হাসিব আল আমিন, নোয়াখালী
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৪ ১৫:৪৬ পিএম
আপডেট : ০৬ মে ২০২৪ ১৬:২০ পিএম
নোয়াখালীর চরপার্বতী ইউনিয়নে নিজ খামারে গরুর পরিচর্যায় ব্যস্ত ওমর ফারুক। প্রবা ফটো
২০১৪ সালে ২৬ লাখ টাকায় আমেরিকায় যেতে ব্যর্থ হন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের ওমর ফারুক। পুরো টাকা হারিয়ে হয়ে যান ঋণে জর্জরিত। ফের কুয়েতে যেতে ঋণ করে সাত লাখ টাকা জমা দেন তিনি। সেবারও ভাগ্য সহায় হয়নি। ৩৩ লাখ টাকার এক টাকাও ফেরত পাননি। বাবার পতিত জমিতে দুটি দুগ্ধজাত গরু দিয়ে ভাগ্য বদলের চেষ্টা শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারে ২৬টি গরু। আর খামারের দুধ দিয়ে তৈরি দই, মিষ্টি, রসমালাই, ঘি ও মাখন বিক্রি করে সাড়া ফেলেছেন। পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসে হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী ও সফল উদ্যোক্তা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় বাড়তি দুধ থেকে দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করে নোয়াখালী জেলায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি।
কোম্পানীগঞ্জের চরপার্বতী ইউনিয়নের মান কাজি ব্যাপারী বাড়ির আবুল হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক। নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। তার খামার চরপার্বতী ইউনিয়নে হলেও দুধ থেকে দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রি করেন চর হাজারী ইউনিয়নের হাজারী হাট সড়কের ফারুক সুইটস এন্ড দধি হাউজ নামের প্রতিষ্ঠানে।
ওমর ফারুক বলেন, ২০১৪ সালে আমি ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমেরিকা যেতে চেয়েছি। ঋণ ও সম্পত্তি বিক্রি করে ২৬ লাখ টাকা সেবার খুইয়েছি। তারপর কুয়েতে যাওয়ার জন্য সাত লাখ টাকা দিলাম। সেটাও মার খেল। নিজেকে স্বাবলম্বী করার জন্য এলাকায় একটা মাছের ঘের দিলাম। মাছ চুরি হয়ে গেল। ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলাম। এরপর এক লাখ টাকা ঋণ নিয়ে দুটা দুধের গরু কিনলাম। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে খামারে ২৬টা গরু আছে। যার দাম প্রায় ৩০-৩২ লাখ টাকা। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় বাড়তি দুধ থেকে দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন করছি। সাতজন কর্মচারীর বেতন দিয়ে মাসে আমার এক লাখ টাকা আয় হয়।
ওমর ফারুক আরও বলেন, দৈনিক আমার প্রায় ১৫০ লিটার দুধ হয়। দুধ বিক্রি করতে পারতাম না। সরকারি সহায়তা পেয়ে দুধ ও পার্শ্ববর্তী খামারিদের দুধ থেকে আমি দুগ্ধজাত পণ্যÑ দই, মিষ্টি, রসমালাই ও ঘি তৈরি করছি। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আমার দোকানে আসে।
ওমর ফারুকের বাবা আবুল হোসেন বলেন, আমার ছেলে শিক্ষিত হয়ে খামার করছে আমি তাতে খুশি। আমার কিছুই ছিল না। সে খামার দিয়ে সফলতা পেয়েছে। সরকারি সহায়তায় সে ভালো করছে। বাবা হিসেবে আমি গর্বিত।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাসলিমা ফেরদৌসী বলেন, ওমর ফারুককে আমরা ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম-২ এর প্রকল্প অনুযায়ী সহযোগিতা করেছি। ফারুক কোম্পানীগঞ্জে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রি করছে। তাকে দেখে অন্যরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছে।
নোয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এমন ফারুক নোয়াখালীসহ সারা বাংলাদেশে আছে। আমাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ প্রাণিসম্পদে আগ্রহী হচ্ছে। এভাবে আমরা প্রাণিসম্পদে স্বনির্ভর হব।