প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:২৩ পিএম
আপডেট : ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৪৯ পিএম
প্রবা ফটো
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করায় গ্রাহকের আগ্রহ কমছে। ফলে বিক্রিতে ধস নেমেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ ৬ মাসে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। অর্থবছরের আট মাসে এই স্কিমের আয়-ব্যয়ে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে সরকারের অন্য উৎস থেকে ধার করে বিনিয়োগকারীদের পাওনা মেটানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক আমানতের সুদহার বেড়ে যাওয়া এবং সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে নানা রকম বিধিনিষেধের কারণে এ স্কিমে মানুষের আগ্রহ কমছে। তাই সরকারকে অন্য উৎস থেকে ঋণ নিয়ে এ খাতের ঘাটতি মেটাতে হচ্ছে। অর্থাৎ সরকার ঋণ নেওয়ার জন্য খোলা স্কিমটি তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে।
তথ্য বলছে, সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ইতিবাচক থাকলেও পরের ছয় মাস ঋণাত্মক হয়েছে। অর্থাৎ শেষ ছয় মাসে (সেটেপ্টম্বর-ফেব্রুয়ারি) সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বেড়েছে। ফলে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় রয়েছে। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ১ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা। আগের মাস জানুয়ারিতে ঋণাত্মক ছিল ১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। তারও আগের মাস ডিসেম্বরে নিট বিক্রি ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি ঋণাত্মক ছিল। যদিও অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) ভাঙানোর প্রবণতা কম থাকায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেশ বেড়েছিল। ওই দুই মাসে নিট বিক্রি ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা ইতিবাচক ছিল। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ৮ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। অপরদিকে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ কমেছিল ৩ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা কমেছে। তা ছাড়া সুদহার অনেক বেড়ে যাওয়ায় কেউ কেউ এখন ট্রেজারি বিল-বন্ডে টাকা খাটাচ্ছেন। স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বিলে টাকা রেখে এখন সাড়ে ১১ শতাংশের মতো সুদ পাওয়া যাচ্ছে, সঞ্চয়পত্রের তুলনায় যা বেশি। ট্রেজারি বন্ডে সুদ পাওয়া যাচ্ছে ১২ শতাংশের বেশি। ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মুনাফার বিপরীতে কোনো কর কাটা হয় না। এসব কারণে অনেকেই এখন সঞ্চয়পত্রে টাকা না রেখে বিল ও বন্ড কিনছেন।
এদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ঋণ কমিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকে বাড়ানো হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের ঋণ ৩৪ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। একই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৪৫ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা নেওয়া হয়। এতে প্রথম আট মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে মাত্র ১০ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
জানা গেছে, ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে সরকার ঋণ নিচ্ছে কম। গত অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। এর মধ্যে শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া হয় ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে রয়েছে। গত মার্চ শেষে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে গ্রাহকদের একটি অংশ মেয়াদপূর্তির আগেই সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলছে। মেয়াদপূর্তির আগে নগদায়ন করলে সুদ কম পাওয়া যায়।