× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘কালো সোনা’ চাষে আগ্রহ বাড়ছে

শিশির খাঁন, সদরপুর-চরভদ্রাসন (ফরিদপুর)

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪৬ এএম

আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:৫৩ পিএম

‘কালো সোনা’ চাষে আগ্রহ বাড়ছে

পেঁয়াজের সাদা কদম শুকিয়ে বের হয় কালো দানা বা বীজ, যার দাম আকাশছোঁয়া। তাই একে বলা হয় ‘কালো সোনা’। একটা সময় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর থাকলেও দিনে দিনে দেশে এই কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজবীজের আবাদ বাড়ছে। ফলন ভালো হওয়ায় ফরিদপুরের সদরপুর ও চরভদ্রাসনের চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অগ্রহায়ণ মাসে পেঁয়াজবীজের চাষ শুরু হয়। ফুল পাকা শুরু হয় চৈত্র মাসে। এখন ফুল পেকে গেছে, কয়েক দিন পরে তোলা হবে। দেশে পেঁয়াজবীজের চাহিদার ৪০ শতাংশ জোগান দেয় সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার চাষিরা।

সদরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৩৫৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজবীজের আবাদ হয়েছে, যা থেকে এবার প্রায় ১৯০ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে আবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় গত বছর পেঁয়াজবীজের আবাদ হয়েছিল ৩৫০ হেক্টরে। 

চরভদ্রাসন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে ১৭০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজবীজের আবাদ হয়েছে, যা থেকে এবার প্রায় ৯৫ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নে আবাদ হয়েছে। এ উপজেলায় গত বছর ১৩১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজবীজের আবাদ হয়েছিল। 

গতবারের তুলনায় এ বছর দুই উপজেলাতেই আবাদের পরিমাণ বেড়েছে। পেঁয়াজবীজ চাষে লাভবান হওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। এলাকার কৃষকসহ তরুণরাও এখন বীজ চাষে ঝুঁকে পড়েছে। এ ছাড়া সরকারের বিশেষ তদারকি থাকায় স্থানীয় কৃষি দপ্তরও কৃষকদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছে। এলাকার বিস্তীর্ণ মাঠ ভরে উঠেছে পেঁয়াজের ফুলে।

সদরপুরের সদর ইউনিয়নের পূর্ব শ্যামপুর এলাকার আব্দুল হাই মোল্লা গত ২০ বছর ধরে পেঁয়াজবীজ চাষাবাদ করছেন। এক বিঘা দিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। এবার তিনি ৩০ বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। আব্দুল হাই মোল্লা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই দেখতাম যে বাড়ির সবাই পেঁয়াজবীজের চাষ করে। বাবা মারা যাওয়ার পরে আমিও আবাদ শুরু করি, এতে প্রথম বছরেই ভালো আয় হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’ 

পশ্চিম শ্যামপুর গ্রামের কৃষক শাহজাহান মৃধা বলেন, ‘এই বছর পেঁয়াজবীজের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্ত এবার আমাদের হাত দিয়ে পরাগায়ন করতে হচ্ছে। ভারত থেকে পেঁয়াজবীজ আমদানির আশঙ্কাও রয়েছে। যদি ভারত থেকে পেঁয়াজবীজ আমদানি করা হয় তাহলে সার্বিকভাবেই ক্ষতি ডেকে আনবে।’

সদরপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, ‘এই উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজবীজের আবাদের উপযোগী। তাই এখানে ব্যাপকহারে আবাদ হচ্ছে। মূলত সদরপুরে দুই ধরনের পেঁয়াজের আবাদ হয়।’

চরভদ্রাসনের বিএস ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক হামেদ মৃধা বলেন, ‘এ বছর মৌমাছির অভাবে পেঁয়াজবীজের গাছে পরাগায়নের মাত্রা কমে গেছে। নিরুপায় হাতের তালু বুলিয়ে এক ফুলের রেণুর সঙ্গে আরেক ফুলের রেণুর পরাগায়নের পন্থাও বেছে নেন অনেকে। কিন্তু এতে প্রাকৃতিক পরাগায়নের মতো ভালো ফলন হয়নি। আর তাই গত বছরের চেয়ে বেশি জমিতে চাষ হলেও এবার উৎপাদন কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।’ 

চরভদ্রাসন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘পেঁয়াজবীজ কৃষককে আবাদে যত্নশীল হতে হয়। কোন রকম অযত্ন হলে ফলন নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষেতে বীজের আবাদ শুরু হয় নভেম্বর-ডিসেম্বরে, আর ফলন পাওয়া যায় এপ্রিল-মে মাসের দিকে। কয়েক দিন আগে শিলা বৃষ্টির কারণে বীজের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আরেকটি সমস্যা মৌমাছির অভাবে কৃষকদের হাত দিয়ে পরাগায়ন করতে হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ফলন ভালো হবে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পেঁয়াজবীজের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে জেলার কৃষকরা এবার সাড়ে ৭ মেট্রিক টন বীজ উৎপাদন করবে। এর মধ্যে সদরপুর ও চরভদ্রাসনের কৃষকরা পেয়াজবীজের আবাদ করেছে ২৮৫ হেক্টর জমিতে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭৫ কোটি টাকা।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা