প্রবা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২২ ১৬:২৫ পিএম
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২২ ১৭:০২ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
আকাশচুম্বী মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদের হার, লাগামহীন জ্বালানির দাম ও ব্যাপক হারে জীবনধারণ ব্যয় বাড়ায় কুপোকাত যুক্তরাজ্য। মিনি বাজেটে বিশাল অঙ্কের কর কমিয়ে জনগণের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ফেরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস। পরিস্থিতি বিবেচনাও ফের বড় করের দিকে ঝুঁকছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তবে একসঙ্গে সুদের হার ও কর বাড়ানোর পক্ষে নন ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের প্রধান অর্থনীতিবিদ হু পিল। তিনি বলেন, চ্যাঞ্চেলর জেরেমি হান্টের সুদের হার ও কর বাড়িয়ে ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত আরও বেশি অর্থনৈতিক মন্দার কারণ হতে পারে।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে কর বাড়িয়ে এবং জীবনধারণ ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছে ব্রিটেন। এরই ধারাবাহিকটায় ৬ হাজার কোটি ইউরো সঞ্চয়ের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জেরেমি হান্ট। তবে সুদের হার বাড়ানোর আগে আবারও ভাবা উচিত বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ হু পিল। তিনি বলেন, চ্যান্সেলরের নেওয়া সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ অর্থনীতিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শঙ্কার চেয়েও বেশি খারাপ পরিস্থিতির সম্মুখীন করতে পারে। এটি এমন একটি পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে যা আবারও সুদের হার নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে।
পিল আরও বলেন, চ্যাঞ্চেলরকে একটি অনলাইন ইভেন্টে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ব্যাংকঋণে উচ্চ সুদের হারের পাশাপাশি বড় কর বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি মোকাবিলার পরিবর্তে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও নিম্নমুখী করে দেবে কি না? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘এই সিদ্ধান্তের একটি ঝুঁকি আছে। তবে এই সিদ্ধান্তের জন্যই আমরা এখনও টিকে আছি।’
আগামী ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন ব্যাংকঋণে সুদের হার নির্ধারণ করবে তখন খেলাপি ঋণেরও হিসাব নেবে। হান্টের সিদ্ধান্ত যদি পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি সুদারোপ করে তাহলে ব্যাংকগুলোর জংশন হিসেবে খ্যাত থ্রেডনিডল স্ট্রিট সম্ভবত অন্যদের তুলনায় কম সুদের হার নির্ধারণ করবে। ব্যাংকের একটি আয়োজনে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের প্রধান এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘বিশালর অঙ্কের কর বৃদ্ধির ফলে জনগণের ব্যয় প্রত্যাশার চেয়েও কমে যেতে পারে। ফলে অর্থনীতির গতি আরও মন্থর হতে পারে।’ এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কর কিছুটা কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে হবে। লেনদেন বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতিকে সচল করতে হবে।
এদিকে দ্য গার্ডিয়ান তাদের প্রতিবেদনে বলছে, কর বাড়িয়ে এবং ব্যয় কমানোর মাধ্যমে চ্যাঞ্চেলর অন্তত ৩ হাজার ৫০০ কোটি ইউরো ব্যয় কমানোর কথা ভাবছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জনগণের আর্থিক ঘাটতি পূরণের জন্য হান্ট পূর্বের জমাকৃত করের গোপন ব্যবহার করতে পারে।
রাজস্ব নীতি-কর এবং ব্যয় সংক্রান্ত বিষয়গুলো শুধু ব্রিটিশ সরকারের হাতে থাকে। ফলে সঠিক বা ভুল কোনোটি নিয়েই মন্তব্য করার সুযোগ থাকে না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তবে সুদের হার নির্ধারণে যেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা রয়েছে তাই নিজেদের যুক্তির পক্ষে মতামত তুলে ধরবেন হু পিল। তিনি বলেন, ‘প্রতি ছয় সপ্তাহে আমরা একবার দেখা করি। ডিসেম্বরে আমাদের আরেকটি বৈঠক হবে। সে বৈঠকে আমরা সরকার কী করেছে তা বিবেচনায় নিতে সক্ষম হব।’
যুক্তরাজ্যের পরিসংখ্যান কার্যালয় জানিয়েছে, গত সেপ্টেম্বরে দেশটির ঋণের পরিমাণ ২ হাজার কোটি (১ বিলিয়নে ১০০ কোটি) পাউন্ড ছাড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদদের ধারণার চেয়ে এ ঋণের পরিমাণ তিন বিলিয়ন বেশি। বেশি ঋণ নেওয়ার কারণে গত সেপ্টেম্বর মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আড়াই বিলিয়ন পাউন্ড বেশি সুদ দিতে হয়েছে দেশটিকে। ১৯৯৭ সালের পর এবারই সর্বোচ্চ সুদ পরিশোধ করেছে দেশটি।
এদিকে গত সপ্তাহে ব্যাংকঋণে সুদের হার আরও শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৩ শতাংশে দাঁড়াল। বিশ্লেষকরা বলছেন, সতর্ক করা সত্ত্বেও ব্রিটেন ১০০ বছরের মধ্যে দীর্ঘতম মন্দায় নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েছে।