প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ২০:২৯ পিএম
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৫৩ পিএম
ডিবির হাতে গ্রেপ্তার তিনজন। প্রবা ফটো
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় গত শুক্রবার রাতে সেনা ও র্যাবের পোশাক পরে ব্যবসায়ীর বাসায় ডাকাতির ঘটনায় ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনীর যৌথ অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার ১১ জনের মধ্যে আটজনকে র্যাব ও তিনজনকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে লুট করা ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা, স্বর্ণালংকার ও দুটি লুণ্ঠিত আই ফোন উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব-পুলিশ। ডিবির হাতে গ্রেপ্তার তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- শরীফুল ইসলাম তুষার (৩৫), জাকির হোসেন (৩৭) এবং মো. মাসুদুর রহমান (৪৭)
র্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য। বাকি তিনজন সাধারণ মানুষ। তাদের কাছ থেকে সোনার একটি ব্রেসলেট ও আংটি জব্দ করা হয়েছে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন জানান, মোহাম্মদপুরে ব্যবসায়ীর বাসায় ডাকাতির ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযান চলছে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ রুহুল কবীর খান বলেন, আমি ১১ জনকে গ্রেপ্তারের কথা শুনেছি। গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব তাদের গ্রেপ্তার করেছে। এর বেশি আমার জানা নেই।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, মোহাম্মদপুরে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর ডাকাতি মামলায় সরাসরি জড়িত তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। রবিবার রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২ লাখ ২০ হাজার নগদ টাকা, প্রায় চার ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার ও দুটি আইফোন উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন এবং ডাকাতির ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় ব্যবসায়ী আবু বকরের বাসায় সেনা ও র্যাবের পোশাক পরে ডাকাতি করে দুর্বৃত্তরা। তারা ওই বাসা থেকে সাড়ে ৭৫ লাখ টাকা ও ৬০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে।
ভুক্তভোগী আবু বকর জানান, তারা বাসায় ঢুকে আমার বৈধ অস্ত্র থানায় জমা দেইনি বলে অস্ত্র নিতে আসার কথা জানায়। অস্ত্র থানায় জমা দেওয়া হয়েছে জানালেও তারা কোনো কথা না শুনে অস্ত্র খোঁজার নাম করে আলমারিগুলো খুলে তছনছ করে টাকা ও স্বর্ণালংকার নেয়। পরে তারা ফ্ল্যাটের একপাশে আমার অফিসে যায় এবং একইভাবে অস্ত্র আছে বলে সিন্দুক ও আলমারি খুলে টাকা নিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। তারা প্রায় ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে ভোর সোয়া ৪টার দিকে বের হয়ে যায়।
তিনি বলেন, দুটি মাইক্রোবাস ও দুটি প্রাইভেটকার নিয়ে বাসার ভেতরে ২৫-৩০ জন ঢুকেছিল, বাইরেও তাদের লোকজন ছিল।
আবু বকর আরও বলেন, আমার বাসা-অফিস মিলে নগদ ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং স্ত্রী, কন্যা, ছেলের বউয়ের প্রায় ৬০ ভরির বেশি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। নগদ টাকার মধ্যে বড় অংশ ছিল জমি বিক্রির টাকা।
এদিকে ডাকাতির ঘটনায় ভুক্তভোগী আবু বকর বাদী হয়ে শনিবার রাতে মামলা করেছেন বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান। তিনি জানান, মুখে মাস্ক লাগিয়ে সেনাবাহিনীর পোশাক পরে আসা লোকজনকে দেখে দারোয়ান গেট খুলে দেয়। এরপর তারা তিনতলায় আবু বকরের ফ্ল্যাটে যায়। র্যাবের জ্যাকেট পরা ও সাদা পোশাকের লোকজনও ছিল তাদের সঙ্গে।
ডিএমপির মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মাসুদ রানা বলেন, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এবং সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, যৌথ বাহিনীর অভিযানের কথা বলে একদল লোক সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরে আবু বকরের বাসায় প্রবেশ করে। প্রত্যেকের মুখোশ পরা ছিল। মাত্র ৪০ মিনিটে আবু বকরের বাসা থেকে ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি সোনা লুট করে নেয় ডাকাতরা।
পুলিশ জানায়, আবু বকর জমি ও ইট-বালু কেনাবেচার ব্যবসা করেন। তার বাসায় ডাকাতিতে ২০ থেকে ৩০ জন অংশ নেয়। তারা গাড়িতে করে আসে। ডাকাতির পর দুর্বৃত্তরা আবার গাড়িতে করেই চলে যায়। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও র্যাব আলাদাভাবে ঘটনার তদন্ত করছে।