প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪ ০১:০৪ এএম
আপডেট : ১৮ মে ২০২৪ ১১:৩৬ এএম
ফাইল ফটো
সামনে কোরবানির ঈদ। ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বাজারে বেড়েছে সব ধরনের মসলার দাম। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে নতুন পদ্ধতিতে ডলার কিনতে বেশি খরচকে দুষছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এলসি করতে আগের তুলনায় বেশি টাকা লাগছে। যার ফলে বেড়েছে আমদানি ব্যয়। এদিকে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সারা দেশেও বেড়েছে মসলার দাম। দৈনন্দিন কাজে বাজারে মসলা কিনতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।
কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা ইসমাইল হোসেন রনি বলেন, কোরবানির ঈদের এখনও প্রায় এক মাস সময় বাকি, অথচ সব মসলার দাম বাড়ছে। যে পরিমাণ টাকা নিয়ে বাজার করতে এসেছিলাম তা দিয়ে সব সদাই কিনতে পারিনি। ১৫ দিন আগে যে দামে গরম মসলা কিনেছিলাম তা অনেক বেড়েছে। বাজারে এমনিতেই সব কিছুর দাম বেশি। এখন মসলার দামও বাড়তি। এখন দৈনন্দিন রান্নার জন্য মসলা কিনতেও বেগ পেতে হচ্ছে। আর ঈদ এলে তো ব্যবসায়ীরা দাম আরও বাড়িয়ে দেয়।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মসলার দাম বাড়ার জন্য ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া অন্যতম কারণ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে ডলার কেনাবেচা শুরু হয়েছে। এই কারণে মসলার আমদানি খরচ বেড়েছে।
মসলা আমদারিকারকরা বলছেন, এলসি করতে এখন ডলারপ্রতি ১২৫ টাকা গুনতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে সার্ভিস চার্জসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। যার প্রভাব বাজারে সাধারণ মানুষের ওপর পড়ছে।
ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাজারে গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি পুরাতন এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকায়। অন্যদিকে ২০০-৩০০ টাকা বেড়ে নতুন এলাচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ টাকায়। এ ছাড়া কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি জিরা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। লবঙ্গ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়। কালো গোলমরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৪০-৭৫০ টাকায়। দারুচিনি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৯০-৪০০ টাকায়।
দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ী মেসার্স আমেনা ট্রেডার্সের মালিক নুরুল আজিম মুন্না বলেন, বাজারে এখন জিরা, এলাচের দাম ঊর্ধ্বমুখী। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০-১০০ টাকা দাম বেড়েছে। তবে লবঙ্গ, দারুচিনি এগুলোর দাম এখনও স্থিতিশীল আছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন বাজারে মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। কারণ মসলা আমদানিতে এখন শতকরা ১০ শতাংশের মতো বেশি খরচ পড়ছে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা মসলা বিক্রেতা আবুল বাশার ট্রেডার্সের সবুজ মিয়া বলেন, মসলার দাম বাড়ার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া। আমরা পাইকারি বাজার থেকে যে দামে কিনি তার সঙ্গে কিছু লাভ রেখে বিক্রি করি। জিরা প্রতি কেজি ৮০০ থেকে বেড়ে ১০০০, দারুচিনি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে এলাচের দাম। প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০, গোলমরিচ ৮৫০ থেকে ৯৫০, লবঙ্গ ১ হাজার ৫০০ টাকা ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া
সবজির বাজারে কথা হয় সিএনজি অটোরিকশা চালক আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মাসে ১৮-২০ হাজার টাকা আয় করি। তার অর্ধেক চলে যায় ৫ সদস্যের খাবার খরচে। বাজারে হিসাব ঠিক রাখা যায় না। তিনি ৫ লিটার সয়াবিন তেল কিনেছেন ৭৯০ টাকায়, ৫ কেজি আলু কিনেছেন ২৩০ টাকায়। তা ছাড়া ঢেঁড়স, চালকুমড়া, পেঁয়াজসহ বেশ কয়েক ধরনের সবজি তিনি কিনেছেন। আমজাদ হোসেন বলেন, বাইরে বের হলে গরমের জ্বালা আর বাজারে এলে দাম চড়া। গরিবের কোথাও শান্তি নেই।
কারওয়ান বাজারে প্রায় ১২ বছর ধরে কাঁচামালের ব্যবসা করছেন আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, প্রতি কেজি আলুর দাম ৫০, আমদানি করা রসুন ২২০, পেঁয়াজ ৭০, দেশি রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা হাফিজা খাতুন বলেন, এখন বাইরে যেরকম গরম বাজারের অবস্থাও তাই। সবকিছুর দাম বেশি। এক কেজি ঢেঁড়সের দাম ৬০ টাকা। সবচেয়ে কম দামি তরকারি ছিল পেঁপে এখন এটির সব থেকে বেশি। এক কেজি পেঁপে কিনতে হচ্ছে ৮০ টাকা দিয়ে। সপ্তাহখানেক আগে ছিল ৯০ টাকা।
কারওয়ান বাজার ও মহাখালী কাঁচাবাজারে গতকাল শুক্রবার সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৬০-৩৮০, ব্রয়লার ২২০-২৩০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া মাছ ২২০-২৪০, কাতল ৩৬০-৩৮০, রুই ৩৬০-৩৮০, মলা মাছ ৪০০ টাকা কেজি।
বাজার দুটিতে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫, পেঁয়াজ ৬৫-৭০, রসুন ২২০, করলা ৭০ থেকে ৮০, পটোল ৬০, চিচিঙ্গা ৬০-৭০, ধুন্দল ৭০-৮০, পেঁপে ৮০-৮৫, শসা ৪০-৫০, লম্বা বেগুন ৯০-১০০, বেগুন গোল ১০০-১২০, গোল বেগুন সাদা ৮০, টমেটো ৫০-৬০, ঢেঁড়স ৬০, কাঁচামরিচ ১৫০-১৬০, কাঁকরোল ১০০, ঝিঙা ৭০-৮০, প্রতি আঁটি লালশাক ১৫ ও পাটশাক ১০ টাকা। ফার্মের মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা হালি ও প্রতি ডজন ১৫০ টাকা, তবে সুপার শপে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিম সাদা ৪৮ টাকা হালি ও ডজন ১৪০ টাকা।