× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

যে হোটেলে মেলে বিনা পয়সায় সেহরি-ইফতারি

চম্পক কুমার, জয়পুরহাট

প্রকাশ : ৩০ মার্চ ২০২৪ ১২:৩৬ পিএম

আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪ ১২:৪৮ পিএম

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কলেজবাজারের ‘রফিক হোটেল’-এ প্রতিদিন রোজাদারদের বিনা পয়সায় সেহরি ও ইফতারি খাওয়ান রফিকুল ইসলাম। প্রবা ফটো

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কলেজবাজারের ‘রফিক হোটেল’-এ প্রতিদিন রোজাদারদের বিনা পয়সায় সেহরি ও ইফতারি খাওয়ান রফিকুল ইসলাম। প্রবা ফটো

‘আমি একজন ছোট্ট ব্যবসায়ী। প্রতিবছর ইফতার ও সেহরির আয়োজন করে থাকি। আমার এই আয়োজনের মধ্যে যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে, তাহলে ক্ষমা করবেন। সেহরির মতো ইফতারেরও ব্যবস্থা থাকে মাসব্যাপী। আমার এই ছোট্ট হোটেলে সকলের দাওয়াত, সকলেই আসবেন। আপনারা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সকলকে ধন্যবাদ।’

এভাবেই সেহরি-ইফতারি খাওয়ানোর সময় কথা বলেন রফিকুল ইসলাম। তিনি প্রতিদিন রোজাদারদের বিনা পয়সায় সেহরি ও ইফতারি খাওয়ান। ৯ বছর ধরে রমজান মাসে এ সেবা দিয়ে আসছেন রফিকুল। এবারের রমজানেও তিনি প্রতিদিন শতাধিক ব্যক্তিকে সেহরি ও ইফতারি খাওয়াচ্ছেন।

এমন আয়োজন করা হয় জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কলেজবাজারের কাঁচা মালামাল পাইকারিপট্টির ‘রফিক হোটেল’-এ। মালিক রফিকুল ইসলাম বছরের ১১ মাস হোটেলে খাবার বিক্রি করেন। এই আয় দিয়ে পুরো বছর সংসার চালান। পাশাপাশি রমজান মাসের জন্য লাভের কিছু টাকা জমা রাখেন। ওই টাকা দিয়ে হোটেলে রোজাদারদের বিনা পয়সায় সেহরি ও ইফতারি খাওয়ান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও কলেজবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ১৭ বছর আগে রফিকুল ইসলাম কলেজবাজারের কাঁচা মালামাল পাইকারিপট্টিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ছোট্ট পরিসরে খাবার হোটেলের ব্যবসা শুরু করেন। তখন হোটেলে গরুর মাংস ও আটার রুটি বেশি চলত। মাংসের স্বাদের কারণে রফিক হোটেলের সুনাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সেই সুমানের কারণে অনেকে সেখানে এসব খাওয়ার জন্য আসতেন। এভাবে ধীরে ধীরে রফিকের ব্যবসা বড় হয়। হোটেলের জায়গাও বড় করেন। এখন তার হোটেলে প্রতিদিন প্রায় এক মণ গরুর মাংসের ভুনা, আধা মণ আটার রুটি ও দুই মণ চালের ভাত বিক্রি হয়। এছাড়া তার এই হোটেলে দেশি মুরগির মাংসও পাওয়া যায়। শনি ও বুধবার হাটবারের দিন। এই দুদিন অন্যদিনের চেয়ে বিক্রি দ্বিগুণ হয়। আর ২০১৬ সাল থেকে রফিক রমজান মাসে বিনা পয়সায় ইফতারি ও সেহরি খাওয়ানো শুরু করেন।

রফিকের হোটেলে সেহরির সময় গিয়ে দেখা যায়, হোটেলের ভেতরের চেয়ারে লোকজন বসতে শুরু করেন। কিছু সময়ের মধ্যে হোটেলের সব চেয়ার ভরে যায়। এরপর টেবিলে-টেবিলে সাজানো প্লেট দেওয়া হচ্ছে। তাকে আরও তিনজন সহযোগিতা করছিলেন। হোটেলের মালিক রফিকুল নিজেই খাবার পরিবেশন করছিলেন। এ সময় খাবার ছিল বেগুন ভর্তা, বেগুন ভাজা, ডিমের তরকারি, ডিম ভর্তা, শাক ও ভাত। খাবার শেষে সকলেই এক গ্লাস করে দুধ পান করেন।

যশোর থেকে এসে আক্কেলপুরের ডাক বাংলোতে ছিলেন মিনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি রাতে এই হোটেলে সেহরির খাবার কিনতে এসেছিলাম। তখন রফিকুল ভাই বলেছিলেন, এখন খাবার নিয়ে গিয়ে রাখলে সেহরির সময় খেতে পারবেন না। নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আপনি বাংলোতে চলে যান, আমি সেহরির সময় আপনাকে নিয়ে আসব। এরপর তিনি সেহরির সময় গিয়ে আমাকে নিয়ে আসেন। এসে দেখি তার হোটেলে অনেক লোক। সবাই সেহরি করতে এসেছে। কিন্তু খাবারের কোনো টাকা রফিকুল ভাই নেবেন না। সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় সকলকে সেহরি করান। শুনেছি এমনভাবে তিনি ইফতারও করান। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ।

আইএফআইসি ব্যাংক আক্কেলপুর শাখার ব্যবস্থাপক মশিয়ার রহমান বলেন, আমার বাসা রংপুরে। এখানে চাকরির সুবাধে থাকি। ব্যাচেলর বাসায় ভাড়া থাকি। সেহরির সময় গরম খাবার খাওয়া হয় না। কয়েকদিন আসার পর আসিনি। তখন রফিকুল ভাই বলেন, আপনি কেন আসেন না? আমি তাকে বলেছিলাম এভাবে প্রতিদিন বিনা টাকায় কেমন করে খাবার খাই। তিনি বলেন, এমন সেবা দিয়ে আমার খুবই ভালো লাগে। আর আপনারা না এলে খারাপ লাগে। এরপর থেকে প্রতিদিনই আসি। 

রফিকের হোটেলে ইফতারের সময়ও অনেক লোক আসে। হোটেলের ভেতর ও বাইরে কাপড় বিছানো জায়গায় অনেকেই বসে পড়ে। আবার অনেকে জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে ইফতার করে।

ইফতার করতে আসা আক্কেলপুরের রেলগেট এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, বিকালে বাজার করতে এখানে এসেছিলাম। সময় হওয়ায় রফিকের হোটেলে ইফতার করেছি। একসঙ্গে অনেক লোক বিরিয়ানি দিয়ে ইফতার করেছি।

রফিকুল ইসলাম বলেন, একজন মানুষ সারা দিন রোজা রেখে ভ্রাম্যমাণ দোকানের সামনে ইফতার করে, এটা দেখে আমার খুব খারাপ লাগে। এছাড়া সেহরির সময় আগে যখন খাবারের টাকা নিতাম তখন অনেকের কষ্ট মনে হতো। যা টাকা থাকত সেই অনুযায়ী খাবার খেত। এসব দেখে আমারও কষ্ট হতো। এই চিন্তা করে সকলকে জানিয়ে দিলাম মাসব্যাপী ইফতার ও সেহরির আয়োজন করব এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করার চিন্তা করি। এখানে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আসে। প্রতিদিন শতাধিক রোজাদার ইফতার ও সেহরি খান। প্রতিদিন ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। অনেকেই টাকা দিতে চান কিন্তু নিই না। যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন এই কাজ করে যাব।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা