প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০২৪ ২৩:৪৮ পিএম
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৪ ০০:০১ এএম
চার দফা সময় বাড়িয়ে নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে বেশি দরে টেন্ডারের কার্যাদেশ দেয়ার প্রক্রিয়ায় হাটছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড ডেসকো)। ডেসকোর এমডি বরাবর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ ও সংশ্লিষ্ট সুত্রে এ তথ্য জানাগেছে। এই প্রক্রিয়ায় কাজ বাস্তবায়ন হলে সরকারের গচ্চা যাবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। জানা যায় পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে গিয়ে টেন্ডারে (৩৯/২০২৩) অংশগ্রহণের সময়সীমা বাড়ানো হয় চার বার। বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আর্থিক সুবিধা নিতেই এমন উদ্যোগ বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, রাজধানীর মিরপুর,আগারগাঁও, পল্লবী, শাহ আলী, টুঙ্গী, উত্তর খান, দক্ষিণ খানস সহ বিভিন্ন এলাকায় আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুতের লাইন মেইনটেনেন্স (লাইন এন্ড ইক্যুপমেন্ট মেইনটেনেন্স-এলইএম)-এর জন্য গত অক্টোবরে টেন্ডার আহ্বান করে। ক্লোজিং ও ওপেনিং তারিখ চার বার সময়সীমা বাড়ানো হয়। গত ৪ মার্চ এই টেন্ডারের ওপেনিং ডে। এই টেন্ডারের আওতায় মোট ২৪টি লটে ২৪টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হবে। চুক্তি অনুযায়ী তারা ৩ বছর নির্দিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সেবা প্রদান করবে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করে। সেখান থেকে টেকনিক্যাল কমিটি বাছাই করে একটি তালিকা তৈরি করে।
অভিযোগ রয়েছে, বার বার টেন্ডার সময় বাড়ানোর কারণে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়ে। ডেসকো থেকে লাইসেন্সের আপডেট তথ্য চাওয়া হয়। তার প্রেক্ষিতে তাদের অনেকেই কাগজপত্র সাবমিট করে। তবে, এদের মধ্যে কারো কারোটা গ্রহণ করে, কোনোটা আবার সুকৌশলে বাদ দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে কেউ কেউ প্রতিকার চেয়ে ডেসকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ বিভিন্ন কর্তা ব্যক্তি বরাবর চিঠিও দিয়েছেন।
দরপত্র সূত্রে জানা যায়, ২৪টি আলাদা লটে মোট ১১৬ কোটি টাকা (এস্টিমেট এমাউন্ট) বরাদ্দ রয়েছে। সে জায়গায় মোট ১২৩ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকা সাবমিট করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। যেসব প্রতিষ্ঠান এস্টিমেট এমাউন্টের (বরাদ্দ) চেয়ে বেশি দরে দরপত্র সাবমিট করেছে তাদেরকেই নির্বাচিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ৪ মার্চ এলইএম ফিন্যান্সিয়াল প্রোপোজাল সীটেও এ তথ্য রয়েছে। যে ২৪টি প্রতিষ্ঠানকে চুড়ান্ত করা হচ্ছে তারা প্রত্যেকেই প্রতিটি লটে বরাদ্দের চেয়ে প্রায় ৪ লাখ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত বেশি দরে সাবমিট করেছে। এই তালিকা চূড়ান্ত করলে সরকারের প্রায় ১০ কোটি টাকা গচ্চা যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
একাধিক সূত্র জানায়, যে ২৪টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করার প্রক্রিয়া চলছে তাদের অধিকাংশই দুই তিন জন ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। নামে বেনামে তারা এই প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে বিট করে আসছেন। এদের মধ্যে এমনও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়ারই সুযোগ নেই।
জানা যায়, ইতিমধ্যে টেকনিক্যাল কমিটি প্রতিষ্ঠান যাচাই বাছাই সম্পন্ন করে একটি শর্টলিস্ট তৈরি করেছে। এটি আবার যাচাই বাছাই করেছে ইভ্যুলেশন কমিটি। এই কমিটির পাঠানো তালিকা বোর্ড কর্তৃক অনুমতি পেতে পারে । ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজেটের চেয়ে বেশি দরে কাজ দিয়ে একটি চক্র আর্থিক সুবিধা নেয়ার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে সাবমিটেড এমাউন্ট এভাব বা বেশি ধর হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডেসকো’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পি.আই এন্ড টি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, আমিই এ বিষয়ে জানি না। আপনি জানলেন কীভাবে। তিনি বলেন, টেন্ডারে যিনি পার্টিসিপেন্ট করবেন, রেট তো তার মতো করে দিবেন। আমরা গ্রহণ করবো কী করবো না, এটা তো আমাদের ইস্যু।
মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, এটা (প্রতিষ্ঠানের তালিকা) আমাদের কাছে এখনো আসেনি। এটা ইভ্যুরলেশন কমিটি বা ম্যানেজমেন্টের কাছে থাকতে পারে। ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ্রুভাল দিলে আমার কাছে আসবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে টেকনিক্যাল ও ইভ্যুলেশন কমিটির প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হককে একাধিকার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এস্টিমেট এমাউন্টের চেয়ে সাবমিটেড এমাউন্ট বেশি প্রসঙ্গে ডেসকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) খন্দকার জহিরুল ইসলাম বলেন, সুনির্দিষ্ট করে না বললে বলতে পারবো না। তবে, বেশি যে কারণে সাধারণত হয় সেটা হলো- আমাদের অনেক টেন্ডার অনুমোদন হয়েছে ২০২২-২৩ সালে। আমাদের তো ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডারই বেশি হয়। তখন ডলারের রেট ছিল ৮৫ টাকা। এখন সেই ডলারের রেট কত হয়েছে তাতো জানেন। এটা হলো এভাবের কারণ। তিনি বলেন, এভাবের আরো কারণ থাকতে পারে। প্রকিউরমেন্ট বিভাগের ইডি’র সাথে কথা বলতে পারেন। এ বিষয়ে প্রকিউরমেন্ট (সংগ্রহ) বিভাগের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) প্রকৌশলী এ.কে.এম মহিউদ্দিনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।