প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪ ২১:২৬ পিএম
ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে ডিসিসিআই আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ইএসজি কমপ্লায়েন্সের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভা। প্রবা ফটো
এনভায়রনমেন্টাল, সোশাল অ্যান্ড গর্ভানেন্স (ইএসজি) বাস্তবায়নে একটি স্ট্যান্ডার্ড ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করতে হবে এবং শিল্পনীতি ও এসএমই নীতিমালায় ইএসজি কমপ্লায়েন্স বিষয়টি অন্তর্ভূক্তিরও প্রস্তাব করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
শনিবার (১৮ মে) ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে ইএসজি কমপ্লায়েন্সের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আশরাফ আহমেদ বলেন, ‘বৈশ্বিক নামীদামী প্রতিষ্ঠানসমূহ বিদেশি বিনিয়োগ সম্ভাবত্যা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ইএসজির বিষয়টি অতীব গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে থাকে, তাই বিশেষকরে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদেরকে এর ব্যবহার বাড়ানোর উপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।’
ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, “দেশে বেসরকারিখাতের পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোতে ইএসজি রিপোর্টিংয়ের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা ইতিবাচক একটি বিষয়। দেশের সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ‘এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড সোশাল রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (ইএসআরএম)’ বিষয়ক গাইডলাইন প্রকাশ করেছে এবং বাংলাদেশ সিকিরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন লিস্টেড কোম্পানীগুলোর জন্য তাদের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদনে ‘ইএসজি রিপোটিং’-এর অন্তভূক্তি বাধ্যতামূলক করেছে।”
গোলটেবিল আলোচনা সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান এবং বাংলাদেশ এ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (বিএবি)-এর মহাপরিচালক মু. আনোয়ারুল আলম অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. মুনিম হাসান বলেন, ‘প্রতিটি খাতেই কমপ্লায়েন্স অত্যন্ত জরুরি, বিশেষকরে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘পরিবেশগত কিংবা সামাজিক কমপ্লায়েন্স প্রতিপালনে আমাদের প্রত্যেককে আলাদা-আলাদাভাবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।’
তিনি জানান, ২০১৬-২০২২ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ১৭টি পণ্যের জিআই প্রদান করা হয়েছে, তবে ২০২৩ হতে এ পর্যন্ত মোট ১৪টি পণ্যের জিআই সনদ প্রদান করা সম্পন্ন হয়েছে, এমনকি ৩০টি পণ্যের জিআই প্রদানের প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে।’
বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) মহাপরিচালক মু. আনোয়ারুল আলম বলেন, বাংলাদেশে স্মার্ট অর্থনীতির রূপান্তর করতে হলে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে, যার সঙ্গে ইএসজির উপর আরো অধিক হারে গুরুত্ব দিতে হবে এবং এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অর্জনের কোন বিকল্প নেই। তিনি শিল্প-কারখানার ইএসজির রিপোর্টিংয়ের আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে দেশের ল্যাবরেটরি সমূহের মান উন্নয়নের উপর জোর দেন।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনিডোর আবাসিক প্রতিনিধি জাকি উজ্জ জামান। তিনি বলেন, ‘৯০ এর দশকে বৈশ্বিকভাবে ইএসজির বিষয়টি চালু হয়েছে, যেটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাস্তবায়নের মাধ্যমে কোম্পানীর ঝুঁকি হ্রাস ও মুনাফা অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যেহেতু এলডিসি উত্তরণের পথে রয়েছে, এমতাবস্থায় ইএসজি বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই, তবে ইতোমধ্যে কিছু বাংলাদেশী কোম্পানী ইএসইজ কমপ্লায়েন্স রিপোটিং বাস্তবায়ন করেছে।’
অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এসজিএস বাংলাদেশ লিমিটেডের বিজনেসে ম্যানেজার ইয়াসমিন আক্তার, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. সলিম উল্লাহ, ইকোটেক্স লিমিটেড-এর পরিচালক মোহাম্মদ বিন কাসেম এবং যুক্তরাজ্যের লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক ড. এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ প্রমুখ।
আলোচকরা ইএসজি কমপ্লায়েন্স বিষয়ক জনসচেতনতা বাড়ানো ও বাস্তবায়নে নীতি সহায়তা প্রদান, ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস, স্মার্ট গর্ভানেন্স, জিআইএসের মনিটরিং ও রিপোটিং সিস্টেম প্রবর্তন প্রভৃতি বিষয়ের উপর জোরারোপ করেন। ইএসজি কমপ্লায়েন্সের জন্য সমন্বিত উদ্যোগের পাশাপাশি আইনের শাসন নিশ্চিতকরণের উপর জোর দেন বক্তারা। ঢাকা চেম্বারের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা আলোচনা সভায় যোগ দেন।