× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাজারভিত্তিক সুদহার নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন ব্যবসায়ীরা

রেদওয়ানুল হক

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৪ ১১:২২ এএম

বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি : সংগৃহীত

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার দায়িত্ব নেওয়ার পর মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণে সিক্স মান্থস মুভিং এভারেজ রেট অব ট্রেজারি বিলস বা ‘স্মার্ট’ পদ্ধতি চালু করেন। এর ফলে দীর্ঘদিনের ৯ শতাংশ সুদসীমা উঠে যায়। এরপর লাফিয়ে বাড়তে থাকে সুদের হার। কিন্তু বাজার পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হয়নি। তাই এ পদ্ধতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গভর্নর। আজ বুধবার ডাকা মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠকে এ পদ্ধতি বাতিল হয়ে সুদহার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হতে পারে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র। এতে সুদহার আরও বেড়ে ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। পুরো বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন ব্যবসায়ীরা।

নিটওয়্যার উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে ব্যবসা-বাণিজ্য সব বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন তাদের আর বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বন থাকবে না। ওই সমস্ত ইন্ডাস্ট্রির জানাজা পড়ার জন্য সবার প্রস্তুত থাকা উচিত।’ 

তিনি বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করে না। আমরা অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সচিবদের কাছে আমাদের উদ্বেগের কথা বলেছি।’ 

যারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন তাদের আর বেঁচে থাকার কোনো অবলম্বন থাকবে না। ওই সমস্ত ইন্ডাস্ট্রির জানাজা পড়ার জন্য সবার প্রস্তুত থাকা উচিত

Ñ মোহাম্মদ হাতেম

নির্বাহী সভাপতি, বিকেএমইএ


ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হলে গ্রাহকের এক লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার নিয়ম করে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে, আর ব্যবসায়ীদের জেলে নেওয়ার সব ধরনের আয়োজন করা হয়েছে।’ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘৯ শতাংশ সুদে নেওয়া ঋণের কিস্তি যদি এখন ১৫ শতাংশ হারে পরিশোধ করতে হয়, তাহলে খেলাপি হওয়া ছাড়া বিকল্প উপায় থাকে?’

গত রবিবার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘বর্তমানে রেফারেন্স রেট অনুসারে ব্যাংকের সুদহার নির্ধা‌রিত হ‌চ্ছে। শিগগিরই এটি বাজার‌ভিত্তিক করা হবে। সুদহার নির্ধারণের চলমান ব্যবস্থাটি এক‌টি অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা। ভবিষ্যতে বাজারভিত্তিক সুদহার নির্ধারণে ব্যাংকের স্বাধীনতা থাকবে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ‘স্মার্ট’-এর সঙ্গে সর্বোচ্চ তিন শতাংশ মার্জিন যোগ করে ঋণে সুদ ঠিক করতে পারে ব্যাংক। গত এপ্রিল মাসের জন্য স্মার্ট রেট ছিল ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর সঙ্গে তিন শতাংশ যোগ করলে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের সুদহার দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির সিদ্ধান্তের আলোকে গত ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ‘স্মার্ট’ সুদহার চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই মাসটিতে প্রথমবার জুন মাসের জন্য ‘স্মার্ট’ রেট ছিল ৭ দশমিক ১০।

প্রতি ছয় মাসের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের গড় সুদহার বের করে হিসাব করা হয় ‘স্মার্ট’ রেট। প্রতি মাসের শেষে বা প্রথম দিনে স্মার্ট সুদহার কত হবে, তা জানিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। যা পরবর্তী মাসে বিতরণ করা নতুন ঋণের জন্য প্রযোজ্য হবে।

ঘটা করে স্মার্ট রেট প্রকাশ করার কথা জানালেও চলতি মে মাসের জন্য স্মার্ট রেট কত হবে, তা এখনও জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি মাসের ছয় দিন অতিবাহিত হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্মার্ট রেট প্রকাশ করেনি। মূলত এ পদ্ধতি থেকে সরে আসার সিদ্ধান্তের কারণেই চলতি মাসের স্মার্ট রেট প্রকাশ করা হয়নি। গত রবিবার গভর্নরের বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘স্মার্ট রেট’ র্নিধারণ থেকে সরে এলো, যা চলতি মাস থেকেই তা কার্যকর হতে পারে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘এসএমই খাতের ব্যবসায়ীরা এমনিতেই খুব খারাপ অবস্থায় আছে। এর মধ্যে সুদহার আরও বাড়লে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। আমরা খুই উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি দিন দিন খারপ হচ্ছে, ভাবছি ব্যবসা করব না। সরকার খাওয়াবে, আমরা বসে বসে খাব।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্মার্ট রেট উঠে গেলে সুদহার নির্ধারণে ২০২০ সালের এপ্রিলের আগের অবস্থানে চলে যাবে দেশের ব্যাংক খাত। গভর্নর জানিয়েছেন, ব্যাংকঋণের সুদহার হবে বাজারভিত্তিক। ২০২০ সালের এপ্রিলের আগে ব্যাংক খাতে সুদহার ছিল ক্ষেত্রবিশেষে ২২ শতাংশ পর্যন্ত। উচ্চ সুদের কাছে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যবসায় খরচ বাড়ছে; এমন যুক্তি দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কথায় ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংকঋণের সুদহার নামিয়ে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ ঠিক করে দেন।

ওই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন ফজলে কবির। ব্যাংক খাতে এ ঘটনা ছয়-নয় সুদহার নামে পরিচিত। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা। পরে মূল্যস্ফীতির উচ্চহার সামাল দেওয়া ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ নেওয়ার পর সংস্থাটির শর্তে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ থেকে সরে আসে বাংলাদেশ গত বছরের জুলাই মাসে।

তখন থেকেই প্রতি মাসে স্মার্ট রেট প্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের জুন ও জুলাইয়ে মাসে স্মার্ট সুদহার ছিল ৭ দশমিক ১০ শতাংশ, আগস্টে তা সামান্য বেড়ে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ, অক্টোবরে ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, নভেম্বরে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, ডিসেম্বরে ৮ দশমিক ১৪ শতাংশ, জানুয়ারিতে যা ছিল ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ ও মার্চে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

‘স্মার্ট’ রেট প্রকাশের পর থেকে এ পর্যন্ত ৯ মাসে সুদহার বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ বেসিস পয়েন্ট বা ৪৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এই মডেলে খুব বেশি সুবিধা করতে না পারায় আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নে পুরোপুরি বাজারভিত্তিক সুদহার ব্যবস্থা ফের চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুদহারের সীমা তুলে দিলে ফের সেটি ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এতে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কর্মসংর্স্থান কমে যেতে পারে। এমনিতেই প্রবৃদ্ধি এক শতাংশ কমে গেছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের নিচে নেমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে সার্বিক অর্থনীতি গতিশীলতা হারাতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও রপ্তানিমুখী মাঝারি ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা