প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২২ ১৫:৫৬ পিএম
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২২ ১৬:২০ পিএম
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ধার করে দেনা পরিশোধ করছে। অর্থের সংস্থান না থাকায় সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে ধার করছে পিডিবি।
বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, পিডিবি বিদ্যুৎ বিক্রি করে যে অর্থ পায় তা দিয়ে বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। বাকি অর্থ সরকারের তরফ থেকে ভর্তুকি হিসাবে দেওয়া হয়। কিন্তু এবার ভর্তুকি বাবদ বাজেটে অর্থ বরাদ্দ থাকলেও অর্থ বিভাগ থেকে তা ছাড় করা হচ্ছে না। এ কারণে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আর্থিক সংকটে পড়েছে। এটি মোকাবিলার জন্যই এটি করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে পিডিবি ১ হাজার ৫২০ কোটি টাকা ধার নিয়েছে। তবে পিডিবি নিজে বিদ্যুৎ বিতরণ করলেও এ তহবিলে কোনো অর্থ দেয়নি।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো গত এপ্রিলে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ বিক্রি করেছে তার সমপরিমাণ অর্থ পিডিবিকে অগ্রিম হিসেবে দেবে। পিডিবি এ অর্থ আগামী বছর জুন অবধি বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে সমন্বয় করবে।
দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের সিংহভাগ পিডিবি কিনে নেয়। এরপর বিতরণ কোম্পানির কাছে এ বিদ্যুৎ বিক্রি করে। বিতরণ কোম্পানি আবার গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। গ্রাহকের কাছে বিক্রীত অর্থ থেকে বিতরণ কোম্পানি পিডিবির দাম পরিশোধ করে। অর্থাৎ দেশের পাইকারি বিদ্যুৎ কেনাবেচা করে পিডিবি। সরকার পাইকারি বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবিকে ভর্তুকি দেয়।
গত অর্থবছর পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি ছিল ১১ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। সরকার বছরের শেষ নাগাদ এ অর্থ পরিশোধ করে দেয়। এবার অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি রাখা হয়েছে; কিন্তু অর্থ বিভাগ থেকে এবার অর্থছাড়ে বিলম্ব করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাম্প্রতিক এক বৈঠকে বলা হয়েছে, আইপিপি এবং সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রর স্বার্থে সব বিতরণ কোম্পানিকে এপ্রিল-২০২২-এর বিলের সমপরিমাণ অর্থের অবশিষ্ট অর্থ অবিলম্বে পিডিবিকে অগ্রিম হিসেবে দিতে হবে। এ অগ্রিমের অর্থ জুন-২০২৩-এর মধ্যে সমন্বয় করা হবে।
বৈঠকে আরও বলা হয়, পিডিবিকে সব মিলেয়ে বিতরণ কোম্পানি ১ হাজার ৫২০ কোটি টাকা ধার দিয়েছে। যদিও পিডিবি বলেছে এটি অগ্রিম বাবদ নেওয়া হয়েছে। তবে এভাবে বিদ্যুৎ না বিক্রি করে এর আগে পিডিবি সাধারণত অগ্রিম নেয় না। উল্টো পিডিবিই বিতরণ কোম্পানির কাছে অর্থ পায়।
পিডিবিকে ইতোমধ্যে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ১০০ কোটি, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ২০৫ কোটি, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ২০৮ কোটি, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ৮৯২ কোটি ও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ৭০ কোটি টাকা অগ্রিম দিয়েছে।
ওই বৈঠকে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান চলতি বছরের এপ্রিলে বিলের সমপরিমাণ অর্থের বাকিটা অবিলম্বে পিডিবিকে পরিশোধ করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য পরের সভায় উপস্থাপনের জন্য পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো তাদের বাকির টাকা না পাওয়ায় উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিপ্পা) কয়েক দফা বৈঠক হয়। এতে বিনিয়োগকারীরা তাদের হাতে অর্থ না থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন। একই সঙ্গে সরকারি কোম্পানির যে কেন্দ্রগুলো আমদানি করা জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে তারাও পিডিবিকে জানিয়েছে। অর্থ পরিশোধ না করলে তাদের জন্য কেন্দ্র পরিচালনা করা কঠিন হচ্ছে। বেসরকারি কেন্দ্রগুলো পিডিবির কাছে ১৭ হাজার কোটি টাকা পাবে।
সরকারি একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বিষয়টি পিডিবিকে জানিয়েছি। কিন্তু পিডিবির তরফ থেকে এখনও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। তিনি জানান মূল সমস্যা হচ্ছে ডলার সংকট। পিডিবি এখন টাকা দিলেও সেই টাকা দিয়ে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না।’