প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৫৮ পিএম
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫২ পিএম
সিপিবির সমাবেশে বক্তব্য দেন রুহিন হোসেন প্রিন্স। ছবি: সংগৃহীত
দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনা করে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতারা।
রাজনৈতিক দল ও অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ—সংস্কার আগে, না নির্বাচন আগে। এভাবে বর্তমান চলতে থাকলে দেশ সংকটের মধ্যে পড়বে। তাই দেরি না করে আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করার আহ্বান জানান তারা।
শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিপিবি আয়োজিত ‘ঢাকা সমাবেশে’ তারা এসব কথা বলেন।
সমাবেশে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা দলের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। সমাবেশ শেষে সিপিবির কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে লাল পতাকা মিছিল করেন।
সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তব্য হচ্ছে নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। সংবিধানে পরিষ্কার লেখা আছে, প্রজাতন্ত্রের মালিক হলো জনগণ। আপনারা যদি বিশ্বাস করেন প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ, জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেন, সমস্যার সমাধান সেখানেই হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নামকরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসকে কলঙ্কিত করছে। মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী বয়ান, এটা মিথ্যা বয়ান। রাষ্ট্রকে ব্যবহার করছে লুটপাটের জন্য। আমরা আওয়ামী বয়ানের কবর চাই, কিন্তু সে কারণে মুক্তিযুদ্ধকেও যদি কবর দিতে আসেন আরেকবার প্রস্তুত হয়ে যান। আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দেব। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো আমরা আবার গর্জে উঠব।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর যদি বাংলাদেশের মাটিতে তৎপরতা চালানোর অধিকার না থাকে, জামায়াতে ইসলামীও কোনো অধিকার থাকতে পারে না। কিন্তু আমাদের দেশের দলগুলো লুটপাটের অধিকার রক্ষার জন্য তারা এই সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী শক্তিকে নিয়ে খেলা করছে। একবার আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর কর। আরেকবার বাইনপরি কাঁধে ভর কর। যারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, তারা হলো ভিন্ন জাতি। এই দুটোকে এক করে দেখো, কোনোভাবেই চলবে না।
কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ। আইনশৃঙ্খলার অবনতি, মব জাস্টিস, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, প্রশাসনে অস্থিরতা—সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সবকিছু মিলিয়ে দেশের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। দেশটি গোলকধাঁধার ভেতর আছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশ আরও সংকটে পড়বে। এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা। জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার তারিখ ঘোষণা করা। দেশে আজ সাম্প্রদায়িক শক্তি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমাদের দেশে এখন অন্তর্বর্তী সরকার রয়েছে। আমরা অনেক সময় মজা করে বলি, তার অন্তরের কথা বুঝতে পারছি না। তবে বোঝা যাচ্ছে নানা ধরনের ছলবলিতে কৌশলে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাই। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, ভোট জনগণ দিতে পারবে। বিক্ষুব্ধ হচ্ছেন। মানুষের আয় কমে গেছে, জনসেবাপত্রের দাম বেড়েছে, তারা বিক্ষুব্ধ হচ্ছেন, এজন্য হাসিনাকে দেশ ছাড়াতে হয়েছে। আর আপনি সংস্কারের কথা বলে জনসেবাপত্রের দাম কমাতে পারবেন না, জনগণকে শান্তি দিতে পারবেন না। নতুন করে ভ্যাট বসিয়ে আপনিও তো একই ব্যবস্থা দিয়ে চলছেন। বাজার কিছু করবেন না, পারবেন না।’
সমাবেশ থেকে জানানো হয়, ১০ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় এবং ঐক্য গড়ে তোলার সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ২০ জানুয়ারি পল্টন হত্যাকাণ্ড দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মরণ ও শপথ গ্রহণ করা হবে। এ সময় সারা দেশে অন্তত এক হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা অনুষ্ঠত হবে।