× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল

আহতদের অনেকেই ফিরতে পারবে না স্বাভাবিক জীবনে

ফারহানা বহ্নি

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৪ ১০:৫৩ এএম

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পা কেটে ফেলতে হয় রিকশাচালক দুলাল মিয়ার ছেলে নাজিমের। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গত শুক্রবার গুলিবিদ্ধ হন নাজিম। সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাবা দুলাল মিয়া। প্রবা ফটো

জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পা কেটে ফেলতে হয় রিকশাচালক দুলাল মিয়ার ছেলে নাজিমের। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গত শুক্রবার গুলিবিদ্ধ হন নাজিম। সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাওয়ায় ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাবা দুলাল মিয়া। প্রবা ফটো

চার বছরের শিশুসন্তানকে নিয়ে হাসপাতালের আইসিইউর সামনে বসে আছেন নীলা আক্তার। স্বামীর চিকিৎসা খরচে অনেক ধারদেনা করেছেন। এখন সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কা। গত ২১ জুলাই রাজধানীর শনির আখড়ায় কাজ শেষে ফেরার পথে সংঘর্ষে হঠাৎ বুকে গুলি লাগে নীলার স্বামী মাহবুবের। রাস্তায় বিভিন্ন পণ্য ফেরি করে বিক্রি করতেন মাহবুব। নীলা বলেন, সংসারের অবস্থা সাধারণ সময়েই ভালো যায় না। এই চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসাও ভালো যাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে সেদিন বের হয়েছিলেন। বিকালে বাসায় ফেরার পথেই গুলি লাগে। সেদিনই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। অপারেশনের পর থেকে তাকে আইসিইউতে শিফট করা হয়। 

নীলা বলেন, এখন পর্যন্ত অপারেশনে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। আরও টাকা লাগলে কোত্থেকে আনব? আমার তো হাতে একটা হাজার টাকাও নেই। কার কাছে আর টাকা খুঁজব? কিছু হয়ে গেলে এই ছোট বাচ্চা নিয়ে কই যাব আমি। 

মাহবুবের ভাই মারুফ বলেন, গত কয়েক দিন ঘুম নেই। চোখ বন্ধ করলেও ভয় লাগে। ভাইকে সেদিনই আনা হয়েছে হাসপাতাল। কীভাবে কোথা থেকে গুলি লেগেছে তা বলতে পারেনি। গত মঙ্গলবার আইসিইউতে নিয়ে আসা হয়েছে। সুস্থ হলেও আর আগের মতো পরিশ্রম করতে পারবেন না। কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত না থেকেও কীভাবে আমরা ভুগতেছি দেখেন।

গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখা যায় আইসিইউর সামনে স্বজনদের ভিড়। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ রোগীদের নিয়ে এসেছেন। স্বজনদের চোখে-মুখে চিন্তার ছাপ। 

ক্লান্তিতে অনেকেই কথা বলতে পারছেন না। কেউ কেউ বাকরুদ্ধ।

ছোট ভাইয়ের জ্ঞান ফেরার আশায় বাইরে অপেক্ষা করছেন বড় ভাই সাদ্দাম হোসেন। অনলাইনে পণ্য বিক্রি করত ছোট ভাই কাইয়ুম (২৫)। গত ১৮ জুলাই শনির আখড়ায় বিকালে সংঘর্ষের মাঝে ছররা গুলি এসে লাগে চোখে, কপালে। এক চোখ হারিয়েছেন কাইয়ুম। 

সাদ্দাম বলেন, ছোট ভাই চোখটা হারিয়েছে। এত দিনেও জ্ঞান ফিরল না। প্রাণে বাঁচুক অন্তত। তিনি সবার উদ্দেশে বলেন, সব সন্তান তাদের মায়ের কোলে ফিরে যাক। কেউ যেন সন্তানহারা না হয়, পঙ্গু না হয়।

শুধু কাইয়ুম, মাহবুব না। হাসপাতালে আসা বেশিরভাগই শ্রমজীবী মানুষ। তাদের মতো আইসিইউতে ভর্তি আছেন মো. শফিকুল। একটি তেলের পাম্পে কাজ করেন তিনি। পাঁচ বছরের ছোট একটি মেয়ে আছে তার। গত ২১ জুলাই মৌচাক থেকে বাসায় ফেরার পথে বুকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে আনা হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক স্বজন জানান, শফিকুল এখনও ভালো করে কথা বলতে পারছে না। তিনি বলেন, যারা আগেও নাই, পাছেও নাই। তারাই গুলি খাইল। চিকিৎসার খরচ তো আছেই। এসবই ভাগ্য।

সহিংসতায় শুধু বড়রাই নয়, আহত হয়ে অনেক শিশু পঙ্গু হওয়ার উপক্রম। যা কিছুই হোক সন্তান যেন বেঁচে থাকেÑ এটাই চান তাদের অভিভাবকরা। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ইমনের ডান পা হয়তো কাজ করবে না আর -এমন আশঙ্কা করছেন বাবা সুমন মিয়া। রাজধানীর নতুন বাজারে প্রতিদিনের মতো গত ১৯ জুলাই খেলতে বের হয়েছিল ইমন। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে নতুন বাজারের দিকে গেলে তার পায়ে গুলি লাগে। ইমনের দুই পা গুলিবিদ্ধ হয়। এক সপ্তাহ ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সে। 

ইমনের বাবা রিকশাচালক সুমন মিয়া বলেন, পরিবারে একমাত্র আয় করি আমি। ছেলের ভালো চিকিৎসা করাতে হলে অনেক খরচ লাগবে। আমি দিন আনি দিন খাই মানুষ। ছেলেটার পা কবে ঠিক হবে জানি না। পা থেকে ছররা গুলিগুলো বের করে ফেলছে। তবে ডান পায়ের অবস্থা খারাপ। আর কাজ নাও করতে পারে।

চারটি আঙুল ফেলে দিতে হয়েছে ১১ বছর বয়সি আলিফের। মা আসমা বেগম বলেন, রামপুরায় দুপুরে খেলতে বেরিয়েছিল সে। হঠাৎ সংঘর্ষ শুরু হলে ডান পায়ে গুলি লাগে। চারটি আঙুল কেটে ফেলতে হয়েছে তার।

আসমা বেগম বলেন, বাসা-বাড়িতে কাজ করি। ওদের বাবা গাড়ি চালায়। এই অবস্থায় ব্যবসা খারাপ। আমি কীভাবে ছেলের চিকিৎসা করাব। আমাকে কে সহযোগিতা করবে।

ঢামেক হাসপাতাল চত্বরে এখন আহতদের পরিবারের আহাজারিই ভেসে বেড়াচ্ছে অহর্নিশি।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা