সাক্ষাৎকার শাহাবুদ্দিন খান
আলাউদ্দিন আরিফ
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৪ ০৮:৫৫ এএম
আপডেট : ১১ জুন ২০২৪ ০৮:৫৮ এএম
অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান
পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট হাইওয়ে পুলিশের নানামুখী কার্যকর পদক্ষেপের কারণে এবারের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হবে বলে আশা করেছেন সংস্থাটির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন খান। তিনি বলেছেন, ‘মহাসড়কের কোথাও গবাদিপশুবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজি ও জোরপূর্বক কোনো হাটে গাড়ি থেকে গবাদিপশু নামাতে দেওয়া হবে না।’ হাইওয়ে পুলিশের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর প্রাক্কালে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
শাহাবুদ্দিন খান বলেন, দেশের ২২ হাজার কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে মাত্র ৩ হাজার কিলোমিটার সড়ক হাইওয়ে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য এলাকা হাইওয়ে পুলিশের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। হাইওয়ে পুলিশের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার সুফল পাচ্ছেন সর্বস্তরের মানুষ। যদিও পর্যাপ্ত জনবল ও ইকুইপমেন্ট সংকটের কারণে মানুষকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। তবু আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি প্রযুক্তিনির্ভর উন্নত সেবা দেওয়ার।
হাইওয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় এনেছি। মহাসড়কে কোনো গাড়িচালক অপরাধ করলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই বেজড ক্যামেরা দিয়ে এসব গাড়ি শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। পাশাপাশি সড়কে নজরদারিসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হচ্ছে। আমরা হাইওয়েতে প্রথাগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করছি। সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ, অতিরিক্ত গতি। আমরা গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিড ডিটেক্টর বসিয়েছি। যারা হাইওয়েতে দায়িত্বপালন করবেন তাদের প্রত্যেককে বডিওর্ন ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রসকিউশনে সফলতা আসছে। এ ছাড়া যারা মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারিতে থাকছেন। আমাদের রয়েছে ‘হ্যালো এসপি’ অ্যাপস, যা ৯৯৯ থেকেও দ্রুত সেবা দিতে সক্ষম। মোবাইল নম্বর ছাড়াই কেউ এই অ্যাপসের মাধ্যমে ইমার্জেন্সি কল দিলে তার সবচেয়ে কাছের যে প্যাট্রোল টিম আছে, সেই তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারবে।
অতিরিক্ত আইজিপি শাহাবুদ্দিন বলেন, আমরা মহাসড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় প্রথাগত নিয়মের পাশাপাশি প্রযুক্তির প্রয়োগ করছি। স্পিকারযুক্ত ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যানজট ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওয়াচ টাওয়ার স্থাপনসহ হাইওয়েতে যানজট ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যা যা করা দরকার সবই করছি।
হাইওয়েতে কাজ করতে কী ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের প্যাট্রোল গাড়ির সংখ্যা কম। একটি টিমকে ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্যাট্রোল করতে হয়। গাড়ির সংখ্যা ও জনবল বাড়ানো সম্ভব হলে হাইওয়েতে আরও মানসম্মত সেবা দেওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশ ২০২৩ সালে প্রায় ২ লাখ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রায় ৬৮ লাখ টাকা আয় করেছে। শুধু প্রসিকিউশন করে সমস্যার সমাধান হবে না। হাইওয়ের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দরকার জনসচেতনতা। এজন্য গণমাধ্যমসহ অংশীজনদের সবার ভূমিকাও প্রয়োজন। জনসচেতনতা ছাড়া মহাসড়কে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। আমরা জনসচেতনতা তৈরিতে লিফলেট বিতরণ, উঠান বৈঠক, কমিউনিটি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি।
এবারের ঈদযাত্রা কেমন হবে জানতে চাইলে শাহাবুদ্দিন বলেন, ঈদ উদযাপনের জন্য বড় শহরগুলো থেকে কয়েক লাখ মানুষ গ্রামের বাড়ি যায়। সড়কে মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়ে। এ সময় সড়কে দুর্ঘটনা হলে যানজট দেখা দেয়। সেজন্য আমরা হাইওয়ে পুলিশের সব সদস্যের ঈদের ছুটি বাতিল করেছি। আমাদের নিজস্ব, জেলা পুলিশ, বেসরকারি ও সরকারি সংস্থাসহ যাদের রেকার আছে সেগুলো প্রস্তুত রাখি। জেলা পুলিশসহ সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ।
সড়কে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, হাইওয়ে পুলিশের কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে মহাসড়কে ডাকাতি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কমেছে। সড়ক দুর্ঘটনাও একটি অপরাধ। এটা সড়কে যানজট তৈরি করে। আমরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। চালক ও যাত্রীদের সচেতনতা তৈরিতেও কাজ করছি। আমরা সড়ক দুর্ঘটনা ও মাদক উদ্ধার সংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত হাইওয়ে পুলিশ করতে পারে। অন্যসব অপরাধ তদন্ত জেলা পুলিশ বা অন্য সংস্থা করে। পর্যায়ক্রমে আমরা মহাসড়কে সংঘটিত যেকোনো অপরাধ ও মামলার তদন্ত করতে পারব। সে লক্ষ্যে কাজ করছি।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, কোনোভাবেই ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্সবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া থ্রি হুইলারও মহাসড়কে উঠতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে নানা করণে এসব যানবাহন মহাসড়কে উঠে থাকে। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করছি, থ্রি হুইলার জাতীয় গাড়ি যাতে মহাসড়কে না চলাচল করতে পারে সেজন্য তারা যেন উদ্যোগ নেন। সব ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করে সমস্যার সমাধান হয় না।
ঈদুল আজহার সময় মহাসড়কে পশুর হাটের কারণে যানজট হয়ে থাকে। এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, আমাদের হিসাব বলছেÑ সারা দেশে মহাসড়কের পাশে গবাদিপশুর ২০২টি হাট বসানো হচ্ছে। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০টি হাট ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায়। এগুলোর কারণে যানজট তৈরি হতে পারে। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে আমরা সংশ্লিষ্ট ইজারাদার, জেলা পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। যাতে কোনোভাবেই গবাদিপশুর হাট সড়কে বসানো না হয়।
অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, আসন্ন ঈদে গবাদিপশুবাহী গাড়িতে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি করা যাবে না। হাইওয়ে পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারও অভিযোগ থাকলে যেকোনো মাধ্যমে আমাদের জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব। কোনো গবাদিপশুর ট্রাককে নির্ধারিত হাটের বাইরে অন্য কোনো হাটে নামতে দেওয়া হবে না।
আজ ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান
আজ বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট হাইওয়ে পুলিশের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটির উদযাপন হবে। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, বাংলাদেশ পুলিশের আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, খ্যাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদ, সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মনজুর হোসেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি শাহাবুদ্দিন খান।