সিপিডির সংলাপে বক্তারা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৪ ১৬:৫৮ পিএম
আপডেট : ০৫ মে ২০২৪ ১৮:২৪ পিএম
গুলশানের একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক একটি নীতি সংলাপে বক্তারা। প্রবা ফটো
অপেক্ষাকৃত জটিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির
মধ্যে এবারের বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছে সরকার। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমাগত
বাড়তে থাকা অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণের ঝুঁকি এবং প্রবৃদ্ধির ধারা শ্লথ হওয়ার পাশাপাশি
কর আহরণ কমছে। ত্রিমুখী এই সমস্যা সমাধান এবং বাজেট বাস্তবায়নে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ
ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। কমাতে হবে সরকারি অর্থের অপচয়। আর সুশাসন প্রতিষ্ঠায়
দরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
রবিবার (৫ মে) গুলশানের একটি
হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম,
বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক একটি
নীতি সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংলাপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায়
চলমান জনসম্পৃক্ত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় বাস্তবায়িত হয়। সিপিডির
সম্মানীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে মূল
প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে বিরোধীদলীয় উপনেতা
ও সাবেক মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী
কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান, সংসদ সদস্য এ কে আজাদ, নাগরিক
প্ল্যাটফর্মের কোর সদস্য ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সিপিডির
সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো এবং এসডিজি
বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘খুবই
জটিল রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বিরাজমান। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিও জটিল। বাজেটকে
সামনে রেখে আমরা সামাজিক ও সরেজমিন মতামত নিয়েছি। অর্থনীতিতে তিনটি বড় সমস্যা দেখা
যাচ্ছে। যার মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি। এটা গ্রাম কিংবা শহর এবং খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত
পণ্যের জন্য সত্য। সেহেতু প্রথম সমস্যা হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত মুদ্রাস্ফীতি, যা মানুষের
জীবনমানকে আঘাত করছে।
‘দ্বিতীয় সমস্যা সরকারের ঋণ
পরিস্থিতি। সরকার বিদেশি উৎস থেকে যে টাকা নেয়, তারচেয়ে দেশীয় উৎস থেকে দ্বিগুণ টাকা
ঋণ নেয়। এটার দায়-দেনা পরিস্থিতি ভিন্ন একটা ইঙ্গিত বহন করছে। তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে সাম্প্রতিক
সময়ে প্রবৃদ্ধির যে ধারা ছিল, সেই ধারায় শ্লোথকরণ হয়েছে। এর সঙ্গে কর আহরণ সংকুচিত
হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে মূল্যস্ফীতি
এখনও ১০-এর কাছাকাছি, যা মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করছে। পিছিয়ে পড়া মানুষের ভোগ, শিক্ষা
ও স্বাস্থ্যের ওপর মূল্যস্ফীতি সরাসরি প্রভাব ফেলছে। এসব কারণে বাল্যবিবাহ বেড়ে যাচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পৃথিবীতে যেখানে মূল্যস্ফীতি কমছে, কিন্তু সেই সুফল বাংলাদেশে
দেওয়া যাচ্ছে না।’
জিপিডি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকারি ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৩৭ শতাংশ এবং ব্যক্তি খাতে ঋণ ৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে ৪২ শতাংশ
ঋণ রয়েছে। এর ফলে বিনিময় হারের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এত দিন
বলতাম বাংলাদেশ কখনও বিদেশি ঋণ অনাদায়ি করেনি, কিন্তু এখনকার পরিস্থিতিতে সরকার ঋণের
টাকা দিতে পারছে না, যার পরিমাণ অন্তত ৫ শতাংশ।
অন্যদিকে জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা
৭ শতাংশের ওপরে থাকলেও বর্তমানে এ হার ৪ শতাংশ। লক্ষ্য অর্জন করতে অর্থবছরের বাকি
সময়ে জিডিপি হার হতে হবে ১০ শতাংশের বেশি, যা বাস্তবায়ন অসম্ভব। কারণ বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ
কমে এসেছে, অন্যদিকে ব্যক্তি খাত কিংবা বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না।‘
গবেষণার সারাংশ উল্লেখ করে দেবপ্রিয়
বলেন, ‘মানুষ তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছে। প্রথমত শোভন কর্মসংস্থান, দ্বিতীয়ত মানসম্মত
শিক্ষা এবং সর্বশেষ সামাজিক সুরক্ষা। চার নম্বরে এসেছে পিছিয়ে পড়া মানুষের বৈষম্য কমিয়ে
অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা। বাজেট পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য হতে হবে সংবেদনশীল,
তাদের গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবেশ ও জলবায়ুর বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে। আমার কথা বাজেট
যাই হোক, তার বাস্তবায়ন যেন যথাযথ হয়। যার কাছে দুই টাকা যাওয়ার কথা সেটা যেন তার কাছে
যায়।’
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, উন্নয়ন
অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ বাড়লেও গুরুত্ব কমছে শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতের মতো সামাজিক খাতে,
যা দ্বিতীয় প্রজন্মের বড় সমস্যা। সরকারি অর্থের অপচয় বন্ধ ও সুষম বণ্টনের গুরুত্ব তুলে
ধরে বক্তারা বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা হলেও বাজেট তৈরিতে গুরুত্ব
পায় সুবিধাভোগী (প্রেসার গ্রুপের) শ্রেণির সুপারিশ। অনেক দিন থেকে বিশৃঙ্খলায় আর্থিক
খাত। অর্থ পাচার বাড়িয়েছে সংকট। এমন পরিস্থিতে সংকটাপন্ন অর্থনীতিকে বাগে আনতে দরকার
সুশাসন আর জোরালো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।