× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কম প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতির আভাস বিশ্বব্যাংকের

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৫৯ এএম

আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩৮ এএম

কম প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতির আভাস বিশ্বব্যাংকের

বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে। আগের অর্থবছরে এ হার ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া চলতি বছর মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। পাশাপাশি খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া মানুষের কেনার সক্ষমতাও আরও কমবে।

‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ বা ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন হালনাগাদ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, কোভিড-১৯ মহামারি থেকে প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি, লেনদেন ভারসাম্যে ধারাবাহিক ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মহামারি-পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যাহত হচ্ছে।

বছর শেষে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ

প্রতিবেদনে মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির রাশ আরও টেনে ধরা দরকার বলে অভিমত দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। কর্মসংস্থান বাড়াতেও নজর দেওয়ার বিশেষ তাগিদ দেওয়া হয়েছে এতে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক এ-ও বলছে, বছর শেষে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে বাংলাদেশ। ভারতের পরই বাংলাদেশ সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বেড়ে ৫ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

এদিকে কঠোর মুদ্রানীতির পরও বিনিয়োগ পরিস্থিতি, কর্মসংস্থানসহ সার্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা কীভাবে বজায় রাখা সম্ভব, সে বিষয়টি প্রতিবেদনে স্পষ্ট নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ও অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে মুদ্রানীতি কঠোর করলে হবে না। মুদ্রানীতিতে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, বেসরকারি বিনিয়োগ তার চেয়েও কমে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এসব করা হচ্ছে। কিন্তু কেবল মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির প্রধান কারণ বিনিময় হার। বিনিময় হারে স্থায়িত্ব আনতে হবে। এতে পণ্যের দাম সাময়িকভাবে বেড়ে গেলেও এরপর স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে। তখন আর মূল্যস্ফীতি হবে না।’

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে অবৈধ চ্যানেল বন্ধের পাশাপাশি ক্রয়-বিক্রয়ের বড় ব্যবধান দূর করা অপরিহার্য বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয়ের তফাৎ কমাতে না পারলে বাজার স্থিতিশীল হবে না। এতে মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে সুফল মিলবে না।’ 

প্রবৃদ্ধি কমছে যেসব কারণে

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ; ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ তাদের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের পর টানা দুই অর্থবছর দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে ৬ শতাংশের নিচে নামতে যাচ্ছে।

প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পেছনে যেসব বিষয় কাজ করেছে তা তুলে ধরেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি জানিয়েছে, ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে; সেই সঙ্গে তারল্যের রাশ টেনে ধরা, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, আমদানি বিধিনিষেধ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিজনিত কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ব্যাহত হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আরও মন্থর হয়েছে বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বিনিয়োগে মন্দাবস্থা তৈরি হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের উচ্চ হারসহ দুর্বল নিয়ন্ত্রণের কারণে এই খাত চাপের মুখে আছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

কাঠামোগত আর্থিক সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে ষাণ্মাষিক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আর্থিক সংস্কার ও মুদ্রার একক বিনিময় হার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা জরুরি। মুদ্রার বিনিময় হারে অধিকতর নমনীয়তা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অর্থনীতির বৈচিত্র্য এবং অর্থনীতির মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে কাঠামোগত সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করে। তা ছাড়া রাজস্ব নীতি সংস্কার টেকসই প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সাহায্য করতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী এই সংস্থাটি জানাচ্ছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে এ দেশের সাধারণ ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এর ফলে বিনিয়োগে তারল্য সংকুচিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান সুদের হার, আমদানি বিধিনিষেধ এবং জ্বালানির দামের ঊর্ধ্বমুখী সংশোধনের ফলে খরচ বৃদ্ধির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও কমেছে।

ব্যাংক খাতের সংস্কারের পরামর্শ দিয়ে বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে সংস্কার জরুরি। পাশাপাশি ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকা দরকার। সংস্থাটির মতে, সম্পদের মান ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে ব্যাংক একীভূত করা উচিত।

বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক জানান, বাংলাদেশের শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মূলনীতি দেশটিকে অতীতের অনেক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। আর্থিক সংস্কার দেশটিকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি পরিস্থিতি

বিশ্বব্যাংক জানায়, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে ভারত। এরপরই জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেশ হবে বাংলাদেশ। অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ ৫.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এরপর ভুটান ৪.৯ শতাংশ, মালদ্বীপ ৪.৭ শতাংশ, নেপাল ৩.৩ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ২.২ শতাংশ এবং পাকিস্তান ১.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় সামগ্রিকভাবে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে বলে জানায় সংস্থাটি।

তথ্য বলছে, ২০১৭ সালেও ভারতের মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি ছিল। এরপর পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ধারাবাহিকভাবে ভারতের চেয়ে অনেক বেশি হয়েছিল। ২০২২ সাল থেকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আবার বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হয়েছে।

প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওনসর্গ জানান, দক্ষিণ এশিয়া তার জনশক্তিকে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদি এই অঞ্চলটি অন্যান্য উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির মতো কর্মক্ষম বয়সের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নিযুক্ত করে, তবে এর আউটপুট ১৬ শতাংশের বেশি হতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইসার বলছেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা স্বল্পমেয়াদে উজ্জ্বল থাকবে। কিন্তু ভঙ্গুর আর্থিক অবস্থান এবং ক্রমবর্ধমান জলবায়ু ধাক্কায় কালো মেঘ থাকবে। এজন্য প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।

তিনি জানান, এই অঞ্চলের দেশগুলোকে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য নীতি গ্রহণ করতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার কর্মক্ষম বয়সি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের অঞ্চলের তুলনায় বেশি। কিন্তু ২০০০ সাল থেকে কর্মরত কর্মজীবী জনসংখ্যার অংশ কমে আসছে। ২০২৩ সালে অন্যান্য উদীয়মান উন্নয়নশীল অর্থনীতি অঞ্চলের ৭০ শতাংশের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ায় কর্মসংস্থানের অনুপাত ছিল ৫৯ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়াই একমাত্র অঞ্চল যেখানে কর্মরত বয়সি পুরুষদের হার গত দুই দশকে কমেছে এবং এই অঞ্চলে সবচেয়ে কম কর্মজীবী নারী রয়েছে।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা