কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠক
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ২২:২৭ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ফটো
রিজার্ভের অব্যাহত পতন ও ডলার বাজারের অস্থিরতা মোকাবিলায় জোগান বাড়ানোর বিকল্প নেই। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে আশানুরুপ উন্নতি না হওয়ায় অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম জোরদারের তাগিদ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রবাসীদের অংশগ্রহন বাড়িয়ে এ খাতে ডলারের জোগান বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ব্যাংকগুলো।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাছাড়া আইন পাসের মাধ্যমে কর অব্যাহতিসহ বিভিন্ন শর্ত শিথিল করায় অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনায় অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রবিবার (২৮ এপ্রিল) এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ লিমিটেডের (এবিবি) চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই প্রবাসী বাংলাদেশীরা যেন ফরেন কারেন্সি দেশে এনে অর্থনীতিতে অবদান রাখেন। তাদের আকর্ষণ করতে আমরাও ভালো একটা ইন্টারেস্ট রেট দিব। গত ৫-৭ বছরে ভারত এটা খুব সাকসেসফুলি করেছে। ফিলিপিন থাইল্যান্ড অনেক দেশ এটাতে বেশ ভালো করেছে। আমরাও আরম্ভ করেছি। বিশেষ করে এ সংক্রান্ত আইন পাস হওয়ার পরে আমরা মনে করি এই প্রোডাক্টটা অনেক আকর্ষণীয় হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের যেটা প্রয়োজন সব ব্যাংকগুলো এটা ভালোমত বুঝে এর প্রোডাক্ট তৈরি, মার্কেটিং এবং বিভিন্নভাবে এটাকে প্রমোশন করা দরকার। সেটা কিভাবে কি হবে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম শুরু হওয়ার ৩-৪ মাস আগে আইনগুলো তৈরি করতে হবে; প্রোডাক্টটা আমরা যেন সুন্দরকরে চালু করতে পারি। বিশেষ করে যে অ্যাক্টটা দরকার ছিল যে ট্যাক্স ফ্রি হবে, সেটা আমরা পোয়েছি। এটা এখন মার্কেটিং দরকার।’
এরই মধ্যে কোনো কোনো ব্যাংক কাজ শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনেক ব্যাংক প্রমোশন আরম্ভ করে দিয়েছে। আমার মনে হয় এ বছরের শেষের মধ্যে বিদেশে আমাদের যে ডলার সেভিংস এটা একটা অন্য ক্লায়েন্ট সাইট। রেমিট্যান্স যাদের কাছথেকে আনি এরা তারা না। এরা হচ্ছে একটু আপার লেভেলের, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, লইয়ার এদের কাছ থেকে আমরা ডলার আনার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশের এখন অনেকেই অন্য দেশের নাগরিক। তাদের কাছ থেকেও আমরা আনবো। কারণ আমরা তো ভালো ইন্টারেস্ট রেট দিচ্ছি। এদিকে সরকারের পুরো গ্যারান্টি দেওয়া হচ্ছে। আবার কোনো ট্যাক্স চার্জ করা হবে না। আমরা যদি বেটার ইন্টারেস্ট রেট দিতে পারি ভালো সার্ভিস দিতে পারি তাহলে দেড় কোটির বেশি প্রবাসীকে এতে যুক্ত করতে পারব। এরই মধ্যে সিটি ব্যাংক ভালো সাফল্য পেয়েছে। প্রায় ৩০-৪০ মিলিয়ন ডলার এসেছে। এটা সবে শুরু হচ্ছে। ধিরে ধিরে সবাই চালু করবে।’
অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের ভেতরে পৃথক ব্যাংকিং সেবা। প্রচলিত ব্যাংকিং বা শাখার কার্যক্রমের চেয়ে ভিন্ন ব্যবস্থায় পরিচালিত হয় এটি। কারণ এ জাতীয় কার্যক্রমে আমানত গ্রহণ ও ঋণ দেওয়ার দুই কার্যক্রমই বৈদেশিক উৎস থেকে আসে ও বিদেশি গ্রাহকদের দেওয়া হয়। বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ প্রদান এবং বিদেশি উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যবসা হয় অফশোর ব্যাংকিংয়ে।
চলমান মার্জার প্রক্রিয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চার-পাঁচটা ব্যাংক নিজেরাই মার্জারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা সময়মত তাদের কাজ করতে থাকবে। আমার মনে হয় এটা নিয়ে এত হইচই করার প্রয়োজন নাই। এটা ধিরস্থির ভাবে হবে। যেসব ব্যাংক করতে চাচ্ছে কি চাচ্ছে না এটা সেইসব ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য। ব্যাংক একীভূত সারা পৃথিবীজুড়ে হয়। এটা অস্বাভাবিক কিছু না। আমাদের দেশেও এগুলো আস্তে-ধিরে হবে। এটা নিয়ে এত চিন্তা করা কিছু নাই।’
এর আগে গেল ২২ এপ্রিল অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের অর্জিত মুনাফা বা সুদের ওপর কোনো কর দিতে হবে না মর্মে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। আয়কর আইন ২০২৩-এর ধারা ৭৬ এর উপ-ধারার (১) ক্ষমতাবলে এই অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। অন্য কোনো আইনে কোনো প্রকার কর অব্যাহতি প্রদান করা হলে সেই কর অব্যাহতি ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না এনবিআর সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে অব্যাহতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর আগে গত ৫ মার্চ সমসাময়িক আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার গতিবিধির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে অফশোর ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে ‘অফশোর ব্যাংকিং আইন, ২০২৪’ জাতীয় সংসদে পাস হয়। আইনের দফা ১৩(ক)-তে বলা হয়েছে, অফশোর ব্যাংকিং ব্যবসায় অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট কর্তৃক অর্জিত সুদ বা মুনাফার ওপর আয়কর বা অন্য কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর আরোপ করা যাবে না।