× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ

৩ বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি ১১ বছরেও

এম আর মাসফি

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২২ ১৯:৩১ পিএম

আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২২ ২১:৪৪ পিএম

গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ। ছবি : সংগৃহীত

গোপালগঞ্জে শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ। ছবি : সংগৃহীত

গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপনের প্রকল্পটি ৩ বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি ১১ বছরেও। কাজ শেষ করতে ফের এক বছর সময় চেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আর এ প্রস্তাবে ১০টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ-আইএমইডি।    

প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাব সূত্রে জানা যায়, সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ করায় ৬ বার মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি। ফের সপ্তম বারের মতো মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৪৬৩ কোটি ৬২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৫০৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এরপর ১৯৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৭০৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। মেয়াদ বাড়াতে বাড়াতে ৩ বছরের এ প্রকল্পে এখন সময় লাগবে ১২ বছর।

জানা গেছে, ইতোমধ্যেই চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটিতে খরচ হয়েছে ৬৩৩ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের ৮৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। প্রকল্পের কাজের বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৬ শতাংশ।

খরচ বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে আইএমইডি বলছে, প্রকল্পটি ২০১২ সালের মার্চ হতে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। প্রকল্পটির অসম্পন্ন কাজ সম্পন্ন করতে এবং দেশে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে গোপালগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে চিকিৎসা সেবা প্রদানে নিম্নোক্ত শর্তসাপেক্ষে প্রকল্পটির মেয়াদকাল এক বছর বৃদ্ধি করে ২০১২ সালের মার্চ হতে ২০২৩ সালের জুন নির্ধারণ করা যেতে পারে।

শর্তগুলো হলে, ক. নার্সিং ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম দাখিলকৃত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। অর্ধসম্পন্ন নার্সিং ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম পরবর্তী ঠিকাদার কর্তৃক সম্পন্নকরণের সময় যাতে পূর্ববর্তী কাজের সঙ্গে কোনোরূপ সমন্বয়ের ঘাটতি না থাকে সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। খ. হাসপাতাল ভবন এবং মেডিকেল কলেজে আগত সেবাগ্রহিতা এবং অন্যান্যদের জন্য পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে গাড়ি পার্কিংয়ের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে। প্রয়োজনে আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া যায় কি না সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। গ. হাসপাতালের পার্শবর্তী স্থানসমূহে রোগীদের সুবিধার্থে বৃক্ষরোপনের ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষের চারা রোপন করতে হবে। ঘ. দাখিলকৃত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ সম্পাদন করতে হবে। ঙ. নার্সিং ইনস্টিটিউটের পার্শ্ববর্তী রাস্তা এবং মূল গেটের দুপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চ. হাসপাতাল ও অন্যান্য ভবন দ্রুত প্রকল্প কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতে হবে। ছ. জরুরিভিত্তিতে প্রকল্পের অডিট কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ বিভাগকে অবহিত করতে হবে। জ. ডিপিপি সংস্থানের সাথে সঙ্গতি রেখে বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। ঝ. প্রকল্প সমাপ্তির তিন মাসের মধ্যে প্রকল্প সমাপ্তি মূল্যায়ন প্রতিবেদন এ বিভাগে দাখিল করতে হবে। এবং ঞ. উপরোক্ত সুপারিশের প্রেক্ষিতে গৃহীত ব্যবস্থা প্রতিবেদন প্রাপ্তির ২০ কর্মদিবসের মধ্যে বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ বিভাগকে জানাতে হবে।

প্রকল্পটির বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের (সদস্য) সচিব মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, ‘এ প্রকল্পে ১৯টি প্যাকেজের আওতায় যন্ত্রপাতি মালামাল সরবরাহ ও স্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণ কাজের ৩৮টি প্যাকেজের মধ্যে ৩৭টি প্যাকেজের কাজ ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে। ১টি প্যাকেজের (নার্সিং কলেজ নির্মাণ) কাজের কার্যাদেশ বাতিল ও নতুন কার্যাদেশ প্রদানের প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়। সার্বিক বিবেচনায় উক্ত অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের লক্ষে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে মেয়াদ এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তবে শর্ত হচ্ছে, বর্ধিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার জন্য সময়াবদ্ধ ও কার্যকরী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। প্রকল্প ব্যয় সর্বশেষ অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে সংশোধিত মেয়াদের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করতে হবে এবং এ বিষয়ে আইএমইডি কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় লোকবল এবং দক্ষতার অভাব এমডিজি ও অন্যান্য লক্ষ্যগুলো অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অন্তরায় হিসেবে চিহিৃত। দেশের চিকিৎসক-রোগী, চিকিৎসক-নার্স, নার্স-রোগী অনুপাতগুলো এবং সরকারি-বেসরকারী মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজ, চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। একইভাবে ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ জেলা মেডিকেল শিক্ষা, আধুনিক চিকিৎসা এবং কর্মসংস্থান সুযোগসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তুলনামূলক পিছিয়ে। এজন্য স্থানীয় জনসাধারনের প্রত্যাশা পূরণ করে প্রতিবছর ১০০ জন মেডিকেল শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগসহ গোপালগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিবছর ১২৫ জন নার্সিং শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগসহ একটি নার্সিং কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়, ২০১২ সালের মার্চ থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সেই সঙ্গে বাস্তবায়নে ব্যয় নির্ধারিত হয় ৪৬৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে পিডব্লিউডির রেট সিডিউল পরিবর্তনের কারণে রেট সিডিউল-২০১৪ অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ৫০৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১২ সালের মার্চ হতে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পের প্রথম সংশোধন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দেয়।

সংশোধিত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ মন্ত্রণালয় প্রথমবার এক বছর ৪ মাস বৃদ্ধি করে ২০১২ সালের মার্চ হতে ২০১৭ সালের জুনে নির্ধারণ করা হয়। এরপর সীমানা প্রাচীর নির্মাণে টেন্ডারগত জটিলতা ও ছাত্রী নিবাসের ফিনিশিং কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় অবশিষ্ট কাজ সম্পাদনের জন্য প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া বাস্তবায়ন মেয়াদ পরিকল্পনা কমিশন দ্বিতীয়বার ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ২ বছর বৃদ্ধি করা হয়।

প্রকল্পটির নির্মাণ খাতে ব্যয় হ্রাস এবং ভূমি অধিগ্রহণ খাতে ব্যয় বৃদ্ধির জন্য আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয় মন্ত্রণালয়ে ২০১৭ সালের ২ এপ্রিল অনুমোদিত হয়। পরবর্তীতে নির্মাণ কাজের রেট সিডিউল পরিবর্তন, পূর্ত কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্রের ব্যয় বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ভূমি উন্নয়ন এবং কিছু নতুন অঙ্গ সংযোজনের জন্য মোট ৭০৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১২ সালের হতে ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পটি দ্বিতীয় সংশোধন ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল একনেকে অনুমোদিত হয়। কার্যক্রম বিভাগ কোভিড-১৯ এর সময়ে গত বছরের ২২ জুন ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া তৃতীয় বার ২০১২ সালের মার্চ হতে গত বছরের জুন পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া চতুর্থবার এক বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০১২ সালের মার্চ হতে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এতেও শেষ হয়নি প্রকল্পটি এ প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করা হয়েছে।

মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে সরকার ঘোষিত লকডাউনের জন্য প্রায় তিন মাস কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। পরবর্তীতে লকডাউন শিথিল হলেও নির্মাণ সামগ্রীর উৎপাদন বন্ধ ও বৈদেশিক আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় পাথর আমদানি সম্ভব না হওয়ায় আরও কিছু সময় নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকে।

নার্সিং কলেজ নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ২০২০ সালের ১৩ জুন মারা যাওয়ায় ঠিকাদারের উত্তরাধিকারিদের দ্বন্দ্বের কারণে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করলে কাজের কার্যাদেশ গত বছরের ২২ ডিসেম্বর বাতিল করা হয়। পরে সম্পাদিত কাজের পরিমাপ গ্রহণ করে অবশিষ্ট কাজ বাস্তবায়নের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এ অবস্থায় প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মেয়াদ আরও এক বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা