× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চেনা রূপে ফিরেছে বাণিজ্য মেলা, ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি

সাইফুল ইসলাম, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)

প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৫৬ পিএম

আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৫ ২০:৫৭ পিএম

চেনা রূপে ফিরেছে বাণিজ্য মেলা, ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি

ফুটপাতের পণ্য বিক্রি, ক্রেতা কম, দর্শনার্থী বেশি ও ছুটির দিন ছাড়া দর্শনার্থীদের সমাগম না থাকাÑ এমন নানা অভিযোগ ছিল রূপগঞ্জের পূর্বাচলে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর ঘিরে। অবশেষে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) ছুটির দিনে চেনা রূপে ফিরেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মেলার দশম দিন দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। এদিকে মেলায় লোকসমাগম ও বিক্রি বাড়ায় হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ীদের মুখে। 

তবে তীব্র যানজটে ক্ষোভ ছিল ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের। এ ছাড়া খাবারের মান, ভাঙা রাস্তা ও ধুলোবালি, ফুটপাতে পণ্য বিক্রিসহ বিভিন্ন অভিযোগও ছিল সবার। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মেলায় দর্শনার্থীদের আগমন বাড়ায় তিনশ ফুট, এশিয়ান বাইপাস ও গাজীপুর বাইপাস সড়কের দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে মেলায় আসা দর্শনার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এদিকে হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিরসনের চেষ্টা করলেও এত লোকের সমাগম সামলাতে তাদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। 

শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, ছুটির দিন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। তবে তীব্র যানজটে ভোগান্তির শিকার হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। নরসিংদী, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ গজারিয়া, ফেনীসহ আশপাশের জেলা উপজেলার দর্শনার্থীরা মেলায় আসতে গিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়ক থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত এবং টাঙ্গাইল, গাজীপুরসহ আশপাশের জেলা উপজেলার দর্শনার্থীরা এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কের গাজীপুর কালীগঞ্জ হয়ে মেলা পর্যন্ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে। এ ছাড়া ঢাকা শহর থেকে আসা ক্রেতা দর্শনার্থীরা যানজটে আটকা পড়ে ৩০০ ফুট সড়কে। এ ছাড়া যানজট এড়াতে বিকল্প পথ হিসেবে রুপসি-কাঞ্চন সড়ক, ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়ক, ছনপাড়া চান-টেক্সটাইল সড়ক ব্যবহার করতে গিয়ে সেখানেও যানজটের কবলে পড়ে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। মেলায় আসতে গিয়ে তাদের কারও চার ঘণ্টা কারও তিন ঘণ্টা আবার কারও ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় গুনতে হয়েছে। একদিকে ধুলোবালি অন্যদিকে ভাঙাচোরা সড়ক। এ সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে অনেক দর্শনার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েক দিন আগেও মেলার কিছু স্টল নির্মাণাধীন থাকলেও এদিন পুরো মেলা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। মেলা পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ায় দর্শনার্থীরাও খুশি। মেলার দশম দিনে এসে শুক্রবার ছুটির দিনে বাণিজ্য মেলা যেন তার নিজস্ব রূপ ফিরে পেল। ছুটির দিনে মেলা সকাল ১০ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা ছিল। ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করে। সকালে দর্শনার্থী কিছুটা কম থাকলেও বিকালে পুরো মেলা দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে।

ছুটির দিন হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও স্টলকে নানা রঙের বাতি জ্বালিয়ে রাঙিয়ে তোলেন। ছুটির দিন হওয়ায় মেলার ভেতরে ছিল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন। যেখানে পরিবেশিত হয় নাচগানসহ নানা আয়োজন। এদিন মেলায় বেশিরভাগ স্টলেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে গৃহস্থালি, ইলেকট্রনিকস, প্রশাধনী, কাশ্মিরি স্টলগুলোয়। এ ছাড়া শিশুপার্ক ও রেস্তোরাঁয় বসার জায়গা ছিল না। শিশুপার্কের ভেতরে রাইডগুলোর টিকিট কাটতে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। বেশি লোকের সমাগম হওয়ায় রেস্তোরাঁগুলো খাবারের দাম দর্শনার্থীদের কাছে বেশি নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে অনেকে। 

মেলায় ঘুরতে আসা নলপাথর এলাকার ইমরান ভূঁইয়া বলেন, এবার মেলায় চাহিদামতো পণ্য নেই এবং খাবারের মান ভালো নয়। তাই যারা প্রথমে আসছেন, তারা শুধু ঘুরে দেখে চলে যাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে খেতে গিয়ে মূল্য নিয়ে ঝগড়া করতে হচ্ছে।

মেলায় হাজী বিরিয়ানি নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে, কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব বিরিয়ানির স্টলগুলোর পরিচালনার সঙ্গে আসল প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। এসব স্টল সিন্ডিকেটের লোকজন চালাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি স্টলের কর্মকর্তা বলেন, ২০ ফুট প্রস্থ ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের স্টল বরাদ্দ পেতে ইপিবি থেকে নেওয়া বরাদ্দে খরচ হয়েছে মাত্র ৯ লাখ টাকা। কিন্তু আমরা ওই স্টল চালাচ্ছি ১৪ লাখ টাকার চুক্তিতে। মূল মালিক ব্যবসা না চালিয়ে ৫ লাখ মুনাফা নিয়ে গেছে। এই মুনাফার জন্য ভালো মানের খাবার দিতে পারছি না, কারণ মসলার দাম বেশি, সব পণ্যের দাম বেশি, আর কর্মচারীদেরও খরচ আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম জানান, মেলায় খাদ্যবিষয়ক ভেজাল প্রতিরোধে ভোক্তা অধিকারসহ একাধিক টিম কাজ করছে। আমাদের লোকজনও তদারকি করছেন। তবে লোকবল কম, দাম নিয়ে ভোক্তারা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রবিউল নামে এক মেলার কাপড় ব্যবসায়ী বলেন, এত দিনে মেলা পুরোপুরি জমে উঠল। আগে ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি হলেও আজ মেলায় অনেক বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের সমাগম দেখে আমাদের ভালো লাগছে।

রাজধানীর ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে আমিনুল ইসলাম পরিবার নিয়ে বাণিজ্য মেলায় বেড়াতে এসেছিলেন। তিনি বলেন, আজ শুক্রবার ছুটির দিন তাই স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে মেলা এসেছি। মেলায় অনেক ভিড়। কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। এর আগেরবার মেলায় বসার জায়গা থাকলেও এবার তা নেই।

কথা হয় তুষার নামে এক দর্শনার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলায় আসতে দুপুর ২টার দিকে চিটাগাং রোড থেকে রওনা হই। মেলায় এসে পৌঁছেছি সন্ধ্যা ৬টার দিকে। রাস্তাঘাটের দীর্ঘ যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছিলাম। মেলা থেকে ফিরতেও একই ভোগান্তিতে পড়তে হবে। বাণিজ্য মেলা দেখলাম এবার অনেক জমে উঠেছে।

কথা হয় ইজিবাইকচালক আরমান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, কাঞ্চন ব্রিজ ও তিনশ ফুট সড়ক পুরোটাই যানজটে আটকে আছে। যানজটের কারণে দর্শনার্থীরা হেঁটে মেলায় যাচ্ছে। এই যানজট কখন শেষ হবে কেউ বলতে পারে না।

গেট ইজারাদার প্রতিষ্ঠান ডিজি ইনফোটেক লিমিটেডের ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম বলেন, শীত উপেক্ষা করে শুক্রবার ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ১ লাখ ৩০ হাজার লোকের সমাগম হয়েছে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে এ বছর ই-টিকিটিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যাতে করে দর্শনার্থীরা নির্বিঘ্নে মেলায় প্রবেশ করতে পারে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ও বাণিজ্য মেলা পরিচালক বিবেক সরকার বলেন, মেলার সকল স্টল নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গেছে। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মেলা কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল। মেলায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে। মেলায় দর্শনার্থীদের আসা-যাওয়ার জন্য ২০০টির অধিক বিআরটিসির শাটল বাস রাখা হয়েছে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা