প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:২২ পিএম
আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৫৪ পিএম
গ্রেপ্তার মো. আজিজ মোল্লা। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির বিমার পাঁচ মিলিয়ন ডলার পাওয়া যাবে। এমন লোভ দেখিয়ে অভিনব উপায়ে প্রতারণার মাধ্যমে ১৭ লাখ টাকার বেশি হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্র। এ ঘটনায় রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় থেকে আজিজ মোল্লা নামে এক প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার (১৩ অক্টোবর) সকালে বনশ্রীর মডেল এজেন্সি নামক একটি অফিস থেকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে আন্না হ্যারিসন নামক ফেসবুক আইডির সঙ্গে ভুক্তভোগী প্রতারণার শিকার নুরুজ্জামানের যোগাযোগ হয়। আন্না হ্যারিসন ভুক্তভোগীকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়ে কথা বলতে বলেন।হোয়াটসঅ্যাপে তিনি ভুক্তভোগীকে জানায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মি. মোহাম্মদ বেলটন নামে এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত থাকা অবস্থায় মারা যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাইনস ব্যাংকে বেলটনের পাঁচ মিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে। তিনি নুরুজ্জামানকে ওই মৃত ব্যক্তির আত্মীয় পরিচয় দেওয়ার জন্য বলেন এবং অ্যালাইনস ব্যাংক ম্যানেজারের আরেকটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেয়।
আন্না হ্যারিসন তার বানানো ম্যাসেজ সেই ব্যাংক ম্যানেজারকে দিতে বলেন। তারপর তার কথিত আইন উপদেষ্টার নম্বর দিলে নুরুজ্জামান তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কথিত আইন উপদেষ্টা বিমার টাকা পাওয়ার জন্য বাদীকে ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার পাঠাতে বলেন। পরে আন্না হ্যারিসন ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধের একটি পেমেন্ট স্লিপ নুরুজ্জামানকে দেন।
এরপর কথিত ব্যাংক ম্যানেজার বিমার পাঁচ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য একটি শিপিং কোম্পানির কাছে দুটি ল্যাগেজ দিয়েছেন বলে নুরুজ্জামানকে জানায় এবং প্রমাণস্বরূপ একটি ভিডিও দেখায়। ব্যাংক ম্যানেজার বিমা খরচ এবং ডেলিভারি খরচ বাবদ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে নুরুজ্জামান ডাচ বাংলা ব্যাংকের উত্তরা শাখার একটি অ্যাকউন্টে তা জমা করেন।
এরপর গত ৩ অক্টোবর সকাল ৮টার দিকে একটি নম্বর থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে একজন ফোন করে নিজেকে ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেয় এবং বাদীর দুটি ল্যাগেজ কাস্টমসে আটকে আছে বলে জানায়। লাগেজ দুটি ছাড়াতে চার লাখ সাত হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে বাদী তাদের কথা মতো ইসলামী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে তা জমা করেন। এরপর ভুক্তভোগী নুরুজ্জামান কথিত কাস্টমস কর্মকর্তার কথামতো আয়কর ও ট্যাক্স বাবদ আরও ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ইসলামী ব্যাংকের আরেকটি অ্যাকাউন্টে জমা দেন। এসব টাকা দেওয়ার পরও তারা নুরুজ্জামানের কাছে আরও ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চায়।
পুলিশ জানায়, বার বার টাকা চাওয়ায় সন্দেহ হলে নুরুজ্জামান বিমানবন্দর কাস্টমসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এটি একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের কাজ। এভাবে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি বাদীর কাছ থেকে সবমিলিয়ে ১৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। এ ঘটনায় নুরুজ্জামান অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে ১২ অক্টোবর নিউমার্কেট থানায় প্রতারণার মামলা করেন।
ডিসি মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘তদন্তাধীন এ মামলায় তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় রবিবার সকালে খিলগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় বনশ্রীর মডেল এজেন্সি নামক একটি অফিস থেকে মো. আজিজ মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তার হেফাজত থেকে ৯টি ব্যাংকের ৯টি চেক বই, তিনটি এটিএম কার্ড, দুইটি ভিসা কার্ড ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আজিজ মোল্লা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেন জানান তিনি।