× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে অব্যাহত ধস

রেদওয়ানুল হক

প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৪ ১১:১২ এএম

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪ ১১:২৫ এএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

নানমুখী বাধার মুখে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ পাঁচ মাসে এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। ফলে অর্থবছরের সাত মাসে এই স্কিমের আয়-ব্যয়ে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে সরকারের অন্য উৎস থেকে ধার করে বিনিয়োগকারীদের পাওনা মেটানো হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ করায় মানুষের আগ্রহ কমছে। তাই সরকারকে অন্য উৎস থেকে ঋণ নিয়ে এই খাতের ঘাটতি মেটাতে হচ্ছে। অর্থাৎ সরকার ঋণ নেওয়ার জন্য খোলা স্কিমটি তার কার্যকারিতা হারাচ্ছে।

তথ্য বলছে, সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ইতিবাচক থাকলেও পরের পাঁচ মাস ঋণাত্মক হয়েছে। অর্থাৎ শেষ পাঁচ মাসে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বেড়েছে। ফলে গত পাঁচ মাসে নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) ঋণাত্মক ধারায় রয়েছে। সর্বশেষ জানুয়ারিতে নিট বিনিয়োগ (বিক্রি) ঋণাত্মক হয়েছে ১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। আগের মাসেও নিট বিক্রি ২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি ঋণাত্মক ছিল। অক্টোবরে ঋণাত্মক ছিল ১ হাজার ৪০ কোটি, সেপ্টেম্বরে ঋণাত্মক ছিল ১৪৭ কোটি টাকা।

যদিও অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ভাঙানোর প্রবণতা কম থাকায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ বেশ বেড়েছিল। ওই দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) নিট বিক্রি ৫ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা ইতিবাচক ছিল। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৪৯ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। একই সময়ে সরকার আসল বাবদ ৫৬ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

গত অর্থবছরের একই সময়েও নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় ছিল, তবে ওই সময় এর পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নিট বিক্রির ঋণাত্মক অঙ্ক বেড়েছে ৪ হাজার ২৮১ কোটি টাকা বা ১৩৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পণ্য ও সেবার দামে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে মানুষের; যার প্রভাব পড়ে সঞ্চয়ের ওপরও। বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ে যাদের সংসার চলে, তাদের অনেকে এখনও সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছেন। এ ছাড়া নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেকে। ফলে এ খাতে আশানুরূপ বিক্রি বাড়ছে না। এ ছাড়া ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ছে। কোনো কোনো ব্যাংকে ঋণের সুদের হার ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে মানুষ এখন উচ্চ সুদের আশায় ব্যাংকগুলোতে বিনিয়োগ করছে।

চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে বিক্রি কমতে থাকায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ধরা হয় ৩২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছর শেষে নিট বিক্রি দাঁড়ায় ঋণাত্মক প্রায় ৩ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিগত অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকার ঋণ পায়নি। উল্টো আগের ঋণ পরিশোধ করতে অন্য খাত থেকে ধার করতে হয়েছে।

গত অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্রের মোট বিক্রি হয় ৮০ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। একই সময়ে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৮৪ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। মূলত ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে বেশি ভাঙানোর প্রবণতা বাড়তে থাকে।

২০২১-২২ অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পেয়েছিল সরকার। পুরো অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অথচ করোনার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এটি তার আগের অর্থবছরে ছিল মাত্র ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হয় তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য। মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হলে মুনাফার হার সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ। মেয়াদ ও টাকার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে যাদের এ খাতে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে, তাদের মুনাফা কমে যায়। এখন ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ থাকলে রিটার্নের সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এ ছাড়া গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব রকম সঞ্চয়পত্রের সুদহার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তার আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। দুর্নীতি বা কালো টাকায় সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে ক্রেতার তথ্যের একটি ডেটাবেজ তৈরি হয়েছে।

বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৫২, পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ৭৬, পাঁচ বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮, তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। কয়েক দফায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর ফলে বর্তমানে ব্যাংকের তুলনায় কমে গেছে।

প্রসঙ্গত, আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্র থেকে ভাঙানো বাবদ (নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে বা মেয়াদান্তের আগে) আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে তাকে নিট বিক্রি বলা হয়। নিট বিক্রিকে সরকারের ধার বা ঋণ হিসেবে গণ্য করা হয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা