প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫ পিএম
শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে অনেক আগেই ইসকন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে জানিয়েছে সংগঠনটি। এর নেতারা বলেছেন, চিন্ময় দাস ইসকন বাংলাদেশের কেউ নন। তিনি ইসকন থেকে বহিষ্কৃত। তার বক্তব্য ও কার্যক্রমের দায় ইসকনের নয়।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর স্বামীবাগ আশ্রমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা এ কথা বলেন। এ সময় ভারতের মন্তব্যে সম্পৃক্ত না থাকার দাবিও করে সংগঠনটি।
ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী লিখিত বক্তব্যে বলেন, অনেক মাস আগেই প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস, সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস এবং চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকন বাংলাদেশ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং উল্লেখ করা হয়, তাদের দ্বারা সংঘটিত কার্যক্রম ইসকনের নয়।
তিনি অভিযোগ করেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইসকন বাংলাদেশকে নিয়ে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার ছড়ানোর এক ধারাবাহিক প্রচেষ্টা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষত চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর এ অপচেষ্টা চরমে পৌঁছেছে। এটা করা হচ্ছে অন্যায়ভাবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা এবং চলমান আন্দোলনের সঙ্গে ইসকন বাংলাদেশের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।’
চারু চন্দ্র দাস দাবি করেন, গত ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে ইসকন জানিয়ে দেয় যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইসকন বাংলাদেশের মুখপাত্র নন। তাই তার বক্তব্য সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত।
ইসকন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘চলমান মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা’র সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সুনাম ক্ষুণ্ণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ধর্মীয় সহনশীলতা বজায় রাখা ও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যেকোনো প্রকার উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা এবং সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সবাই একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
কার্যনির্বাহী কমিটি ও শিশু সুরক্ষা দলের সদস্য হৃষীকেশ গৌরাঙ্গ দাস বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে কয়েকটি শিশু অভিযোগ করেছিল যে তাদের সঙ্গে অসদাচরণ ও খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। এটা জানার পরে চিন্ময়কে চিঠি দেওয়া হয় বিষয়টি খতিয়ে দেখতে। তখন তদন্তের স্বার্থে তিন মাসের জন্য তাকে সংগঠন ও পুণ্ডরীক ধামের পদ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। তবে তিনি তা মানেননি। সংগঠনের নির্দেশনাও শোনেননি। এ কারণে তাকে ইসকন বাংলাদেশ থেকে স্থায়ীভাবে গত জুলাইয়ে বহিষ্কার করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসকন একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন, ভারত থেকে পরিচালিত নয়। কোনো ব্যক্তি কী বললেন, সেটা তাদের বিষয়।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোরালো আহ্বান জানান ইসকন বাংলাদেশের সভাপতি সত্যরঞ্জন বাড়ৈ।
তিনি বলেন, ইসকন বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সংগঠন, যা সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং মানবকল্যাণে নিবেদিত।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী রোববার ভূমি উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফের সঙ্গে ইসকন বাংলাদেশের একটি বৈঠক রয়েছে। তাতে সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসকন বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ জ্যোতিশ্বর গৌর দাস ব্রহ্মচারী, কার্যনির্বাহী সদস্য বিমলা প্রসাদ দাস ও চিন্ময় গদাধর দাস ব্রহ্মচারী।