শাহ আলম শাহী, দিনাজপুর
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২৪ এএম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:০৯ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
‘দেখতে পাকিস্তানি মুরগির মতো হলেও বাউ মুরগির মাংসের স্বাদ দেশি মুরগির মতোই। বাউ মুরগি পালনে কোনো সমস্যা নেই। রোগবালাই কম। অন্য মুরগির তুলনায় বাউ মুরগির ওজন বেশি, অল্প দিনে বাজারজাত করা যায়। আমি তিনশ থেকে এখন সাড়ে সাতশ মুরগি করেছি। মুরগি পালনে অনেক লাভবান আমি।’
কথাগুলো বলছিলেন বাউ মুরগি পালনে সফল দিনাজপুরের সদর উপজেলার শেখপুরা ইউপির মাধবপুর গ্রামের নাজমা বেগম।
পঞ্চাশোর্ধ্ব নাজমা সংসারের কাজের ফাঁকে মুরগি পালন করে থাকেন। ১০ বছর ধরে মুরগির খামারের মাধ্যমে সংসারে বাড়তি আয় করে জমিও কিনেছেন। তার খামারে এই প্রথম পালন করছেন বাউ মুরগি। এর আগে অনেক জাতের মুরগি পালন করলেও এত লাভের মুখ দেখেননি নাজমা। আট মাস আগে তিনশ বাউ মুরগির বাচ্চা নিয়ে শুরু করেন। এখন তার খামারে রয়েছে সাড়ে সাতশরও বেশি মুরগি। পর্যায়ক্রমে খামারের পরিধি বাড়ানোর চিন্তা করছেন তিনি।
নাজমা বেগম বলেন, ‘মাত্র ৪০ থেকে ৪২ দিনে এ মুরগির ওজন এক কেজি ছাড়িয়ে যায়। বাউ মুরগি পালনে কোনো সমস্যা নেই। চাহিদা বেশি থাকায় মুনাফাও হচ্ছে ভালো।’
নাজমা বেগমকে মুরগির খামারে সহায়তা করেন স্বামী স্কুলশিক্ষক মোকলেসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘খামারে পালন করা হলেও এর স্বাদ দেশি মুরগির মতোই। রোগবালাই কম। দ্রুত বর্ধনশীল। এই নতুন জাতের মুরগি ‘বাউ চিকেন’ দিনাজপুরে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। খামার থেকেই পাইকাররা এসে মুরগি নিয়ে যাচ্ছে।’
নাজমা বেগমের বাউ মুরগি খামারের সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন আরও অনেকেই। চিরিরবন্দর উপজেলার বিন্যাকুড়ি এলাকা থেকে খামার দেখতে আসা জামাল উদ্দিন জানালেন, ‘লোকমুখে শুনে খামার দেখতে এসেছি। দেখে ভালো লাগল। বেশ চাহিদা রয়েছে এই মুরগির। এই মুরগির খামার করব বলে ভাবছি।’
পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহায়তায় এই বাউ মুরগি লালনপালনের জন্য খামারিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করছে মহিলা বহুমুখী শিক্ষাকেন্দ্র। দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ রকম ৩০টি মুরগির বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠছে। নতুন জাতের এই মুরগি পালন করে পুরুষদের পাশাপাশি ভাগ্য বদলেছেন অনেক নারী।
এ বিষয়ে মহিলা বহুমুখী শিক্ষাকেন্দ্রের (এমবিএসকে) প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রাশেদুল আলম বলেন, ‘এ জাতের মুরগি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) গবেষকরা। সারা দেশের মতো দিনাজপুরেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ মুরগি। ইতোমধ্যে আমাদের খামারিদের কাছে এ মুরগি আস্থার তৈরি করেছে। খেতে সুস্বাদু ও উৎপাদন বেশি হওয়ার কারণেই খামারি এবং ভোক্তা পর্যায়ে এই মুরগির চাহিদা অনেক।’