× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পোশাক শিল্প

আরও ২০০০ কোটি টাকা প্রণোদনা চান মালিকরা

জোনায়েদ মানসুর

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৩৫ এএম

আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪ ১১:১৭ এএম

বেতন, ঈদ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির বকেয়া পাওনার দাবিতে সোমবার গাজীপুরের কোনাবাড়ী জরুন এলাকায় কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড নামের পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ । প্রবা ফটো

বেতন, ঈদ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির বকেয়া পাওনার দাবিতে সোমবার গাজীপুরের কোনাবাড়ী জরুন এলাকায় কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড নামের পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভ । প্রবা ফটো

দেশে তৈরি পোশাক কারখানায় প্রতি ঈদের আগে অনেক শ্রমিকের বেতন-বোনাস বকেয়া থাকে। ঈদ এলে বেতন-বোনাসের দাবিতে সড়কে নামতে বাধ্য হন পোশাকশ্রমিকরা। এবার এমনটি যেন না ঘটে সেজন্য সরকারের কাছে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার বাড়তি ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। 

জানা গেছে, রপ্তানির বিপরীতে ক্যাশ ইনসেনটিভ বা নগদ প্রণোদনার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা সরকারের কাছে পাওনা পোশাক রপ্তানি কারখানার মালিকদের। এ টাকা ঈদের আগে ছাড় না হলে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়ায় সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্রুত এই অর্থ ছাড়ে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। 

রবিবার (৩১ মার্চ) পোশাক খাতের দুই সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর নেতারা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়াকে জানান। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর নবনির্বাচিত সভাপতি এসএম মান্নান কচি, পরিচালক রাজীব চৌধুরী এবং বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।

জানতে চাইলে বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এবার অবস্থা একটু খারাপ, নানা রকম সংকট চলমান। বাইরের অর্ডার কম, পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল বেড়েছে। এত কিছুর পরও শ্রমিকদের মুখে হাসি ফোটাতে কাজ করছি। সরকারের কাছে রপ্তানির বিপরীতে ক্যাশ ইনসেনটিভ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা পাওনা। শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে এ টাকা চাচ্ছি। গত বৃহস্পতিবার ২ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেয়েছি। এ টাকা দিয়ে আমরা কিছুই করতে পারব না।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি নিয়ে আলাপ হয়েছে। আমাদের দাবি ৪ হাজার কোটি টাকাই পাওয়ার। দুই-এক দিনের মধ্যে আরও ২ হাজার কোটি টাকা যেন দেয় সে অনুরোধ জানাই। বাকি টাকা পেতে অর্থ সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, সংকটের কারণে এই টাকা ছাড় করা যাচ্ছে না। তবে তারাও চেষ্টা করছেন।’ 

মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ঈদের আগে টাকা না পেলে অনেক কারখানার পক্ষে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা কঠিন হবে। সেক্ষেত্রে শ্রমিক অসন্তোষ হতে পারে। এখনই বিভিন্ন কারখানায় কিছুটা ঝামেলা হচ্ছে।’  

ঈদের আগে বেতন-বোনাস না দিতে পারলে শ্রমিকদের অসন্তোষ প্রকট আকার ধারণ করবে উল্লেখ করে বিজিএমইএ পরিচালক ও ইয়াং ফর এভার টেক্সটাইলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজীব চৌধুরী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, সরকারের কাছে নগদ প্রণোদনার টাকা পেয়ে গেলে শ্রমিক ভাই-বোনদের বেতন-বোনাস দিয়ে একসঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারব।’ 

এদিকে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে শিল্প পুলিশের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আসন্ন ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে সমস্যায় পড়তে পারে ৪১৬টি পোশাক শিল্প কারখানা। যার অর্ধেকের বেশি বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত। আর্থিক সংকট, পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ না থাকাসহ নানা কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে এই কারখানাগুলো। শিল্প পুলিশের হিসাবে দেশে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা ৪১৬টি। তার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ১৭১টি, বিকেএমইএর ৭১টি, বিটিএমএর ২৯টি, বেপজার ১৩টি এবং এসবের বাইরেও ১৩২টি কারখানা রয়েছে। ৩ হাজার ৬০০টি কারখানার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে শিল্প পুলিশ। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেতন-বোনাস নিয়ে কিছু কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের খবরও পাওয়া গেছে। 

এদিকে ঈদের ছুটির আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিতে হবে উল্লেখ করে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঈদের আগে কারখানাগুলো কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারবে না। এজন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০ মার্চ এক সভায় নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়নি। মালিকরা কখন দিতে পারবেন, কখন দিতে পারবেন না, সেটা আমরা জানি না। আমরা বলেছি, ঈদের ছুটির আগে দিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য রেশনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা বা ভাঙচুর চাই না।’ এরই মধ্যে শ্রমিকদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে জানান তিনি। 

২০২৪ সালকে দেশের পোশাক শিল্পের জন্য আরও কঠিন উল্লেখ করে বিজিএমইএ সহসভাপতি আব্দুল্লাহ হীল রাকিব বলেন, বর্তমান অবস্থায় ভালো কারখানাগুলোর মালিকরাও ভোগান্তিতে পড়ছেন। কারখানা মালিকরা কখনও বেতন-বোনাস বকেয়া রাখতে চান না। সবাই চান ঈদের আগে অন্তত শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করে তাদের ঈদের ছুটি দিতে। 

গাজীপুরে বেতন-বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ, কর্মবিরতি

এদিকে গতকাল সোমবার গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ি জরুন এলাকায় বকেয়া বেতন, ঈদ বোনাস ও বার্ষিক ছুটির টাকার দাবিতে কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড নামের একটি কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা কোনাবাড়ি-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে রাখেন।

কারখানা শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ জানায়, কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড নামের সুতা তৈরির কারখানার শ্রমিকদের গত ফেব্রুয়ারির বকেয়া বেতন, বকেয়া ছুটির টাকা ও ঈদ বোনাস দেয়নি কারখানা কর্তৃপক্ষ। কারখানায় প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক আছে। যাদের মধ্যে প্রায় এক হাজার বধির ও প্রতিবন্ধী। বেতন-বোনাসের দাবিতে গতকাল সকাল ৬টা থেকে কারখানা শ্রমিকরা কোনাবাড়ি-কাশিমপুর আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করেন। শিল্প পুলিশ ও থানা পুলিশ শ্রমিকদের বুঝিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। এদিকে কর্তৃপক্ষ কারখানার সামনে একটি নোটিস দিয়েছে। তাতে লেখা ৪ এপ্রিল বার্ষিক ছুটির টাকা এবং ৭ এপ্রিল বোতন-বোনাস দেওয়া হবে। ওই নোটিসে কারখানা কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর না থাকায় শ্রমিকরা তা ছিঁড়ে ফেলে। 

কারখানার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুমন মিয়া বলেন, শ্রমিকরা ফেব্রুয়ারির বেতন ও বোনাস পাবেনÑ এ ঘোষণা দিয়েছি আমরা। কিন্তু তারা যদি কাজ না করেন তাহলে বেতন-বোনাস কীভাবে দেব।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের কাশিমপুর জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক চন্দ্র মজুমদার বলেন, কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারির বেতন এবং ঈদ বোনাস কোনোটিই দেয়নি। কারখানাটিতে অনেক শারীরিক প্রতিবন্ধী শ্রমিক আছে। আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি শ্রমিকদের পাওনা দেওয়ার জন্য। 

বেতন-বোনাস ও বকেয়ার দাবি গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্টের

পোশাকশ্রমিকদের চলতি মাসের বেতন ও উৎসব বোনাসসহ সব বকেয়া অবিলম্বে পরিশোধের দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট। গত ২৯ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। একই সঙ্গে তারা শ্রম আইনের কার্যকর সংশোধনের মাধ্যমে অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া ছাঁটাই-নির্যাতন বন্ধ ও মজুরি আন্দোলনে ৪ জন শ্রমিক নিহতের জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেছেন। এছাড়া নিহতদের পরিবারকে আইএলও কনভেনশন ১২১ অনুসারে আজীবন আয়ের মানদণ্ডে ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান। শ্রমিক নেতারা আরও বলেন, বর্তমান শ্রম প্রতিমন্ত্রীও তার পূর্বসূরিদের পথ অনুসরণ করছেন। ৪ এপ্রিলের পর থেকে যদি সরকারি অফিসের কর্মকর্তারা ছুটিতে চলে যান আর ৯ বা ১০ এপ্রিলে গার্মেন্টস ছুটি দেওয়ার আগে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধ না করা হয়, তাহলে শ্রমিকরা প্রতিকারের জন্য কার কাছে যাবে? কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে? তারা বলেন, অবিলম্বে শ্রমিকদের পূর্ণ ঈদ বোনাস ও বেতন পরিশোধের জোর দাবি জানাচ্ছে শ্রমিক ফ্রন্ট।

খোলা থাকবে ব্যাংক

পোশাকশ্রমিকদের বেতন, ঈদ বোনাস, ভাতা ও রপ্তানি বিল পরিশোধের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ৫, ৬ ও ৭ এপ্রিল তফসিলি ব্যাংকের শাখা খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন (ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন) এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা থাকবে।  

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা