× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

এডুকেশন ওয়াচ-২০২৩ এর জরিপ

দিন দিন বাড়ছে শিক্ষার ব্যয়

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১১:৪৭ এএম

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪ ২১:৪৯ পিএম

ফাইল ফটো

ফাইল ফটো

দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। ২০২২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর পেছনে পরিবারের বার্ষিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা। মাধ্যমিকে ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ২০২৩ সালে এসে বেড়েছে সেই ব্যয়। পরিসংখ্যান বলছে, ওই বছরের প্রথম ছয় মাসেই আগের বছরের তুলনায় প্রাথমিকে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৫১ শতাংশ বেড়েছে। এই ছয় মাসে একটি পরিবারে ব্যয় হয়েছে প্রাথমিক পর্যায়ে ৮ হাজার ৬৪৭ টাকা আর মাধ্যমিকে ২০ হাজার ৭১২ টাকা। এই বাড়তি ব্যয়ের বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে কোচিং-প্রাইভেট এবং নোট গাইডকে। 

এ চিত্র উঠে এসেছে এডুকেশন ওয়াচ-২০২৩-এর জরিপে। গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শিক্ষাকেন্দ্রিক কার্যক্রম ও গবেষণায় যুক্ত বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণসাক্ষরতা অভিযান এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ‘বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা : মহামারি-উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক এই গবেষণায় সারা দেশের ৮ বিভাগের ১৬টি জেলার মধ্য থেকে ২৬টি উপজেলা ও ৫টি সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গবেষণার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট ৭ হাজার ২২৫ জনের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।

বেড়েছে শিক্ষার ব্যয়

পঞ্চম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের ভিত্তিতে করা এ জরিপে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য বার্ষিক পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা। মফস্বল এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার্থী প্রতি বার্ষিক পারিবারিক ব্যয় ছিল ১০ হাজার ৬৩৭ টাকা। আর শহরাঞ্চলে ছিল ১৮ হাজার ১৩২ টাকা। কিন্তু পরের বছর ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসেই প্রাথমিক পর্যায়ে এই খরচ বেড়েছে ২৫ শতাংশ। ছয় মাসে ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৬৪৭ টাকা।

২০২২ সালে মাধ্যমিক স্তরের একজন শিক্ষার্থীর জন্য পরিবারের বার্ষিক ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। মফস্বলে ছিল ২২ হাজার ৯০৯ এবং শহরাঞ্চলে ৩৫ হাজার ৬৬২ টাকা। কিন্তু গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এই খরচ বেড়েছে ৫১ শতাংশ। ছয় মাসেই ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার ৭১২ টাকা। 

কোচিং-প্রাইভেট, নোট গাইড ব্যবহার বেড়েছে

গবেষণার তথ্য বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে ৫৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও মাধ্যমিকে ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী করোনা মহামারির পরে তাদের নতুন শ্রেণির পাঠ-অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে। কিন্তু বাকি প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থীরই পাঠ বুঝতে অসুবিধা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানে যেভাবে তাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তাতে অনেক পাঠই তারা বুঝতে পারেনি। ফলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের তিন-চতুর্থাংশের বেশি শিক্ষার্থী টিউটরের সহায়তা নিয়েছে বা কোচিং সেন্টারে গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়ের কাছ থেকে একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। শ্রেণিকক্ষে যথাযথ পাঠদান না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা গাইড বইয়ের ওপর অধিক নির্ভরশীল ছিল। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় এই নির্ভরতার হার ছিল যথাক্রমে ৯২ ও ৯৩ শতাংশ।

ব্লেন্ডেড লার্নিং নিয়ে চ্যালেঞ্জে শিক্ষকরাও 

ব্লেন্ডেড লার্নিং বা প্রযুক্তিগত শিক্ষা (অনলাইন ও সশরীরে) দিতে খোদ শিক্ষকরাও নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন বলে উঠে এসেছে এই জরিপে। এজন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সম্পদের সীমাবদ্ধতাকে দায়ী করছেন তারা। শিক্ষকদের দুই-তৃতীয়াংশই জানিয়েছে, ব্লেন্ডেড লানিং অ্যাপ্রোচ সম্পর্কে তাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। এজন্য প্রশিক্ষণকে জোরদার করতে বলেছেন তারা।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের তিন-চতুর্থাংশ প্রাথমিক ও ৮৭ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি বা দুটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রয়েছে। কিন্তু ইন্টারনেটের বাজেটের বরাদ্দে অপ্রতুলতা, অনলাইন সংযোগ, শিক্ষামূলক বিষয়বস্তু ব্যবহার এবং ডিজিটাল শিক্ষার উদ্যোগের অন্তরায় হয়ে উঠেছে বলে মনে করেন তারা। ইন্টারনেট সংযোগের বাজেটের ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষকদের দুই-তৃতীয়াংশ এবং মাধ্যমিক শিক্ষকদের ৪৩ শতাংশ জানিয়েছে, বাজেট বরাদ্দ অপর্যাপ্ত। 

ঝরে পড়া ও মাদ্রাসায় স্থানান্তরের প্রবণতা বেড়েছে 

করোনার সময় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে পুনরায় খোলার পর আর ফিরে আসেনি। ২০২৩ সালে এসে দেখা গেছে, ২০২০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ত এমন শিক্ষার্থীদের ৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করত এমন শিক্ষার্থীদের ৬ শতাংশ ঝরে পড়েছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বর্তমানে প্রাথমিক স্কুল বয়সি শিশুদের ৪১ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের ৪৯ শতাংশ বিভিন্ন কাজ বা শিশুশ্রমে নিয়োজিত আছে।

ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তারা বিদ্যালয়ে ফিরতে আগ্রহী কি না? জবাবে প্রাথমিক স্তরের ৫৭ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বলেছে, তারা আর বিদ্যালয়ে ফিরতে আগ্রহী নয়। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীরা বর্তমানে কী করে, সেটিও জানার চেষ্টা করা হয়েছে এই গবেষণায়। তাতে প্রাথমিক স্কুল বয়সি শিশুদের ৪১ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের ৪৯ শতাংশ বলেছে তারা কাজ বা শিশুশ্রমে নিয়োজিত।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়া মেয়েশিশুদের অর্ধেকের বেশি বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। একটি ছোট্ট অংশ বলেছে, তারা গৃহস্থালির কাজে নিয়োজিত এবং অন্যরা বলেছে তারা কিছুই করছে না।

করোনা মহামারির কারণে বিদ্যালয় স্থানান্তরের বিষয়টিও গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০২০ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদ্রাসায় স্থানান্তরের একটি প্রবণতা দেখা গেছে। মাধ্যমিক স্তরের তুলনায় প্রাথমিক স্তরে এ প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি (৬ দশমিক ৪ শতাংশ) ছিল। এর কারণ হিসেবে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অভিভাবক ধর্মীয় কারণকে প্রধান বিবেচ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এক-পঞ্চমাংশ বলেছে মাদ্রাসা বাড়ির কাছে হওয়ায় এবং মহামারি চলাকালে তা খোলা থাকায় এবং মূলধারার স্কুলগুলো তখন বন্ধ থাকায় তারা সন্তানের প্রতিষ্ঠান বদল করেছে।

করোনা-পরবর্তী সময়ে বেড়েছে মোবাইল আসক্তি

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাথমিকের ৪১ দশমিক ১ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী করোনার পর মোবাইল ব্যবহার করছে। এদের মাত্র ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করছে, বাকি ৭৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ অন্য কাজে মোবাইল ব্যবহার করছে। একইভাবে মাধ্যমিকে শিক্ষার বাইরে মোবাইল ব্যবহার করছে ৫৩ দশমিক ৮ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা

গতকাল এই প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন এডুকেশন ওয়াচের মুখ্য গবেষক ড. মনজুর আহমদ, গবেষণার পর্যালোচক আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী, গবেষক দলের সদস্য সৈয়দ শাহাদাৎ হোসেন, মো. আহসান হাবিব, ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ খরচের বড় অংশই চলে যায় টিউশনি বা কোচিং সেন্টারে। এছাড়া বাকি খরচ হয় গাইড বইসহ সহায়ক বিভিন্ন সামগ্রী, যাতায়াত, খাবার, শিক্ষা উপকরণ (বই, খাতা, কলম), স্কুলের বিভিন্ন ফি এবং এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজে।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, গবেষণা প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে দেবেন। গবেষণাকালে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধিরাও যুক্ত ছিলেন এবং তাদের মতামতও নেওয়া হয়েছে।

মুখ্য গবেষক ও শিক্ষাবিদ ড. মনজুর আহমদ বলেন, ২০২২ সালের পর ৪ দশমিক ৫ শতাংশ প্রাথমিকে এবং ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিকে নেই। সরকারের যে ঝরে পড়ার হিসাব- এটা অনেকাংশে তার অতিরিক্ত। সে আশঙ্কার কারণ দ্বিতীয় শ্রেণিতে এত বেশি ঝরে পড়ার কথা না। 

খরচের বিষয়ে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে খরচ বেড়েছে। প্রাথমিকে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক ৫১ শতাংশ খরচ বেড়েছে। খরচ বেশি হচ্ছে কোচিং, টিউশনি ও গাইড বইয়ে। নতুন শিক্ষাক্রমের হিসাব এখনও আসেনি। এর প্রভাব ব্যয়ের ওপর কিছুটা পড়লেও দেখানোর মতো অবস্থা এখনও হয়নি বলে তিনি জানান।

এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘প্রযুক্তি ভালো। কিন্তু এর ব্যবহার ভালোভাবে করতে হবে। প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার না হওয়ায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা শিখন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা