প্রতিবেদন চূড়ান্ত নয়, বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪ ২১:১০ পিএম
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪ ২১:৩২ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। প্রবা ফটো
নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বহীনতায় দেশের ব্যাংকগুলোর স্বাস্থ্য দিন দিন অবনতি হচ্ছে। সম্প্রতি দেশে কার্যরত ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে ৫৪টি ব্যাংক নিয়ে এক সমীক্ষা চালিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গোপন এ সমীক্ষায় ৯টি ব্যাংককে লাল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসব ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ। আর ২৯টিকে হলুদ তালিকাভুক্ত করে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধবার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ।
তবে অভ্যন্তরীণ এই স্বাস্থ্য সূচক গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।
দুর্বল ও সবল ব্যাংকের গোপন এ প্রতিবেদন অভ্যন্তরীণ গবেষণার জন্য করা হয়েছে—দাবি করে মুখপাত্র বলেন, ‘কয়েকটি গণমাধ্যমে দুর্বল ও সবল ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ হয়েছে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদন নয়। একটি বিভাগ তাদের নিজস্ব কিছু তথ্য গবেষণা বা বিশ্লেষণের জন্য এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্ন কম্পোনেন্ট নিয়ে এসেসমেন্ট করে। রেগুলার ফাইন্যান্সিয়াল রিস্ক ম্যানেজমেন্টের জন্য করা হয়, এটা প্রকৃত হেলথ ইনডিকেটর নয়। তাই এটি দিয়ে কোনো ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক অবস্থা নির্ণয় বা তুলনা করা ঠিক হবে না।’
তবে প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নেই কোন কারণে তা স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি মুখপাত্র। ব্যাংকের ক্যামেলস রের্টিং, বার্ষিক প্রতিবেদনসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্যের সংযোজনে এই রেটিং হওয়া সত্ত্বেও কেন এটি অগ্রহণযোগ্য, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন মুখপাত্র মেজবাউল হক।
ওই গোপন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১২টি ব্যাংকের অবস্থা খুবই খারাপ; এ ছাড়া ৯টি ব্যাংক ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। আর ইয়েলো বা হলুদ জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক। সব মিলিয়ে ৩৮টি ব্যাংককে দুর্বল ব্যাংক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর স্বাস্থ্য ভালো আছে মাত্র ১৬টি ব্যাংকের। এর মধ্যে দেশি ব্যাংক মাত্র আটটি।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংক একীভূতকরণ (মার্জার) সংক্রান্ত পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে শ্রেণিকরণ করতে একটা পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। এখানে চারটি ক্যাটাগরিতে ব্যাংকগুলোকে মূল্যায়ন করা হবে। চলতি বছরের ব্যালেন্স শিটের ওপর ভিত্তি করে এটা করা হবে। যেটা কার্যকর হবে ২০২৫-এর মে মাস থেকে। পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী যদি কোনো দুর্বল ব্যাংক ইচ্ছাকৃতভাবে মার্জার না হয়, তাহলে আগামী ডিসেম্বরের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে মার্জার করে দেবে।’
এর আগে ২০২২ সালের ১২ জুলাই আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন। ওই বছরের ৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দেন তিনি। কিন্তু গত দেড় বছরে এ ১০টি ব্যাংকের অবস্থারও উন্নতি হয়নি। এসব ব্যাংকের অধিকাংশের অবস্থানই রেড জোনে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভালো অবস্থায় রয়েছে প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক আলফালাহ, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি ব্যাংক এনএ, হাবিব ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।