× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রতিবাদে বিক্ষোভ

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৩৫ পিএম

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২০:০৬ পিএম

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ব্যাংক বিটের সাংবাদিকরা। প্রবা ফটো

বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ব্যাংক বিটের সাংবাদিকরা। প্রবা ফটো

সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের বিরুদ্ধে। এর প্রতিবাদ জানিয়ে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে ব্যাংক বিটের সাংবাদিকরা। এমন একসময় এই বিক্ষোভ চলছিল, যখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধিদল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অবস্থান করছিল।  

জানা গেছে, বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংবাদ সংগ্রহে নানা প্রতিবন্ধকার মুখোমুখী হন ব্যাংক খাতের সাংবাদিকরা। চলতি মাসের শুরু থেকে সাংবাদিকদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে কর্তৃপক্ষ। কয়েকজন প্রতিবেদককে হয়রানির অভিযোগ ওঠে নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালকের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অবাধ প্রবেশের দাবি নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে গভর্নর ভবনের সামনে অবস্থান নেন এ খাতের সাংবাদিকরা। 

বিষয়টি সমাধানে বেলা ১১টার দিকে অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতেও কোনো সমাধান হয়নি। ফলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে একটি কমিটি গঠন করেছে ইআরএফ। 

কমিটির সদস্য সচিব রহিম শেখ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের জন্য আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধ যাতায়াত ছিল। বর্তমানে সেখানে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এখন সাংবাদিকরা পাস ইস্যুর মাধ্যমে ব্যাংকের শুধু নির্দিষ্ট কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। এর বাইরে অন্য কোথাও বা কোনো কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন না। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।’

তিনি জানান, এর আগেও পাস ইস্যুর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে হতো। তবে ভেতরে অবাধ যাতায়াত ছিল। বর্তমানে তা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আজ দেখা করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন ইআরএফের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে তিনি কোনো সমাধান দেননি। এর প্রতিবাদে আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। শিগগিরই একটি বৈঠক করবে আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটি; সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করা হবে।’  

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন একসময় এই কড়াকড়ি আরোপ করেছে, যখন ‘ডি’ গ্রেড গভর্নর দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতে পারে কি না এমন আলোচনা চলছে। এ ছাড়া বর্তমানে নানা সমস্যায় আর্থিক খাত টালমাটাল। বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকরা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ ধারে কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংকটে পড়া কয়েকটি ব্যাংক। আবার ঋণখেলাপিদের দাপট দিন দিন বেড়েই চলছে। এমন পরিস্থিতিতে অপরিকল্পিতভাবে ব্যাংক একত্রীকরণ শুরু হয়েছে। যেটির সমালোচনা করছেন অর্থনীতিসংশ্লিষ্টরা। টিআইবির পক্ষ থেকে ‘তড়িঘড়ি ব্যাংক একীভূতকরণ অপরাধীদের দায়মুক্তির নতুন মুখোশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।  

ক্ষুব্ধ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড় ঋণখেলাপি ও অনিয়মে জড়িত ব্যবসায়ী ও ব্যাংকগুলোর প্রকৃত তথ্য গণমাধ্যম থেকে আড়ালে রাখতে বর্তমান গভর্নর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মাধ্যমে তার ‘গণমাধ্যমবিরোধী প্রকৃত চরিত্র’ প্রকাশ পাচ্ছে। তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যোগদানের পর থেকে দেশে ঊর্ধ্ব মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন, সেগুলো কার্যকর ভুমিকা রাখছে না, উল্টো দেশের মূল্যস্ফীতি দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া তিনি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে এ পর্যন্ত ডলার বাজারের অনিয়ম রোধে ব্যর্থ হয়েছেন। রিজার্ভের ভয়াবহ পতন অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে তিন মাসের আমদানি সক্ষমতা হারিয়েছে বাংলাদেশের রিজার্ভ। তা ছাড়া কয়েকটি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে গভর্নরের বিরুদ্ধে। এমনকি কিছু ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে বিভিন্ন নীতি (পলিসি) ঘোষণা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেসব বিষয় গণমাধ্যমে চলে আসায় তিনি সাংবাদিকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করছেন।

তারা আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাংবাদিক প্রবেশে এমন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি কোনো গভর্নর। নিজের দুর্বলতা ঢাকতেই এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বর্তমান গভর্নর ।

ইআরএফের সংঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে সাংবাদিকরা ব্যাংকের নির্দিষ্ট অনুমতিপত্র (প্রবেশ পাস) নিয়ে শুধু মুখপাত্রের কাছে যেতে পারবেন। তবে কোনো কর্মকর্তা যদি সাংবাদিকদের পাস দেন, সে ক্ষেত্রে তারা শুধু সেই কর্মকর্তার কাছে যেতে পারবেন। তবে আগের মতো তারা অবাধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো বিভাগে প্রবেশ করতে পারবেন না।’

এ ব্যাপারে ইআরএফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের পেশাগত কাজকে বাধাগ্রস্ত করছে। তথ্য পাওয়ার সাংবাদিকদের যে অধিকার তা যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।’

ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে সরাসরি বাধা নেই। তবে বর্তমানে অনেকটাই কড়াকড়ি অবস্থানে আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব নিয়ে আজ গভর্নরের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ) ৮ মে বাংলাদেশে সফররত আইএমএফ টিম চলে যাওয়ার পর ব্যাংক বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। কীভাবে আগের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধে প্রবেশ করা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’ 

এদিকে এ ঘটনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ মন্তব্য করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাংবাদিকতা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত পেশা। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করা ও তথ্য পাওয়ার অধিকার সাংবাদিকদের রয়েছে। জনগণ সাংবাদিকদের মাধ্যমেই তথ্য জেনে থাকে। এখন গভর্নর কি লুকাতে চাচ্ছেন?’

তিনি বলেন, ‘স্বচ্ছতা, জবাবদিহি সবখানেই প্রয়োজন। সুশাসনের বিপরীত হয় এমন কোনো পদক্ষেপ কাম্য নয়। সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে না দেওয়া অগ্রহণযোগ্য, এর অবসান হওয়া দরকার।’


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা