প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৫২ পিএম
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ২০:০৯ পিএম
অপহরণকারী শাহরিয়ার রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১০। ছবি: সংগৃহীত
টাকার জন্য পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া ভাগনে স্কুল ছাত্র মো. তুষারকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে অপহরণ করেছে মামা। র্যাব-১০ এর একটি টিম অপহৃত ভিকটিম তুষারকে উদ্ধার ও অপহরণে জড়িত মামা শাহরিয়ারকে গ্রেপ্তার করেছে।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) র্যাব-১০ এর একটি টিম রাজধানীর কাপ্তান বাজার এলাকা থেকে অপহরণকারী মামাকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব-১০ এর কোম্পানী কমান্ডার (সিপিএসসি) তারিকুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছে।
র্যাব জানায়, অপহৃত তুষারের নানি ও দাদার মোবাইলে কল দিয়ে অপহরণের বিষয়ে জানিয়ে টাকা দাবি করেন শাহরিয়ার। প্রথমবার দুই লাখ টাকা দেওয়া হলেও ভাগনেকে ছেড়ে না দিয়ে আবারও দুই লাখ টাকা দাবি করেন এবং না পেলে ভাগনেকে মেরে ফেলারও হুমকি দেন।
এ বিষয়ে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় অপহরণ মামলা হয়েছে।
র্যাব-১০ আরও জানায়, ভিকটিম তুষার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের বাঘৈর এলাকার মো. রুবেলের ছেলে। তুষার বাঘৈর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। গত ৫ সেপ্টেম্বর মায়ের সঙ্গে তুষার নানা বাড়ি একই থানার কদমপুরে বেড়াতে যায়। কয়েকদিন পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিকালে তুষার কদমপুর প্রাইমারি স্কুল মাঠে খেলতে যায়। কিন্তু বাড়িতে না ফিরলে তুষারের পরিবার সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে পায়নি। একপর্যায়ে ২৪ সেপ্টেম্বর তুষারের নানি নাসিমা বেগমের মোবাইল ফোনে কিডনাপার নামক একটি ইমো আইডি থেকে ফোন করে তুষারকে অপহরণের বিষয়টি জানায়। সেই সঙ্গে প্রথমে তুষারের খাওয়া-দাওয়ার খরচবাবদ ৭ হাজার টাকা দাবি করে শাহরিয়ার। তুষারের নানি অপহরণকারীর দেওয়া বিকাশ নম্বরে দাবি করা টাকা পাঠান।
টাকা পাওয়ার পরপরই ওই ইমো আইডিটি বন্ধ করে ফেলেন অপহরণকারী। পরে ২ অক্টোবর অপহরণকারী আবারও একই ইমো আইডি থেকে তুষারের দাদার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ২ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা না পেলে তুষারকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিম তুষারের বাবা আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে বিভিন্ন সময়ে অপহরণকারীর দেওয়া বিভিন্ন বিকাশ নম্বরে দুই লাখ টাকা দেন। টাকা পাওয়ার পর তুষারকে ফেরত চাইলে অপহরণকারী আরও ২ লাখ টাকা দাবি করে এবং না দিলে তুষারকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়।
পরে ভিকটিম তুষারের বাবা আর টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে তার আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে ৭ অক্টোবর ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করেন। এরপর অপহরণকারী ভিকটিমের বাবার সঙ্গে যোগযোগ করে এবং আরও টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। ভিকটিমের বাবা ছেলেকে দেখতে চাইলে অপহরণকারী ভিকটিমের বিভিন্ন ভিডিও ধারণ করে পাঠায় এবং তুষারকে জীবিত পেতে হলে দাবি করা আরও দুই লাখ টাকা দ্রুত দিতে বলে।
র্যাব-১০ জানায়, বিষয়টি জানতে পেরে ভিকটিমকে উদ্ধার এবং অপহরণকারীদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার ভোরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর কাপ্তান বাজার এলাকা থেকে অপহরণকারী ভিকটিমের মামা শাহরিয়ার রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
কোম্পানী কমান্ডার (সিপিএসসি) তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেপ্তার শাহরিয়ারের দেখানো মতে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের ইকুরিয়া এলাকায় শাহরিয়ারের ভাড়া করা একটি ৫ম তলা বিশিষ্ট বাড়ির তৃতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে অক্ষত অবস্থায় ভিকটিম তুষারকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় মুক্তিপণের নগদ ৫০ হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়।’
গ্রেপ্তার শাহরিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, শাহরিয়ার তুষারের মামা (মায়ের খালাতো ভাই)। ঘটনার দিন গত ১৯ সেপ্টেম্বর তুষার কদমপুর প্রাইমারী স্কুলের মাঠে খেলতে যায়। সেখানে খেলাধুলা শেষে শাহরিয়ার তুষারকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে একটি অটোরিকশাতে করে হাসনাবাদে শাহরিয়ারে ভাড়া করা বাসার একটি কক্ষে নিয়ে আটকে রাখে। ভিকটিম তুষার বাড়িতে বা তার মায়ের কাছে যাওয়ার কথা বললে শাহরিয়ার ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রকার খেলনা ও বিভিন্ন প্রকার শিশুখাদ্য কিনে দিতে এবং শিগগিরই তার মায়ের কাছে নিয়ে যাবে বলে আশ্বাস দিত।