প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪ ১৫:৪৮ পিএম
আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২৪ ১৬:১১ পিএম
রাজধানীর রামপুরা থানাধীন মেরাদিয়ায় অবৈধভাবে হাট বসিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে। যদিও এই টাকার এক আনাও পায় না ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসি) বা ঢাকা জেলা প্রশাসন। প্রায় ১০ বছর ধরেই ডিএসসিসি ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের হাটবাজারের তালিকায় মেরাদিয়া হাট বলে কোনো হাটের নাম নেই। অথচ এই মেরাদিয়াতেই অবৈধ হাট-বাণিজ্য চলছে দিনের পর দিন। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের নানা আবেদন-নিবেদন ও প্রতিবাদেও এই সমস্যার কোনো প্রতিকার মিলছে না।
ভুক্তভোগীরা জানায়, প্রতি বুধবার মেরাদিয়ায় হাট বসিয়ে সুবিধাভোগী একটি মহল লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি করে আসছে। বাড়ির মালিকদের অনুমতি ছাড়াই বাড়ির গেটে এবং সামনের অংশে জোর-জবরদস্তি করে দোকানের চকি, ভ্যান ইত্যাদির পসরা বসানো হয়। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। বাসার সামনে দোকান বসানোয় বাধা দিলে হাটের তোলাবাজরা বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেয়, গালিগালাজ করে। কখনও কখনও বাসার দারোয়ান বা কেয়ারটেকারদের মারধরও করে।
সাপ্তাহিক অবৈধ হাটের কারণে এই এলাকায় বসবাসকারীদের পক্ষে জরুরি প্রয়োজনে গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেউ অসুস্থ হলে রোগীসহ গাড়ি বের করা অথবা অ্যাম্বুলেন্স ডাকলে তা বাড়ির কাছ পর্যন্ত আনা সম্ভব হয় না। হাটের দিন চাঁদাবাজরা বাসার গেটের সামনে দোকান বসিয়ে দেয়। তারাই ওই সময় বাসাবাড়ি থেকে গাড়ি বের করতে দেয় না।
সিটি করপোরেশন থেকে হাটের অনুমোদন না থাকায় পরিত্যক্ত ময়লা, পলিথিন, প্লাস্টিক ইত্যাদি বর্জ্য রাস্তা ও বাসাবাড়ির সামনে যত্রতত্র ছড়ানো থাকে। সরকারি কোনো দপ্তর ওই ময়লা পরিষ্কারের দায়িত্ব নেয় না। হাটবারের দিন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, রাহাজানিও বেড়ে যায়। বাসাবাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। হাটে পকেটমার, মোবাইল চুরি, মেয়েদের গলার চেইন, কানের দুল ইত্যাদি চুরি-ছিনতাই হয়ে যায়। মাদকাসক্তদের আনাগোনা বেড়ে যায়। এতে এলাকার বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। তাদের কাছে হাটের দিন মানেই আতঙ্কের দিন।
সিটি করপোরেশনের তালিকাভুক্ত হাট না হওয়ায় এই হাটে কোনো গণশৌচাগার নেই। যার কারণে হাটের লোকজন যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে পরিবেশ দূষিত ও পূতিগন্ধময় করে তোলে। সাপ্তাহিক এই হাটের কারণে রামপুরা-বনশ্রী-ডেমরা লিংক রোডে ভয়াবহ যানজট দেখা দেয়। মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহন প্রবেশ করার কারণে হাটের দিন এলাকার বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় একটি চক্র দক্ষিণ বনশ্রী এইচ ও জে ব্লক অ্যাভিনিউ রোড, এম ব্লক মেইন রোড, এইচ ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের কিছু অংশে হাট বসায়। চাঁদাবাজরা রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এতে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে।
বুধবারের সাপ্তাহিক হাট ছাড়াও মেরাদিয়া বাজার থেকে আড়ং পর্যন্ত (জে-ব্লক ও এম-ব্লক অ্যাভিনিউ রোড) প্রতিদিন শত শত রিকশাভ্যানের ওপর অস্থায়ী বাজার বসানো হয়। এতে এলাকার পরিবেশ ও সৌন্দর্য নষ্ট হয়। বর্তমানে এই সড়কে স্কুল, ব্যাংক, সুপারশপ, বিভিন্ন স্বনামধন্য দেশি ব্র্যান্ডের শোরুম, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল, ডিআইজি ট্যুরিস্ট পুলিশ ও পিবিআই (মেট্রো দক্ষিণ)-এর কার্যালয় রয়েছে। অবৈধ হাট ও বাজারের কারণে রাজউক অনুমোদিত একটি অভিজাত আবাসিক এলাকা ধীরে ধীরে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বনশ্রী মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন জি, এইচ, জে, এম এবং এন ব্লকের বাসিন্দাদের আবাসনের সামনে প্রতি বছর কোরবানির ঈদের সময় অস্থায়ী গরুর হাট বসানো হয়। এ নিয়েও এলাকার বসিন্দাদের উপদ্রব পোহাতে হয়। গরুর হাট চলার সময় হাটের ইজারাদার ও বেপারিরা বিভিন্ন বাড়ির সামনে এমনকি বাসার গেটের সঙ্গে গরু ছাগল বেঁধে রাখে। পিচ ঢালা রাস্তা খুঁড়ে বাঁশ পুঁতে চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
মেরাদিয়া এলাকার স্থায়ী এবং অস্থায়ী বাসিন্দারা প্রতি বুধবার অবৈধ হাট বসানো ও প্রতি বছর গরু-ছাগলের হাটের ইজারার কারণে মানসিক ও স্বাস্থ্যগতভাবে মারাত্মক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। বনশ্রী আবাসিক এলাকার মানুষের স্বাভাবিক ও সুস্থভাবে জীবনযাপনের অধিকারের কথা বিবেচনা করে বুধবারের হাটসহ সকল অস্থায়ী বাজার এবং কোরবানির সময় অস্থায়ী গরু-ছাগলের হাটটি সুবিধাজনক অন্য কোথাও বসানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
বনশ্রী আবাসিক এলাকার জি, এইচ, জে, এম এবং এন ব্লক ও দক্ষিণ বনশ্রীসহ মেরাদিয়া মৌজার মেরাদিয়া কাঁচাবাজার সংলগ্ন এলাকাটি ডিএসসিসির ৩ নম্বর ওয়ার্ড ও খিলগাঁও থানার অন্তর্ভুক্ত। এ এলাকায় হলি ক্রিসেন্ট স্কুল, ফয়জুর রহমান আইডিয়াল ইনস্টিটিউট, কচি কণ্ঠ স্কুল, ঢাকা নার্সিং কলেজসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিন হাজার ছাত্র-ছাত্রী প্রতিদিন মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে যাতায়াত করে। বুধবার হাটের দিন ভোর থেকে হাটের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কারণে সকাল থেকেই এলাকায় স্বাভাবিক চলাচল বিঘ্নিত হয়। হাটের দিন ভিড়ের মধ্যে চলাচল করতে গিয়ে রিকশা এবং অন্যান্য বাহনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ছাত্র-ছাত্রীদের আহত হওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে। এ ছাড়া ইয়ামাগাতা হাসপাতাল, ফেমাস হাসপাতাল, ফরাজী ডেন্টাল হাসপাতাল, নজরুল ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। হাসপাতালের রোগীদেরও যাতায়াতে সমস্যা তৈরি হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, হাট বসানোর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। স্থানীয়রা অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদ হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বহু বছর থেকেই বুধবার মেরাদিয়ায় সাপ্তাহিক হাট বসে। স্থানীয়রা ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ সেখানে কেনাকাটা করে। স্থানীয়দের সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে তারা মেয়রের কাছে অভিযোগ দিতে পারে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’