প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪ ১৮:৩৯ পিএম
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রাক-বাজেট আলোচনা : বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা শীর্ষক মতবিনিময় সভা। প্রবা ফটো
আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রেও বেসরকারি খাতের মতামত ও প্রত্যাশাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। আগামী জাতীয় বাজেট বেসরকারি খাতের জন্য একটি উৎসাহব্যঞ্জক বাজেট হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, আমাদের সরকার বেসরকারি খাতকে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করে। বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য সরকার বরাবরই সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে।
রবিবার (১০ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রাক-বাজেট আলোচনা : বেসরকারি খাতের প্রত্যাশা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), দৈনিক সমকাল এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোর যৌথভাবে এ সভা আয়োজন করে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, প্রয়োজনীয় নীতি সংষ্কার, দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নির্ধারণ, মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, আমদানি বিকল্প শিল্পখাতের বিকাশ, পণ্যের বহুমুখীকরণ, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এবং আভ্যন্তরীণ সম্পদের সুষম ব্যবহার প্রভৃতি বিষয়গুলো আগামী বাজেটে প্রধান্য পাবে। আমাদের সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও টেকসই স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। এ লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের অংশীদারত্ব অপরিহার্য। আমরা বিশ্বাস করি বেসরকারি খাতের উন্নয়নের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব হবে।
ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এছাড়াও সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর ড. মো: হাবিবুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিধারা অব্যাহত রাখতে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিকল্পে করজাল সম্প্রসারণ এবং কর ব্যবস্থাপনার সহজীকরণ করা আবশ্যক। এছাড়াও আয়কর আইন-২০২৩ এর ধারা ১৬৩(২)(খ) হতে ধারা ৯০কে অব্যাহতি দেয়া এবং মূসক আইনের ধারা ৪৬(২)(ক) কে এ ধারা থেকে প্রত্যাহার করে সকল উপরকণ ব্যয়ের জন্য রেয়াত প্রদান করা প্রয়োজন। দেশের টেকসই আর্থিক খাতের জন্য বেশকিছু আইন ও নীতির সংস্কারের পাশাপাশি খেলাপী ঋণ কমানো, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, রিজার্ভের ঘাটতি কমানো, ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধি ও তারল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। শিল্পখাতে সাশ্রয়ী ও নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের এমডি এ কে আজাদ বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ২ কোটি শিক্ষিত তরুণ বেকার যুবক রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে যাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, সুদের হার ক্রমাগ্রত হারে বাড়তে থাকলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশি-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষনে দীর্ঘমেয়াদী নীতির ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, সরকারকে কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও করভার লাঘবের মধ্যে সমন্বয় করতে হয় এবং ইতোমধ্যে কর প্রদানের প্রক্রিয়া সহজীকরনের জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০২০ সালে ব্যক্তি শ্রেণির করদাতার সংখ্যা যেখানে ছিল ২১ লাখ, সেখানে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তা ৩৭ লাখে উন্নীত হয়েছে, পাশাপাশি ২০২০ সালে বিআইএন ধারী সংখ্যা ছিল ২ লাখ, চলতি বছরের মার্চের শেষ নাগাদ তা ৫ লাখের অধিকে যেতে পারেন। কর আহরণের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে সহযোগিতা প্রদানই এনবিআরের মূল লক্ষ্য।
সভায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ বলেন, প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে স্থানীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে বেসরকারিখাতের অবদান সবচেয়ে বেশি, তাই আমাদের উদ্যোক্তাদের বিকাশে সর্বাত্নক নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকবে। খেলাপী ঋণ কমাতে বেসরকারিখাতের আওতায় এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানী চালুকরণে আইনীকাঠামা প্রণয়নের কাজ করছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনায়ন এবং খেলাপী ঋণ হ্রাস প্রভৃতি বিষয়গুলোর উপর অধিক হারে জোর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিনি জানান, বর্তমানের উচ্চমূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনেকটা বাধ্য হয়েই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার কিছুটা বৃদ্ধি করেছে এবং আমাদের বেসরকারিখাত যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে লক্ষ্যে ‘এসএমএআরটি’ পদ্ধতিতে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ সময় ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মালিক তালহা ইসমাইল বারী, সহ-সভাপতি মো. জুনায়েদ ইবনে আলীসহ পরিচালনা পর্ষদের সদস এবং বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।