বাসসেবা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর উত্তরা, প্রগতি সরণি, সায়েদাবাদ, সদরঘাট, গুলিস্তানসহ বেশ কিছু জায়গায় বন্ধ ছিল কাউন্টারভিত্তিক এসব বাস। সায়েদাবাদ এলাকায় পরিবহন শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে বন্ধ হয়ে যায় এই রুটে চলাচলকারী বাস। আন্দোলনের কারণে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। শুধু কাউন্টার থেকে যাত্রী ওঠানামার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারসহ কয়েক দফা দাবি নিয়ে তারা সড়ক অবরোধ করেন। এদিকে বাস না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের সংকটও দেখা দেয়।
এর আগে সায়েদাবাদ এলাকায় সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জনপদের মোড়ে বাস শ্রমিকরা জড়ো হতে শুরু করেন। শতাধিক শ্রমিক জমায়েত হওয়ার পর তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
বাড্ডা এলাকায় জাহাঙ্গীর হোসেন নামের এক যাত্রী বলেন, প্রায় ২ ঘণ্টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি। আগে প্রতি ৫ মিনিট পরপর গাড়ি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন শ্রমিকদের অবরোধের জন্য বাস পাওয়া যাচ্ছে না। কয়দিন পরপর এসব ঝামেলার জন্য আমাদের মতো যাত্রীরা জিম্মি হয়ে থাকি। এগুলো দেখার কেউ নেই।
পরিবহন শ্রমিকরা দাবি করছেন, নতুন টিকিট পদ্ধতিতে তাদের ক্ষতি হচ্ছে। তাদের ইনকাম কমে গেছে। এ সার্ভিসের কারণে তেলের টাকা উঠছে না বলে জানান শ্রমিকরা। রবিবার রাতেই পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে এ নিয়ে মিটিং হয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়। তবে আশানুরূপ সমাধান না হওয়ায় পরিবহন শ্রমিকরা গাড়ি চালাচ্ছেন না।
তুরাগ পরিবহনের বাসচালক হোসেন আলী বলেন, সারা দিন গাড়ি চালিয়ে রাত ২টায় যেতে হয় টাকা আনতে কাউন্টারে। সেখানে গিয়ে টাকার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা। আগে যে টাকা পেতাম তার থেকে কম নিতে হচ্ছে। এইভাবে চললে আমাদের সংসার চলবে কীভাবে। আমরা নতুন নিয়মে গাড়ি চালাতে চাই না। রাইদা পরিবহনের চালক রুহুল বলেন, গাড়ি চালিয়ে সংসার চালানোর মতো টাকাই যদি দিন শেষে না পাই, তাহলে এই সিস্টেমে চালিয়ে আমাদের লাভটা কী?
সড়কে যানজট নিরসন ও শৃঙ্খলা আনতে কাউন্টার ভিত্তিক বাস সার্ভিস পদ্ধতি চালু করে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এসব বাসে যাতায়াত করতে নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে হবে। গোলাপি রঙের এসব বাসে টিকিট ছাড়া কেউ উঠতে পারবেন না, যত্রতত্র ওঠানামাও করা যাবে না। চলতি মাসে মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর এলাকায় যাতায়াত করা বাসগুলোতেও কাউন্টার ও ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু করার কথা।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, পরিবহন সেক্টরের উন্নয়নে যেকোনো সিদ্ধান্ত মালিকদের পাশাপাশি যাত্রী ও শ্রমিকদের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। এত সব সমস্যা সামনে তুলে আনার সুযোগ থাকে। যে সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে তা একপেশে। পরিবহনের সঠিক ব্যবস্থাপনা না করে, হুটহাট একের পর এক নিয়মে গাড়ি চালালে সমস্যা তো হবেই। আর এই সমস্যার জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় যাত্রীরা। তিনি বলেন, নতুন নিয়মে পরিবহন শ্রমিকরা আগের মতো টাকা পাচ্ছেন না। তাদের বিষয়গুলো সমাধান হওয়া উচিত।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম গতকাল রাতে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাস মালিকদের সঙ্গে আমাদের রাতে বৈঠক হয়েছে। মঙ্গলবার (আজ) থেকে সব জায়গায় ঠিকভাবে গাড়ি চলাচল করবে। মূলত একটি পক্ষ দাঁড়িয়েছে, যারা সুশৃঙ্খল পদ্ধতিটি মেনে নিতে পারছে না। তবে আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমরা বিআরটিএ চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে নীতিমালা ঠিক করব। যেন কেউ নিয়মের বাইরে না যেতে পারে।