× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ব্যাংকে ডলারের মজুদ কম, ফের চড়তে পারে বাজার

রেদওয়ানুল হক

প্রকাশ : ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৩৯ এএম

আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১৯ পিএম

বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ফটো

বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ফটো

রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে ধস নামার পাশাপাশি দেশে আসছে না রপ্তানি আয়ের পুরো অর্থ। এর মধ্যেই সোয়াপের (টাকা-ডলার অদলবদল) মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার নিয়ে রিজার্ভের পতন ঠেকাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ফলে ডলারের তীব্র ঘাটতির কারণে বর্ধিত চাহিদার মধ্যেই গত মার্চে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তাই কিছুটা স্বস্তিতে থাকা ডলার বাজার ফের উত্তপ্ত হয়ে ওঠার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ মাসে ব্যাংকগুলোর কাছে ছিল ৫৪৩ কোটি ডলার, যা আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে ১০ কোটি ডলার কম। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৫৫৩ কোটি ডলার। গত ডিসেম্বরে এ অঙ্ক ছিল ৫৫৬ কোটি ডলার। আর ২০২৩ সালের মার্চে ছিল ৫৩৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ ব্যাংকের ডলার মজুদ কিছুটা বাড়লেও রিজার্ভের জোগান দিতে গিয়ে তা আবার কমে যাচ্ছে। এই হিসাবে নস্ট্রো অ্যাকাউন্ট এবং অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটগুলোতে বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত হ্রাসের কারণে বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক উভয়ই একটি ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এই ঘাটতি দেশের আমদানি সক্ষমতার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় মন্থর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ কমে যাওয়ায় সংকট আরও তীব্র হয়েছে।

তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে ৩৬ দশমিক ২৬ বিলিয়ন হয়েছে, যা আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময় ছিল ১৬ বিলিয়ন ডলার। তবে রপ্তানির পুরো অর্থ দেশে আসেনি। আর রেমিট্যান্সও জনশক্তি রপ্তানির হারের তুলনায় কম।

অন্যদিকে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিলাসবহুল এবং অ-প্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর বিধিনিষেধসহ আমদানি বৃদ্ধি রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। এই পদক্ষেপগুলোর ফলে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারিতে আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব পদক্ষেপ ইতিবাচক ফল আনতে পারেনি। বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমাতে আমদানির ওপর নজরদারি জোরদারের পরও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করতে হয়েছে। গত ৩৪ মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল সময়ে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি হয়েছে ১১ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, বিনিময় হার বাজারভিত্তিক না হলে ডলার বাজারে অস্থিরতা কমবে না। তিনি প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘ডলারের জোগান বাড়াতে মনোযোগ দিতে হবে। বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে সাময়িক সময়ের জন্য দর বেড়ে গেলেও স্বল্প সময়ের মধ্যে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।’ 

এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিক্রি হয় ১৩ দশমিক ৫০ বিলিয়ন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। ডলারের জোগান বৃদ্ধিতে ব্যর্থতার কারণে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। এর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির একের পর এক ভুল নীতিকে দুষছে অর্থনীতিবিদরা।

বর্তমানে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) নির্ধারিত ডলার রেটÑ রেমিট্যান্স ও রপ্তানি নগদায়ন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা, বিক্রয় মূল্য ১১০ টাকা। নগদ ডলারের দামও নির্ধারিত আছে ১১০ টাকা। তবে এই রেট কেউ মানছে না। 

গতকাল সোমবার খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৯ টাকায়। আর ক্রয়মূল্য ছিল ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ব্যাংকেও নির্ধারিত ডলারের দর মানা হয় না। ১১৫ থেকে ১১৭ টাকা দরে ডলার বিক্রি হচ্ছে ব্যাংকে। দুই মাস আগেও ১২২ থেকে ১২৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এর আগে সর্বোচ্চ দর উঠেছিল ১২৯ টাকা। তবে ডলারের জোগান কিছুটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১১৫ টাকায় নেমে আসে দর। সম্প্রতি এটি বেড়ে ফের ১১৯ টাকায় উঠেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডলার বিক্রির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার অপ্রত্যাশিত পরিণতির মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে বিপুল অর্থ উঠে এসেছে, যা ব্যাংকিং খাতে তীব্র তারল্য সংকট তৈরি করেছে।

ব্যাংকাররা জানান, আর্থিক বাজারে চলমান ডলার সংকট নিরসনে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলারের যথেষ্ট মজুদ ছিল না। যেহেতু ডলারের ঘাটতি আছে, তাই অনেক আমদানি পেমেন্ট বিলম্বিত বা পুনঃআলোচনা হয়েছে, যার ফলে ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে আরও সময় পেয়েছে। কিন্তু বর্তমানে মুদ্রাবাজারের সংকট অব্যাহত থাকায় বর্ধিত মেয়াদ শেষে আমদানির পেমেন্ট শুরু হলে বিদেশি ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশে ব্যাংক খেলাপি হয়ে যাবে। অন্যথায় রিজার্ভ শূন্যে নেমে আসবে। আর নির্ধারিত সময়ে পেমেন্ট ব্যর্থ হলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট লাইন সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। এতে বৈদেশিক বাণিজ্য চরম হুমকিতে পড়তে পারে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একক বিনিময় হার না হলে রিজার্ভ পতন থামবে না। মধ্যস্বত্বভোগীদের সুবিধার জন্য একাধিক বিনিময় হার রাখা হচ্ছে। একক বিনিময় হার হলে মধ্যস্বত্বভোগী থাকবে না, সরাসরি রেমিটার বেনিফিট পাবে। এতে ডলার সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বিদেশে থেকে যাওয়া রপ্তানি আয় সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের আশপাশে থাকতে পারে। কিন্তু এটি ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। এটি সমাধান করতে হবে।’ সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।

জানা গেছে, ডলারের ঘাটতির বোঝা সব ব্যাংক সমানভাবে বহন করছে না। শুধু কয়েকটি ব্যাংক দেশের ডলারের মজুদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধারণ করে। আর বেশিরভাগ ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে সংগ্রাম করছে। ফলস্বরূপ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল স্বীকৃত বিপিএম-৬ মডিউল অনুসারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত ২৪ এপ্রিল ১৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। অপরদিকে দায়দেনা বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য নিট রিজার্ভের পরিমাণ আরও কমে গেছে। বর্তমানে এটি ১৪ বিলিয়ন ডলারে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র। সে হিসাবে তিন মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধের অর্থ নেই রিজার্ভে। 

আন্তার্জাতিক মান অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি দায় মেটানোর সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, আমদানি বাবদ প্রতি মাসে সোয়া পাঁচ বিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে। এতে তিন মাসের আমদানির খরচ দাঁড়ায় প্রায় ১৬ বিলিয়ন ডলার।

এমন পরিস্থিতিতে গত এক বছরের মধ্যে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ৯১ টাকা থেকে ১১০ টাকায় উঠেছে। টাকার এই তীব্র অবনমন দেশের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে মারাত্মকভাবে কাজ করেছে। ফলে গত ১৩ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে অবস্থান করছে। যা বর্তমানে ১০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সবশেষ গত মার্চে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রেমিট্যান্সের ক্রয়-বিক্রয়ের তফাত না কমলে তথা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক না হলে ডলারের জোগান বাড়বে না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে বড় ব্যবধান সৃষ্টি করে রেখেছে, যা কালোবাজারিকে উস্কে দিচ্ছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা