× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ব্যবসায়ীকে কোপানোর মামলা

ছাত্রদল নেতাকে ছিনিয়ে নিতে থানায় ইমন বাহিনীর হামলা

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:১৪ পিএম

আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:২৪ পিএম

শুক্রবার সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় হামলার চেষ্টা চালায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও ছাত্রদল নেতা মিথুনের সহযোগীরা। ছবি : সংগৃহীত

শুক্রবার সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় হামলার চেষ্টা চালায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও ছাত্রদল নেতা মিথুনের সহযোগীরা। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীতে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় আটক মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে মিথুন (৩৫) নামে এক ছাত্রদল নেতাকে ছিনিয়ে নিতে থানায় হামলা চালানোর ঘটনা ঘটেছে। সদ্য কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজিদুল ইসলাম ইমনের সহযোগীরা গতকাল শুক্রবার ভোরে রাজধানীর নিউমার্কেট থানার সামনে এই হামলা চালায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সহকারী কমিশনার তারিক লতিফের (এসি) নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে গত বৃহস্পতিবার শেষ রাতে রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট সড়ক এলাকা থেকে মিথুনকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথুনকে নিয়ে ভোরে নিউমার্কেট থানায় প্রবেশের সময় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি হামলা চালায়। হামলায় এসি তারিক লতিফসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ছয়জনকে আটক করেছে। 

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিথুনকে ছিনিয়ে নিতে হামলাকারীদের অনেকেই ছাত্রদল ও যুবদলের পদধারী এবং কর্মী-সমর্থক।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার মিথুন, মো. বশির ইসলাম, মো. হাসান, মো. ইমন, মো. মাসুম মাহমুদ, মো. আলামিন ও মো. আকবর আলীকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করার মামলায় মিথুনকে এক দিনের রিমান্ড হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। তবে পুলিশ ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক রাসেলকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। 

থানা পুলিশের ওপর হামলার এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় বলা হয়েছে, শুক্রবার ভোর ৪টায় থানা পুলিশের টিম গ্রেপ্তারকৃত মিথুনসহ নিউমার্কেট থানা গেটে আসামাত্রই গ্রেপ্তারকৃত আসামিসহ এজাহারনামীয় ১৩ জন এবং অজ্ঞাতনামা ৩০-৩৫ জন দেশীয় অস্ত্রসহ সমবেত হয়ে মিথুনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ সুপার তারিক লতিফসহ কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা তাদের পুলিশের আইনানুগ কাজে বাধা না দিয়ে রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তারপরও তারা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। 

থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জানুয়ারি রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে মাল্টিপ্ল্যান দোকান মালিক সমিতির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হককে কুপিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী ইমন গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন সমিতির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল হাসান।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলার পর পুলিশ রাতুল ও হৃদয় নামে দুই সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে। রিমান্ডে তারা জানায়Ñ তাদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন সন্ত্রাসী মিথুন। ইমনের নির্দেশেই মিথুন মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের মালিক সমিতি দখল করতে চেয়েছিলেন। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদাও দাবি করেছিলেন। 

আর এই মিথুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের হয়ে ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাই কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করেন। 

মূলত শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের হয়ে ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডসহ আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজি করছেন এই মিথুন।

প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর পূর্বাচল ৩০০ ফিট এলাকা থেকে মিথুনকে আটক করে নিউমার্কেট থানায় নিয়ে আসে। আর তাকে ছাড়িয়ে নিতে গতকাল শুক্রবার ভোরে থানার সামনে পুলিশের ওপর হামলা চালায় সন্ত্রাসী ইমনের অর্ধশতাধিক সহযোগী। হামলাকারীদের অধিকাংশই ছাত্রদল-যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার মোহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, নিউমার্কেটে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় একটি মামলা হয়। তাতে আসামির তালিকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনসহ অনেকের নাম রয়েছে। পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তারও করে। তাদের দেওয়া তথ্যে পুলিশ নিশ্চিত হয়Ñ এ ঘটনার নেপথ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজিদুল ইসলাম ইমন ও তার প্রধান সহযোগী মোহাম্মদ হোসাইন মিথুন রয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মিথুনকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৩০০ ফিট থেকে গ্রেপ্তার করে।

তিনি বলেন, ‘মিথুনকে গ্রেপ্তারে পুলিশ তাকে আজ (শুক্রবার) ভোরে নিউমার্কেট থানায় নিয়ে আসে। তবে আসামিসহ পুলিশের গাড়িটি থানার ভেতরে প্রবেশের সময় ইমন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তারা গাড়িটি নিউমার্কেট থানার ভেতরে যেতে বাধা দেয় এবং পুলিশের ওপর হামলা চালায়। হামলায় নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) তারিক লতিফসহ চার থেকে পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হন।’

ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করার ওই ঘটনা তদন্তে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন বাহিনীর লোকজনের সংশ্লিষ্টতার তথ্য মিলেছে। তা ছাড়া গ্রেপ্তার দুই সন্ত্রাসীও রিমান্ডে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্যেই মোহাম্মদ হোসাইন ওরফে মিথুনের নাম উঠে আসে। ঘটনার পর থেকে ইমন, মিথুনসহ তাদের বাহিনীর সদস্যরা আত্মগোপনে ছিল। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ জানতে পারে যেÑ ইমনের প্রধান সহযোগী মিথুন ৩০০ ফিট এলাকায় আত্মগোপনে রয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

নিউমার্কেট থানার ওসি মোহসিন উদ্দিন আতিক বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা মিথুনকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। হামলার এ ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অনুসন্ধান চালিয়ে বের করবেন কার নির্দেশে এই হামলা হয়েছে।’


ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার

এদিকে থানা পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার পর মিথুনসহ দুজনকে ছাত্রদল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্রদলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়Ñ শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন মিথুন ও সহসাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল হাসান রাসেলকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 


ফের আলোচনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন

অন্যতম সহযোগীকে ছিনিয়ে নিতে থানা পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন। সম্প্রতি জামিনে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ‘আত্মগোপনে’ রয়েছেন একাধিক হত্যা মামলার এই আসামি। অবশ্য এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে আহত করার ওই ঘটনার পরই তার নামে মামলা করা হয়।

সূত্রে জানা গেছে, ইমনের নির্দেশে ধানমন্ডি ও আশপাশের এলাকায় চলছে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি। হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকলেও ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জেল থেকে ছাড়া পান সাজিদুল ইসলাম ইমন। আর ছাড়া পেয়েই পুরোনো রূপে আবির্ভূত হয়েছেন পুলিশের তালিকাভুক্ত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগানসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ফুটপাতের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে নেয় ইমন বাহিনী। ইতোমধ্যে ২২টি বড় মার্কেট দখল করে চাঁদাবাজি শুরু করেছে এই বাহিনী।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজিদুল ইসলাম ইমন একসময় ছাত্রদলের রাজনীতি করতেন। ছিল পদ-পদবিও। চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে সন্ত্রাসী হিসেবে তিনি পুলিশের তালিকাভুক্ত হন। এরপর একাধিক হত্যা মামলার আসামি হয়ে র‌্যাবের অভিযানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান।

ভারতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন ইমন। ২০০৮ সালে ভারত সরকার ইমনকে বাংলাদেশ পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরপর থেকে তিনি জেলেই ছিলেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে জেলে থেকেই অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন ইমন। ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও মাদকের কারবার থেকে শুরু করে টার্গেট হত্যার ঘটনায় নিজের লোকজনকে কাজে লাগাতেন তিনি।

পুলিশের কয়েকটি সূত্র জানায়, গত ১৫ আগস্ট জেল থেকে ছাড়া পায় ইমনসহ তালিকাভুক্ত বেশ কিছু সন্ত্রাসী। তাদের মধ্যে ইমনের বিরুদ্ধে নতুন করে অপরাধে জড়ানোর নানা অভিযোগ আসতে থাকে পুলিশের কাছে। 

৫ আগস্টপরবর্তী সময়ে পুলিশ নানা কারণে অনেকটা নিষ্ক্রিয় ছিল। আর সেই সুযোগে ইমন তার বাহিনী দিয়ে চাঁদাবাজি ও ছিনতাই কর্মকাণ্ড শুরু করেন। আন্ডারওয়ার্ল্ডে আগের মতোই বেপরোয়া হয়ে ওঠে ইমন বাহিনী। 

রাজধানীর ধানমন্ডি, রায়েরবাজার, হাজারীবাগ, টালি অফিস, জিগাতলা, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, কেরানীগঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ভবন নির্মাণ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ময়লার সিন্ডিকেট, ডিশ ব্যবসা, ইন্টারনেটের ব্যবসা সবকিছুর একক আধিপত্য পেতে মরিয়া ইমন বাহিনী। ইতোমধ্যে ২২টি বড় মার্কেট দখল করে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে তারা।

এলিফ্যান্ট রোডে ব্যবসায়ীকে হত্যাচেষ্টা মামলার পর শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন পুরোপুরি আত্মগোপনে চলে যান। বিদেশে অবস্থান করছেন বলে প্রচার করা হলেও ইমন দেশেই আত্মগোপনে থাকতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন কেউ কেউ। নিজের অবস্থান গোপন রাখতে তিনি সরাসরি কোনো মোবাইল ফোনও ব্যবহার করছেন না। দলের লোকজনের ফোনে গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা