রেদওয়ানুল হক
প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২২ এএম
আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১১:২৬ এএম
কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফাইল ছবি
সুদহার বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দেশের ব্যাংক খাতে আমানত ও ঋণে বিপরীতমুখী প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বেশি সুদ পেয়ে ব্যাংকে টাকা জমা রাখা বাড়িয়েছেন আমানতকারীরা। আবার অধিক সুদে ঋণ গ্রহণ কমিয়েছেন উদ্যোক্তারা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ব্যাংক আমানতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০০ শতাংশ। কিন্তু ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে ৪৪ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ব্যাংক খাতের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে মাত্র ৫৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। অর্থাৎ ঋণ বিতরণ কমেছে ৪৪ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা বা ৪৪ দশমিক ১৪ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মাধ্যমে বাজারে টাকার প্রবাহ কমিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তাই ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণ কমেছে। তা ছাড়া সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন কমেছে। একই সঙ্গে সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী নীতি অনুসরণ করছে সরকার। তাই সরকারের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণের প্রয়োজন হচ্ছে না।
মূলত সরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হওয়ায় চলতি অর্থবছরে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এ সময়ে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহও গত অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে।
সরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণ হলোÑ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম আট মাস জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। অর্থবছরের আট মাস বিবেচনায় এটি গত ১০ বছরের মধ্যে এডিপির সর্বনিম্ন বাস্তবায়নের হার।
তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সরকারি খাতে ব্যাংক ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা ঋণাত্মক হয়েছে ১৭ হাজার ২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এ খাতে ঋণ যায়নি। বরং ১৭ হাজার ২৯ কোটি টাকা মূল স্থিতি থেকে কমেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে সরকারি খাতের ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের জুন শেষে ছিল ৪ লাখ ৩২ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা।
অপরদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে বেসরকারি খাতের ঋণ বিতরণ ১ হাজার ১০৩ কোটি টাকা কমেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৭৩ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এবারের মুদ্রানীতির লক্ষ্য ছিল ব্যাংক ঋণের প্রবাহ কমানো। এর মাধ্যমে টাকাকে অধিক দামি করা। বাস্তবে তাই ঘটেছে। ঋণের সুদহার ধারাবাহিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। এতে আগের চেয়ে টাকা কিছুটা দামি হয়েছে। আর টাকা দামি হয়ে যাওয়ায় ঋণ নেওয়া থেকে অনেকে বিরত থাকছে।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের আমানতের বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ৫০ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছিল ১৬ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আগের বছরে একই সময়ের চেয়ে আমানত বেড়েছে ৩৫ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা বা ২০০ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতের আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪৫ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা।
জানতে চাইলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, এখন ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করতে পারছে সাড়ে ১৩ থেকে সাড়ে ১৪ শতাংশ সুদে। যে কারণে বেশিরভাগ ব্যাংক আমানতের সুদহার বৃদ্ধি করেছে। এ কারণে আমানত বেড়েছে। অপরদিকে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় অনেক উদ্যোক্তা ঋণ গ্রহণ কমিয়েছে। তা ছাড়া এলসি খোলা অনেক কমেছে। বেশিরভাগ আমদানি-পরবর্তী অর্থায়ন ব্যাংকঋণ থেকেই হয়। সার্বিকভাবে ঋণ বিতরণ কমে গেছে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। তাই ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। নতুন বিনিয়োগ বন্ধ রেখেছেন বেশিরভাগ উদ্যোক্তা। তাই ঋণের চাহিদা কমে গেছে।