প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৪ ২৩:০২ পিএম
হুন্ডিতে বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা পাচার হওয়ার পরও ফেব্রুয়ারিতে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। ফলে গত জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহে যে ইতিবাচক ধারা শুরু হয়েছে তা অব্যাহত আছে। সদ্য সমাপ্ত মাসটিতে বৈধ পথ ব্যবহার করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ১৭ বিলিয়ন বা ২১৭ কোটি ডলারে। একক মাস ফেব্রুয়ারি হিসেবে এটি নতুন রেকর্ড। এর আগে কখনও ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়নি। সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে কর্মদিবস কম থাকায় প্রবাসী আয় অন্য মাসের চেয়ে কম হয়। যদিও এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস ছিল ২৯ দিনের। তবু রেমিট্যান্স ৩১ দিনের জানুয়ারি মাসের চেয়ে বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ডলারের ভালো দর পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স বেড়েছে। হুন্ডি তৎপরতা কমলে কিংবা পাচার রোধ করতে পারলে মাসিক রেমিট্যান্সের অঙ্ক সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে আমদানি ও রপ্তানির আড়ালে বিপুল অর্থ দেশ থেকে পাচার হচ্ছে, যা মূলত রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় থেকে সমন্বয় হচ্ছে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়া বাণিজ্যের আড়ালে মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সংগঠন এবিবি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসে ২১০ কোটি ডলার। আর দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে আসে ২১৭ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসীরা এক হাজার ৫০৬ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন। গত অর্থবছরের একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৪০১ কোটি ডলার। এ হিসেবে প্রথম আট মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১০৫ কোটি ডলার বা ৭ দশমিক ৫১ শতাংশ।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা ১৫৬ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন। সে হিসেবে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। এর আগে একক কোনো ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২১ সালে, ১৭৮ কোটি ডলার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ১৪৯ কোটি ডলার।
দেশের ইতিহাসে ২০২০-২১ অর্থবছর সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। ওই অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠান। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার।
ব্যাংকাররা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হুন্ডি চাহিদা অনেক কমেছে। পাশাপাশি উচ্চ দরে রেমিট্যান্স কিনছে ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্ততায় দর নির্ধারিত রয়েছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। তবে ১২১ থেকে ১২২ টাকা দরে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজ থেকে রেমিট্যান্স কিনছে অনেক ব্যাংক। এদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে ডলার সোয়াপসহ বিভিন্ন উপায়ে রিজার্ভ বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে ২০ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে, কয়েক দিন আগে যা ১৯ বিলিয়নের ঘরে ছিল। এর আগে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে উঠেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিক্রিসহ বিভিন্ন কারণে রিজার্ভ কমতে থাকে।