× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সদরঘাটে নেই সেই আগের দৃশ্যপট, ঈদ মৌসুমেও হাহাকার

ইউছুব ওসমান, জবি

প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪ ১৯:২৩ পিএম

আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪ ২০:১২ পিএম

সদরঘাটে নেই সেই আগের দৃশ্যপট, ঈদ মৌসুমেও হাহাকার

প্রতি বছর ঈদ এলে লঞ্চগুলোতে উপচে পড়া ভিড়, টিকিটের জন্য কাড়াকাড়ি, আগে ভাগে বুকিং দিয়েও মিলত না লঞ্চের টিকিট। তবে বদলেছে সেই চিরচেনা দৃশ্যপট। কয়েক বছর ধরেই ঈদ মোসুমেও যাত্রী সংকটে হাহাকার চলছে নৌরুটে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে যাত্রী সংকটে ভুগছে নৌরুট।

রাজধানীর প্রধান নদীবন্দর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের চিরায়ত দৃশ্য হারিয়ে গেছে। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে ঘাটে লাখো জনতার ঢল এখন আর দেখা যায় না। এখন যাত্রীর অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় সদরঘাট থেকে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোকে। তবুও মেলে না যাত্রী, অনেক সময় সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যেতে হয় গন্তব্যে। ফলে লাভ তো দূরের কথা, আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতেও হিমশিম খাচ্ছেন লঞ্চ মালিকরা। ঈদকে ঘিরে আশায় বুক বাঁধলেও যাত্রী না হওয়ায় সেই স্বপ্নও ভঙ্গ হচ্ছে তাদের।

যাত্রী টানতে ভাড়া কমানোসহ নানা অফার দিয়েও এ সংকট কাটাতে পারছে না লঞ্চ মালিকরা। ঈদের কয়েক দিন আগে দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি রুটে কিছু যাত্রী হলেও বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ রুটেই নেই সেই আগের আমেজ। লঞ্চের ডেকে কিছু সংখ্যক যাত্রী পেলেও কেবিনে তেমন আগ্রহ নেই যাত্রীদের।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৩ জুন থেকে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল শুরুর ঘোষণা দিয়েছে লঞ্চ মালিকরা। নিয়মিত দক্ষিণাঞ্চলের ৪১টি রুটে চলাচল করলেও প্রায় ১০টি রুট ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদ মৌসুমেও সেসব রুটে লঞ্চ চলাচলের তেমন সম্ভাবনা নেই। লঞ্চ ব্যবসায় মন্দার কারণে ইতোমধ্যে ২০টিরও বেশি লঞ্চ স্ক্যাপ করে বিক্রি করে দিয়েছেন মালিকরা। অনেকেই হতাশ হয়ে এ ব্যবসা ছেড়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সড়ক পথে যাতায়াতকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। সড়ক পথে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারায় লঞ্চে চলাচলে ভাটা পড়েছে। লঞ্চে চলাচল কিছুটা আরামদায়ক হলেও যাত্রাপথের সময় কম লাগায় সড়ক পথেই ঝুঁকছেন যাত্রীরা। এতে লঞ্চে যাত্রীর সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বিভিন্ন রুটে লঞ্চ বন্ধ করে দিয়ে অনেক মালিক লঞ্চ কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন। লঞ্চ ব্যবসায় হতাশা দেখা দেওয়ায় অন্য ব্যবসায় ঝুঁকছেন তারা।

লঞ্চ মালিক সমিতির সাবেক নেতা আকতার উজ-জামান বলেন, ‘তিনটি রুটে আমার ৫টি লঞ্চ ছিল। এখন আর আগের ব্যবসা নেই, যাত্রীই হয় না। এক বছরের মতো ভর্তুকি দিয়ে লঞ্চ চালিয়েছি। খরচও উঠে না। সেজন্য লঞ্চ বিক্রি করে দিয়েছি। লস দিয়ে তো আর ব্যবসা চালানো যায় না।’

এদিকে রবিবার (৯ জুন) বিকালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদের আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও টার্মিনাল এলাকায় অনেকটা জনশূন্যতা বিরাজ করছে। লঞ্চগুলো ছাড়ার জন্য প্রস্তুত করে রাখা হলেও যাত্রীদের তেমন আনাগোনা নেই। দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি লঞ্চের ডেকে কিছু যাত্রী হলেও কেবিনে তেমন যাত্রীই নেই। আগে এ সময়ে যাত্রীদের চাহিদামতো টিকিট সরবরাহ করতে না পারলেও এখন পাল্টেছে সেই চিত্র। অনেক হাঁকডাক করেও যাত্রী মিলছে না। যাত্রী টানতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া রাখা হলেও যাত্রীরা আগ্রহী হচ্ছে না।

পূর্বে এই সময়ে অগ্রিম টিকিটের জন্য কাউন্টার কিংবা টার্মিনাল এলাকায় ভিড় লেগে থাকলেও এবার অগ্রিম টিকিটের জন্য দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের তেমন দেখা যায়নি। টার্মিনালের পন্টুনে ভেড়ানো লঞ্চগুলোতে গিয়ে কেউ তেমন অগ্রিম টিকিটের ব্যাপারে খোঁজ করছেন না। মাঝেমধ্যে দুয়েকজন এসে অগ্রিম টিকিটের ব্যাপারে লঞ্চের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলছেন।

রামপুরা থেকে আসা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবার গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করি। পরিবারের সবাই সেখানে যাই। তাই আগে ভাগে অগ্রিম টিকিট নিতে এসেছি যাতে টিকিটের সংকটে পড়তে না হয়। কিন্তু এখানে এসে দেখি এখনও অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়নি। টিকিটের তেমন চাহিদাও দেখছি না। দুই-তিন দিন পর টিকিট বিক্রি শুরু হবে বলে লঞ্চের লোকজন জানিয়েছেন।

বরিশালগামী সুন্দরবন-১৪ লঞ্চের কর্মচারী মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘কেবিনের টিকিট এলেই যাওয়া যায়। লঞ্চের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির অগ্রিম টিকিট বিক্রি এখনও শুরু হয়নি। কবে আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হবে, সে বিষয়ে মালিকপক্ষ জানে। মালিকপক্ষের নির্দেশ পেলে আমরা অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করব। তবে আগেরমতো লোকজন এখন টিকিটের জন্য আসছে না। যাত্রী অনেক কমে গেছে। আমরা সারা বছরই অনেক কম যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করেছি। ঈদের সময় একটু বাড়ে কিন্তু সেটা আর আগের মতো নেই।

বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৩ জুন থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল সার্ভিস শুরু হয়ে সেটি চলবে ২৩ জুন পর্যন্ত। এবার ঈদে যাত্রীদের জন্য শতাধিক লঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার ঢাকা নদীবন্দরের আহ্বায়ক মামুন অর রশিদ বলেন, ‘এখন যাত্রীদের তেমন চাহিদা নেই। আমরা গার্মেন্টস ছুটির অপেক্ষায় আছি। যেদিন গার্মেন্টস ছুটি হবে, সেদিন থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচল শুরু করবে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত যেসব যাত্রীরা নিয়মিত যাতায়াত করেন তারাই অনলাইন ও মুঠোফোনের মাধ্যমে আগাম টিকিট বুকিং দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া নৌপথে যাত্রী কমে যাওয়ায় অগ্রিম টিকিটের জন্য যাত্রীদের আগ্রহ কম। পদ্মা সেতুর কারণে টার্মিনালে আগের মতো যাত্রীদের চাপ পড়ে না। তবে যাত্রী বহনে পর্যাপ্ত লঞ্চ প্রস্তুত রয়েছে।’

বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৩ জুন থেকে বিশেষ লঞ্চ চলাচলের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। তবে যাত্রীদের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে বিশেষ লঞ্চ চলাচল করবে। যাত্রী বেশি হলে লঞ্চ বাড়ানো হবে।’

যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যাত্রীবাহী নৌযানের নিরাপদ ও হয়রানিমুক্ত চলাচল নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কাজ করছে। যেহেতু ঝড়ের সময়, সে বিষয়েও নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা