× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

তরমুজ তো লাল, মিষ্টি কেন কম

ফারুক আহমাদ আরিফ

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২১ এএম

আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:১৬ পিএম

বিভিন্ন জেলা থেকে নদীপথে আসছে ট্রলারভর্তি তরমুজ। পুরান ঢাকার বাদামতলী ঘাট থেকে তোলা।  আরিফুল আমিন

বিভিন্ন জেলা থেকে নদীপথে আসছে ট্রলারভর্তি তরমুজ। পুরান ঢাকার বাদামতলী ঘাট থেকে তোলা। আরিফুল আমিন

কথা একটাই- ‘ভেতরটা কিন্তু টকটকে লাল হতে হবে। আগে কেটে দেখাও, তারপর দাম।’ এ হচ্ছে তরমুজের হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার চিরচেনা কথোপকথন। বেশিরভাগ বিক্রেতাও এই শর্ত মেনে নিয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে কেটে তরমুজের ফালি বের করে ‘লাল’-এর পরীক্ষা দেন। তরমুজের ভেতরটা লাল হলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই খুশি। আর না হলে- বিষয়টা কখনও কখনও অপ্রীতিকর পর্যায়েও গড়ায়। বর্তমানে ছোটবড় নানা আকারের তরমুজের ঢল নেমেছে বাজারে। দামও অনেকটা কমেছে। আর তরমুজের ভেতরের টকটকে লাল রঙটাও বেশ চোখ ধাঁধাচ্ছে। সবকিছু ঠিকই আছে, তারপরও কোথায় যেন একটু কিন্তু কিন্তু ব্যাপারও রয়ে যাচ্ছে। প্রায়ই এমন আক্ষেপ শোনা যাচ্ছে- তরমুজ তো লাল, কিন্তু মিষ্টি ভাবটা যেন অন্যবারের চেয়ে একটুখানি কম। ঠিক যতটা হতে পারত ততটা হচ্ছে না। কথাটা কি ঠিক? যদি তাই হয়, তাহলে এর কারণ-ই বা কী? 

নানাভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার তরমুজে মিষ্টতা কিছুটা কম হওয়ার আক্ষেপ একেবারে অমূলক নয়। কারণ হিসেবে জানা গেছে, এ বছর রোজার কারণে ভরা মৌসুম শুরুর আগেই অনেক বেশি পরিমাণে অপরিপক্ব তরমুজ কেটে বাজারে তোলা হয়েছে। সেগুলোর ভেতরের রঙ লাল দেখালেও সেভাবে মিষ্টি হয়ে উঠতে পারেনি। আবার একই ক্ষেতে সব তরমুজ একসঙ্গে পাকেও না। তারপরও বাজারে ভালো দাম থাকলে পাকা তরমুজের সঙ্গে অনেক কৃষক অপরিপক্ব তরমুজ, যেগুলো আরও কয়েকটা দিন গাছে থাকলে মিষ্টি বেশি হতো, সেগুলোও কেটে ফেলছেন। এই তরমুজগুলো ক্রেতাকে পরিপূর্ণ স্বাদ দিতে পারছে না। আরও একটি কারণ হচ্ছে, এবার মার্চেই বেশ কয়েকদিন ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। ক্ষেতের মাটি অতিরিক্ত পানি শোষণ করার ফলে গাছের তরমুজের মিষ্টতা কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে।

হর্টিকালচার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরমুজ ফুল থেকে শুরু করে পরিপক্ব হতে সময় লাগে ৩৫ থেকে ৪০ দিন। অথচ বেশি দামে বিক্রির জন্য ২০ থেকে ২৫ দিন বয়সি তরমুজ কেটে বাজারজাত করা হচ্ছে। বাজারে এসব তরমুজ এলেও অনেক ক্রেতাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে দামও অনেকটা পড়ে গেছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কে জে এম আব্দুল আউয়াল জানান, তরমুজ আকারে বড় হলেই সেটি পেকে গেছে তা ধরে নেওয়া যাবে না। আবার ছোট হলেও সেটি অপরিপক্ব, সে কথাও বলা যাবে না। তরমুজের ম্যাচুরিটি ইনডেক্স আছে। এ ছাড়া দিন গণনা করে বোঝা যায় পরিপক্ব হয়েছে কি না? দিন গণনার ক্ষেত্রে ফুল থেকে শুরু করে পরিপক্ব হতে সময় দরকার ৩৫ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ দিন। এই সময়ের আগে কেউ যদি গাছ থেকে তরমুজ কেটে ফেলে সেটি সাদা হবে। আমাদের দেশে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন তরমুজ আবাদ হয়। গ্রীষ্মকালে যখন মাটিতে রস থাকে না, বাতাসে আর্দ্রতা থাকে না, তখন তরমুজের গোড়ায় গোড়ায় রস থাকে। তখন ফার্টিলাইজার ম্যানেজমেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরিপক্ব হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে তরমুজ বড় করার জন্য নাইট্রোজেন দিতে হয়। সেক্ষেত্রে কৃষক নিজেও নাইট্রোজেন দিতে পারে। আবার মেঘ ডাকা বৃষ্টি হলে সেখানেও নাইট্রোজেন থাকে। এই মৌসুমে বাতাসে যে পরিমাণ দূষণ থাকে তাতে কিছুটা এসিডও আসে। এ অবস্থা হলে পাকা তরমুজ আবার কাঁচা হয়ে বড় হতে শুরু করে। 

তিনি আরও বলেন, তরমুজের মাটিতে লেগে থাকা অংশ সাদা না হয়ে একটু কমলা রঙের হলে বুঝতে হবে তা পরিপক্ব হয়েছে। একেবারে প্লেন হবে না বরং একদিকে একটু উঁচু হয়ে যাবে। ইংরেজি ডি অক্ষরের আকার দাঁড়াবে অর্থাৎ লম্বা কম ও প্রস্থ বেশি হবে। এসব চিহ্ন থাকলেই বুঝতে হবে তরমুজ পরিপক্ব হয়েছে।

অভিজ্ঞ এই কৃষিবিদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে আরও বলেন, তরমুজের মিষ্টতা তৈরি হয় পুরোনো পাতা থেকে। তরমুজের পুরোনো পাতা মিষ্টতা তৈরিতে সহায়তা করে। কেননা সূর্যালোক থেকে সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে কার্বোহাইড্রেট সংগ্রহ করে তা তরমুজে জমা করে থাকে এই পুরোনো পাতা। এতে মিষ্টতা বাড়ে। ইউরিয়া সার প্রয়োগ করলে পুরোনো পাতায় সালোকসংশ্লেষণ মাত্রা বেড়ে যায়। এর ফলেও মিষ্টতা বাড়ে। পরিপক্ব তরমুজে যে মিষ্টতা থাকে অপরিপক্ব তরমুজে সেটা পাওয়া যায় না। আবার বৃষ্টি হলে তরমুজে পানির পরিমাণ বেড়ে যায়। এতেও মিষ্টতা কমে। নতুন পাতা বেশি গজানোও তরমুজের মিষ্টতা কম হওয়ার একটি কারণ। কেননা তরমুজে যে কার্বোহাইড্রেট জমা থাকে নতুন পাতা সেগুলো নিজেদের খাদ্যের জন্য গ্রহণ করে। যে কারণে মিষ্টতা কমে যায়। 

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, রাজধানীর বাজারগুলোতে রমজানের আগে তরমুজের কেজি ছিল ৫০ টাকা। পহেলা রমজান থেকে সেই তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। অতিরিক্ত দাম পাওয়ার লোভে পাইকাররা আধা পাকা বা অপরিপক্ব তরমুজ বাজারজাত করেছে। এসব কারণে ক্রেতারাও মুখ ফিরিয়ে নেন। সপ্তাহখানেক যাবৎ তরমুজের কেজি নেমে এসেছে ৪০ টাকায়।

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর নীলক্ষেত, কারওয়ান বাজার ও কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় দেখা গেছে, প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে। কোথাও কোথাও ছোট আকারের (আড়াই-তিন কেজি) তরমুজ প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। 

নীলক্ষেত এলাকার তরমুজ বিক্রেতা ছাইদুল হোসেন বলেন, রমজানের শুরুতে তরমুজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। বর্তমানে যে গরম পড়ছে তাতে তরমুজের বিক্রি বাড়ার কথা ছিল, কিন্তু উল্টো কমে গেছে। কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা রবিউল আলম বলেন, বড় আকারের তরমুজের চাহিদা বেশি। একটি তরমুজ যত বড় হবে তার চাহিদাও তত বেশি। এ মৌসুমে ছোট আকারের তরমুজের ভেতরে অনেক সময় সাদা থাকে। ক্রেতারা কেনার সময় কেটে নেয়। সাদা থাকলে আর কেনে না। এতে উল্টো আমাদেরও আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা