রাজু আহমেদ, রাজশাহী
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৯ এএম
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:০১ পিএম
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় একটি আমবাগান পরিদর্শন করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। প্রবা ফটো
আম নিয়ে এবার শুরু থেকেই দুশ্চিন্তায় রাজশাহীর চাষিরা। শীতের স্থায়িত্বকাল বেশি হওয়ায় আমের মুকুল ছিল কম। তার ওপর চলতি মাসের মাঝামাঝি থেকে তীব্র দাবদাহে আমের গুটি ঝরতে শুরু করে। ফলে এবার আমের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উত্তরের আমবাগানের মালিকরা।
আবহাওয়া দপ্তর বলছে, এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে রাজশাহীর তাপমাত্রা ৪০-৪২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই তীব্র দাবদাহ পরিস্থিতির পরিবর্তন দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা। এ অবস্থায় বাগানে সেচের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু বাগানগুলোয় সেচের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
আম নিয়ে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার খ্যাতি থাকলেও কয়েক বছর ধরে নওগাঁ ও নাটোরেও বিস্তার লাভ করেছে আমের চাষ। লাভের আশায় অনেকেই তিন ফসলি জমিতে আমের বাগান গড়ে তুলেছেন। গত বছর এ চার জেলায় উৎপাদিত ১২ লাখ ৪৪ হাজার টন আমের বাজার মূল্য ছিল সাত হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে রাজশাহীতে ২ লাখ ৬০ হাজার টন আম থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আয় হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, রাজশাহী অঞ্চলে এবার ৮০ শতাংশ মুকুল এসেছে। তবে অনেকেরই দাবি, এই পরিসংখ্যান সঠিক নয়। আম উৎপাদন ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, বাঘা উপজেলায় তার ৩০০ বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে, যেখানে মাত্র ২৫ শতাংশ মুকুল এসেছে। তিনি বলেন, এখন আবার খরা দেখা দেওয়ায় আমের গুটিগুলো ঝরতে শুরু করেছে। বোঁটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। তিনি গাছের চারপাশের মাটি কুপিয়ে ঘন ঘন সেচ দিচ্ছেন। এ ছাড়া গাছে পানি স্প্রে করছেন। এত কিছুর পরও এবার আমের ফলন কম হবে বলে তিনি মনে করেন।
শফিকুল ইসলাম ছানার মতো সবাই তাদের বাগানে সেচের জন্য পানির ব্যবস্থা করতে পারেননি। কারণ আমবাগানগুলোতে ডিপ টিউবঅয়েল বা পানির ব্যবস্থা সচরাচর থাকে না। এখন হঠাৎ করে পানির ব্যবস্থা করা মোটেও সহজ নয় সবার জন্য।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় প্রায় ২২ বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে মঞ্জের আলম মানিকের। তিনি বলেন, এবার তার এলাকার বাগানগুলোয় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মুকুল এসেছিল। দাবদাহে গুটি ঝরে পড়ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিকাংশ আমবাগান পুরোনো। এসব বাগানের পুরোনো গাছে আম এমনিতেই কম হয়। অনেকে বাগান কেটে প্লট করে জমি বিক্রি করছেন।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোতাল্লেব হোসেন বলেন, রাজশাহী বিভাগের মধ্যে নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও নাটোর জেলায় আমের উৎপাদন পর্যায়ক্রমে বাড়ছে। চলতি অর্থবছর এই চার জেলায় ৯৩ হাজার ২৬৬ হেক্টর জমিতে আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৭ টন। নয় বছর আগে এই চার জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্য ছিল মাত্র ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৮ টন। সে সময় আমবাগান ছিল ৫৮ হাজার ৯২৪ হেক্টর জমিতে।
চলতি বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ১৬৫ টন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৮ টন, নওগাঁয় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ৪ লাখ ৩১ হাজার টন, নাটোর জেলায় ৫ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে ৭৭ হাজার ১৮৪ টন।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দিন বলেন, দিনে ১৫-২০ ডিগ্রি ও রাতে ১০-১৫ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা থাকলে আমের মুকুলের জন্য ভালো হয়। তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে বাগানে মুকুল কম আসছে। রাজশাহীতে এবার শীত কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। ফলে মুকুল কম এসেছে।
রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে গরমের সমাধান জানতে যোগাযোগ করা হলে তারা সবাই সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন রাজশাহী অফিস, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর প্রতিবেদক)