× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিগগিরই চালু হচ্ছে ‘অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর’ সুবিধা

এস এম রানা, চট্টগ্রাম

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২২ ২১:৩২ পিএম

আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২২ ২১:৪০ পিএম

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে প্রচলিত বাণিজ্য সুবিধা ‘অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) চালু করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এইও সুবিধা পেতে ইতোমধ্যে দেশের নামকরা ৬৩টি প্রতিষ্ঠান এনবিআরের কাছে আবেদন করেছে। এ সুবিধা পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের পর কোনো ধরনের যাচাই ও শুল্কায়ন ছাড়াই সরাসরি কারখানা প্রাঙ্গণে নেওয়ার সুবিধা পাবে। এতে আমদানি-রপ্তানির পণ্য ডেলিভারিতে খরচ ও সময় সাশ্রয় হবে। 

বর্তমানে পণ্য খালাস করতে ব্যবসায়ীদের দিতে কাস্টমসে দাখিল করতে হয় অন্তত ২০ ধরনের নথি। এইও সিস্টেমে মাত্র পাঁচ ধরনের নথি দাখিল করে খালাস হবে পণ্য। এর ফলে পণ্য খালাস করতে ব্যবসায়ীদের শুল্ক কর্মকর্তার কাছে যেতে হবে না। দুই পক্ষের সব যোগাযোগ হবে ই-মেইলে। ২০১২ সালে ভারত এই ব্যবস্থা চালু করেছে। বাংলাদেশেও ২০১২ সালে এনবিআর প্রথম এইও ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেয়। এর ছয় বছর পর গত ২০১৮ সালের জুনে এর বিধিমালা জারি হয়।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) তিনটি ওষুধ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষামূলক এই সুবিধা দিয়েছিল। ওই বছরের জুলাই থেকে দেশের আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এই সুবিধা উম্মুক্ত করে দেওয়ার ছিল। তবে প্রায় চার বছর পর এটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এইও ব্যবস্থা চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হবে। বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত হবে। এ ছাড়া ডুয়িং বিজনেস প্রতিবেদনেও বাংলাদেশের র‌্যাংকিংয়ের উন্নতি হবে। 

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, ‘এই সিস্টেমটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে এখনও পুরোপুরি চালু হয়নি। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ব্যবসার সময় এবং খরচ বাঁচাতে এইও সুবিধা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’

অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর সুবিধা পেতে আবেদনকারী ৬৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কমপক্ষে ১২টি টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক আমদানি-রপ্তানির খাতের সঙ্গে যুক্ত। এর বাইরে আবুল খায়ের গ্রুপের ১০টি, বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (বিএসআরএম) তিনটি, বেক্সিমকো, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, শাহ সিমেন্ট লিমিটেড, এসকায়েফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেড, সিনজেন্টা বাংলাদেশ লিমিটেড ও ফেয়ার ইলেকট্রনিকসের দুটি করে কোম্পানি এইও সুবিধার জন্য আবেদন করেছে। 

২০১৯ সাল থেকে এনবিআরের অনুমোদন নিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর সুবিধা নিয়ে আসছে স্কয়ার, ইনসেপ্টা ও বেক্সিমকো ফার্মা। এতে এই সময়ে প্রতিষ্ঠান তিনটির ওষুধ গোডাউন থেকে সরাসরি বিদেশে চলে যাচ্ছে। আবার বিদেশ থেকে আসা কাঁচামাল সরাসরি প্রতিষ্ঠানগুলোর গুদামে প্রবেশ করছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গুদামেই এসব আমদানি-রপ্তানি পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। 

২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে এই অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর এইও সুবিধা পেয়ে আসছে তিনটি কোম্পানি। 

বিএসআরএমের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর তপন সেন গুপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের শতভাগ আমরা নিজেরাই আমদানি করি। নিজস্ব ওয়্যার হাউসে আমদানি পণ্য সংরক্ষণ এবং শুল্কায়নে শতভাগ সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। তাই এইও সুবিধা পেতে আমরা আবেদন করেছি। এই সুবিধা পেলে আমদানি পণ্য খালাসে জটিলতা কমে আসবে। কমে আসবে উৎপাদন ব্যয়, যার সুফল পাবে ভোক্তারা।’ 

যেভাবে বাঁচবে সময় ও খরচ

এনবিআরের প্রকাশিত টাইম রিলিজ স্টাডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টমস থেকে একটি আমদানি পণ্য খালাসে গড়ে প্রায় ১১ দিন ৬ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর (এইও) চালু হলে আমদানিকারদের পণ্য খালাসে সময় লাগবে মাত্র একদিন। ফলে শুধুমাত্র পণ্য খালাসে সময় বাঁচবে ১০ দিন। এতে চট্টগ্রাম বন্দরে স্টোররেন্ট বাবদ ২০ ফুট সাইজের কন্টেইনারে খরচ বাঁচবে ৩৬ ডলার। 

জাহাজ থেকে কন্টেইনার বন্দরের ইয়ার্ডে আনার পর চারদিন পর্যন্ত ফ্রি রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকেরা। এরপর পরবর্তী সাত দিন পর্যন্ত প্রতিদিন ছয় ডলার করে স্টোররেন্ট পরিশোধ করতে হয়। ফ্রি টাইম চার দিন বাদ দিলে পরবর্তী ছয় দিনের জন্য ৩৬ ডলার স্টোর রেন্ট বাঁচবে আমদানিকারকদের। 

শুল্কায়ন প্রক্রিয়া যেভাবে হবে

এইও সুবিধা হলো, যে কোনো বন্দরে পণ্য খালাসে অনেকটা গ্রিন চ্যানেল সুবিধার মতো। অর্থাৎ আমদানি করা পণ্য বন্দরে পড়ে থাকবে না। সঙ্গে সঙ্গে খালাস হয়ে যাবে। আমদানিকারকের নিজস্ব গুদামেই পণ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। জাহাজ থেকে পণ্যের চালান ট্রাকে করে সরাসরি আমদানিকারকের গুদামে যাবে। পণ্য খালাস করতে কাগজপত্র নিয়ে শুল্ক কর্তৃপক্ষের দপ্তরে যেতে হবে না আমদানিকারককে। বর্তমানে যেখানে ২০ ধরনের কাগজপত্র দিতে হয়, তখন পাঁচ ধরনের কাগজপত্র দিলেই চলবে। দুই পক্ষের সব যোগাযোগ হবে ই-মেইলে। তাতে স্বল্পতম সময়ে পণ্য খালাস হবে।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানিমুখী ওষুধ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাধারণত নানা ধরনের নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হয়। তাই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় রাজস্ব খাতের নিয়মনীতি প্রতিপালনে এ খাতের কোম্পানিগুলো এগিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের দলিলপত্র অটোমেশন ব্যবস্থায় থাকে। তাই পরীক্ষামূলকভাবে ওষুধ শিল্পের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠান তিনটি যথাযথভাবে শর্ত পালন করে আমদানি-রপ্তানি কার্য়ক্রম সম্পাদন করায় এখন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে এই সুবিধা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

 ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউসিও) শর্ত হিসেবে এই ব্যবস্থা চালু করে এনবিআর।

প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের শুল্ক মূল্যায়ণ ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিশনারেট এইও সনদ প্রদান করবে। এইও সনদ থাকলে শুধু চট্টগ্রাম বা মোংলা বন্দর নয়, দেশের সব সমুদ্র, বিমান ও স্থলবন্দরে এই সুবিধা মিলবে।

শুধু নিজ দেশেই নয়, যে দেশে রপ্তানি পণ্য যাবে, সে দেশেও একই ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। অবশ্য এজন্য ওই সব দেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি থাকতে হবে। এইও নিয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বে ১০০টির বেশি মিউচুয়াল রিকগনিশন অ্যাগ্রিমেন্ট (এমআরএ) আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ, জাপান, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশের মধ্যে এসব সমঝোতা চুক্তি হয়েছে। 

যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে

এনবিআরের বিধিমালা অনুযায়ী, এইও সনদধারীরা দশ ধরনের সুবিধা পাবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, কাস্টমস হাউস বা শুল্ক স্টেশনের পরিবর্তে এইও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব আঙিনায় পণ্যের চালানের কায়িক পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ পাবে। জাহাজ থেকে বা উড়োজাহাজ থেকে কিংবা সীমান্তের অন্য প্রান্ত থেকে পণ্য খালাস হয়ে সরাসরি চলে যাবে আমদানিকারকের গুদামে। এই প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত শেষ হয়, সে জন্য শুল্ক বিভাগের বিশেষ দল কাজ করবে। বন্দরে পণ্য আসার আগেই বিল অব এন্ট্রি দাখিলসহ শুল্কায়নের কাজ শেষ হবে।

সনদ পেতে যোগ্যতা

এইও সনদ পেতে হলে সাত ধরনের শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হল, কমপক্ষে পাঁচ বছর ব্যবসা পরিচালনা; নিয়মিত শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও আয়কর প্রদান; রাজস্ব সংক্রান্ত মামলায় জরিমানার পরিমাণ মোট পণ্য বা সেবা মূল্যের এক শতাংশের বেশি হতে পারবে না; প্রতিষ্ঠানের মালিককে তিন বছর রাজস্ব সংক্রান্ত অপরাধমুক্ত থাকতে হবে; সব বকেয়া রাজস্ব হালনাগাদ থাকতে হবে; প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত মূলধন হতে হবে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন পাঁচ কোটি টাকা, বার্ষিক টার্নওভার আগের তিন বছরে কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা হতে হবে এবং আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের বার্ষিক আমদানি ও রপ্তানির পরিমাণ কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা হতে হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা