মৌলভীবাজার প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪০ পিএম
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৪৫ পিএম
সোমবার দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে হাইল হাওরপাড়ের উত্তরসুর গ্রামে বোরো ধান কর্তন উৎসব শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। প্রবা ফটো
কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ বলেছেন, ‘কৃষকদের বোরো চাষে উৎসাহিত করতে এবার ২১৫ কোটি টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। যার ফলে এ বছর সারা দেশে ৫০ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে উচ্চ উৎপাদনশীল হাইব্রিড ধানের চাষ। বোরোতে এবার ২ কোটি ২২ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমাদের মন্ত্রণালয় কাজ করছে।‘
তিনি বলেন, ‘এখন ধান কাটার মৌসুম। সেজন্য শুধু হাওর অঞ্চল নয়, সারা দেশে ফসল সুষ্ঠুভাবে ঘরে তোলা জরুরি। হাওরসহ দেশের বোরো ধান সফলভাবে ঘরে তুলতে পারলে আমাদের খাদ্যের কোনো ঝুঁকি থাকবে না। কৃষি মন্ত্রণালয় এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই গুরুত্বসহকারে কাজ করে যাচ্ছে। হাওরভুক্ত সাতটি জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হাওরের ৪ লাখ ৫৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।’
সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে হাইল হাওরপাড়ের উত্তরসুর গ্রামে বোরো ধান কর্তন উৎসব ও মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো জমি খালি রাখব না। আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি, এটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। একবেলা ভাত না খেলে মনে হয় আমরা দুদিন কিছু খাইনি। আমরা ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশ এরপরে রোহিঙ্গা আছে আরও ১২ লাখের বেশি। এই রোহিঙ্গারা আমাদের দেশের নাগরিক নয়, এরপরও রোহিঙ্গাদের আমাদের সরকারই খাওয়াচ্ছে, সামান্য কিছু আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চল, দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। তবে পুরো চাল দিই আমরা। চাষের জমি কমছে, বেশিরভাগ জমিতে বাড়িঘর বানানো হচ্ছে। সেজন্য কম জমি থেকেই বেশি উৎপাদন করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বীনা দেশে উচ্চফলনশীল নতুন জাতের ধানগুলো চাষ করানোর জন্য সব জায়গায় ব্যবস্থা নিচ্ছে। উচ্চফলনশীল ধান চাষ করে আমরা আগামী দিনে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির পথকে আরও প্রসারিত করব। আমাদের যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সর্বত্র হার্ভেস্টার কাজ করছে। গত বছর শ্রীমঙ্গলে মাত্র দুটি হার্ভেস্টার দেওয়া হয়েছিল। এ বছর দেওয়া হয়েছে ১০টি। আগামি দিনে আরও বাড়বে। সারা দেশে ধানের উৎপাদন আরও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। হার্ভেস্টার দিয়ে ধান কাটলে খরচ অনেক কমে আসে। এই হার্ভেস্টার সরকার ৭০ শতাংশ কম মূল্যে কৃষকদের দিচ্ছে। একটি হার্ভেস্টারের মূল্য ৩০ লাখ হলে সরকার ৭ লাখ টাকায় দিচ্ছে। যান্ত্রিক এ সাফল্য আমাদের কৃষিক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।’
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুরের আয়োজনে এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট গাজীপুরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১) ড. মো. শাহজাহান কবীর, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. শাহ মো. হেলাল উদ্দিন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ঢাকার সরজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি ঢাকার কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. সুরজিত সাহা রায়, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. মনজুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মতিউজ্জামান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু তালেব।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালামের সভাপতিত্বে এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক মো. সামছুদ্দিন আহমদ ও পূজা উদযাপন পরিষদ শ্রীমঙ্গল উপজেলার যুগ্ম সম্পাদক সুদিপ দাশ রিংকুর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি কমলগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শেষপর্বে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।