× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রমজান উপলক্ষ্যে ঝিনাইদহের পাইকারি বাজারে কলার দাম দ্বিগুণ

আব্দুর রহমান মিল্টন, ঝিনাইদহ

প্রকাশ : ১১ মার্চ ২০২৪ ০৯:৪৮ এএম

আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪ ১৬:৪২ পিএম

সারা বছর কলার তেমন দাম না পেলেও রমজান উপলক্ষ্যে ঝিনাইদহের পাইকারি বাজারে কলার দাম দ্বিগুণ। প্রবা ফটো

সারা বছর কলার তেমন দাম না পেলেও রমজান উপলক্ষ্যে ঝিনাইদহের পাইকারি বাজারে কলার দাম দ্বিগুণ। প্রবা ফটো

কলা চাষের জন্য বিখ্যাত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা ঝিনাইদহ। এটি জেলার ব্রান্ডিং পণ্য। মাঠের পর মাঠ জুড়ে এখানকার কৃষকেরা ফল ও সবজি হিসাবে কলার আবাদ করেন। গড়ে উঠেছে অর্ধ ডজনের বেশি পাইকার হাটবাজার। রমজান সামনে রেখে দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় এসব হাটবাজানে এখন দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের কলা। প্রতিদিন ট্রাকবোঝাই করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের ৪০টির বেশি জেলায় যাচ্ছে ঝিনাইদহের কলা। চলতি মৌসুমে জেলায় ১লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিকটন কলা উৎপাদন হবে, যার বাজারমূল্য ৫২১ কোটি টাকার বেশি, জানিয়েছে কৃষি দপ্তর।

কৃষিপণ্যের মধ্যে ঝিনাইদহের কৃষকদের কাছে ধান, পাট, পানের পাশাপাশি অন্যতম ফসল এই কলা। কম খরচ ও পরিশ্রমও কম হওয়ায় প্রান্তিক চাষিরা মাঠজুড়ে কলা চাষ করেন। জেলার মহেশপুর, শৈলকুপা, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলায় ব্যাপকভাবে কলার চাষ হয়। কলার মান ধরে রাখতে অনেক কৃষক এখন উন্নত পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। শৈলকুপার দুধসর এলাকার মাঠে কৃষকেরা কলার দাগ, মশাসহ পোকার আক্রমণ ঠেকাতে ব্যাগিং পদ্ধতিতে কলার কাঁধি পরিচর্যা করছেন।

ভোর হলেই হাজার হাজার কৃষক ভিড় জমান জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি কলার হাট সদর উপজেলার পবহাটিতে। সারা বছর কলার তেমন দাম না পেলেও রমজান ঘিরে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় কলা চাষিরা এখন দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে পারছেন।


চাঁপাকলা, ধুপছায়া, সবরি, সাগরসহ প্রচলিত বিভিন্ন জাতের কলা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কাঁদি দরে বিক্রি হচ্ছে। পবহাটিতে কলা বিক্রি করতে আসা লিমন হোসেন জানান, তার চার বিঘা জমিতে কলা রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে যে কলা ২০০ টাকা কাঁদি বিক্রি করেছেন, এখন তা ৪০০ আর ৩০০ টাকার কলা ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

কৃষক তুহিন হুসাইন ১৫ বিঘা জমিতে কলার আবাদ করেছেন। এমন দাম থাকলে ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকার কলা বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। কৃষকেরা আরও জানান, রমজানে যদি অন্যান্য ফলের সরবরাহ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে তবে দেশি ফল কলার চাহিদা আরো বেড়ে যাবে, দামও বাড়বে।

পবহাটি এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, এই হাট থেকে প্রতিদিন ৫০-৬০ ট্রাক কলা ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ সহ বিভিন্ন জেলায় যায়। আর রমজান মাস চলে আসায় প্রতিদিন প্রায় ১০০ ট্রাক কলা এই বাজার থেকে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। এখানকার কলার মান খুবই ভালো। ফলে সারাদেশ থেকে আসেন ব্যাপারিরা। কৃষকেরা বলেন, রমজান ঘিরে চাঁপাকলা ও ধুপছায়া কলার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কুমিল্লা অঞ্চলে ধুপছায়া কলা ব্যাপক বিক্রি হয়।

ঝিনাইদহ-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ৩০ বছরেরও বেশি পুরাতন এই পাইকার কলার হাট। সপ্তাহের পাঁচ দিন বসে হাট। তবে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় রমজান উপলক্ষে সপ্তাহের সাত দিনই বসছে এই হাট । সরকার এখান থেকে প্রতিবছর রাজস্ব পায় ৪৫ লাখ টাকার উপরে। দেশের বড় বড় সব মোকাম থেকে পাইকাররা এখানে আসেন কলা কিনতে।

ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন জানান, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, নরসিংদি, খুলনা, বরিশাল, নেয়াখালী, ফরিদপুর, কুমিল্লা সহ দেশের ৪০টি জেলার বেশি জায়গায় যায় ঝিনাইদহের কলা। ব্যবসায়ী দিদারুল ইসলাম নিয়মিত কলা কিনে সাতক্ষীরা জেলায় পাঠান। তিনি জানান, গড়ে প্রতিদিন এক লাখ টাকার কলা কিনে থাকেন তিনি।

কৃষক খুশি হলেও পাইকাররা দুশ্চিন্তায় আছেন বলে খবর মিলেছে। কলা ব্যবসায়ী আবু সাইদ বলছেন, যেভাবে কলার দাম বাড়ছে তাতে পাইকার ব্যবসায়ী হিসাবে আমরা চিন্তিত। কারণ এত টাকা দিয়ে কলা কিনে তা বিক্রি করব কিভাবে তা জানি না। তিনি জানান, কলা সাধারণত ১০০ কাঁদি হিসেবে আড়তে বিক্রি হয় । আগে ১০০ কাঁদি কলা তারা ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে কিনলেও এখন তা কিনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা দরে।

কৃষকেরা জানায়, দেশের অন্যান্য স্থানের মতো খুব বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়তে হয় না তাদের। শুধু কালবৈশাখী ঝড় ছাড়া ক্ষতি নেই কলার আবাদে। এক বিঘা জমিতে কলার আবাদে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ আর বিক্রি করা যায় লাখ টাকার ওপরে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, আগের প্রচলিত জাত ও পদ্ধতিতে এ অঞ্চলের কৃষকেরা কলার চাষ করেন। তবে নতুন নতুন জাত ও উন্নত মানের কলা চাষে জি-নাইন অর্থাৎ টিস্যু কালচারের মাধ্যেমে উৎপাদিত চারা নিয়ে কলার চাষ করলে কৃষক আরো লাভবান হবেন।

তিনি জানান, চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ থেকে কমপক্ষে ৫২১ কোটি টাকার কলা বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্চে। রমজানকে ঘিরে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে বাজার অস্থিতিশীল করতে না পারে তার জন্যে মার্কেটিং অফিসারদের সতর্ক করা হয়েছে। বাজার মনিটর করছেন। তিনি জানান, হেক্টর (সাড়ে সাত বিঘা) প্রতি কলার গড় উৎপাদন ৩১ মেট্রিকটন, যার দাম ১০ লক্ষ টাকা। এক হেক্টর জমিতে আড়াই থেকে তিন হাজার কলাগাছ রোপণ করা যায়। সেখান থেকে পরিপক্ব কলার কাঁদি পাওয়া যায় পড়ে প্রায় আড়াই হাজার।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা